Leadঅন্যান্যসব সংবাদ

রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইন অনুমোদন ইসির

রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইনের খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় প্রয়োজনীয় সংশোধনসহ এর অনুমোদন দেওয়া হয়। সংশোধনীগুলো সম্পন্ন হলে এটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
কমিশন সভা শেষে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর এ তথ্য জানান। এদিকে, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার এই আইনটির বিরোধিতা করে কমিশন সভায় নোট অফ ডিসেন্ট দিয়েছেন।

আইনটির বিষয়ে ইসির সচিব বলেন, ‘আধুনিক দলের নিবন্ধনের বিষয়টি ৭২ সালের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) ছিল না। এটি ২০০৮ সালে আরপিওতে যুক্ত হয়েছে। তখন আলাদা আইনের কথা উঠেছিল। কিন্তু সময়ের অভাবে তড়িঘড়ি করে এটিকে আরপিওতে যুক্ত করা হয়। বর্তমান কমিশন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের বিষয়টি আলাদা করে আইন করার প্রয়োজন মনে করছে। তারা মনে করছেন আইনের এই অংশটি আরপিও থেকে বের করে স্বতন্ত্র করা উচিত। তাছাড়া আপনারা জানেন সরকারের একটি সিদ্ধান্ত আছে সব আইনগুলো বাংলায় প্রণয়ন করার। যার কারণে এটি বাংলায় করা হচ্ছে।’

এ প্রসঙ্গে সচিব আরও বলেন, ‘বর্তমানে সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার পরিষদ নির্বাচন দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কিন্তু নিবন্ধনের বিষয়টি আরপিওতে থাকলে তা কেবল সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রযোজ্য হয়। এ ক্ষেত্রে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য আলাদা আইনের প্রয়োজন পড়বে। আরপিও থেকে নিবন্ধনের চ্যাপ্টারটি বের করে একটি স্বতন্ত্র আইন করা হলে ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হবে না।’

আইনের খসড়া অনুমোদন প্রসঙ্গ টেনে ইসি সচিব বলেন, ‘কমিশন আইনের সার্বিক দিক পর্যালোচনা করে কিছু সংযোজন-বিয়োজনের নির্দেশনাসহ এটি অনুমোদন দিয়েছে। আমরা আগামী সপ্তাহের মধ্যেই সংযোজন-বিয়োজন সম্পন্ন করে কমিশনারদের কাছে উপস্থাপন করবো। তারা এটি দেখার পর পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানো হবে।’

নিবন্ধন আইনে রাজনৈতিক দলের মতামত প্রসঙ্গে সচিব বলেন, ‘আমরা ১৭টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন সংগঠনসহ ৪১ প্রতিনিধির মতামত নিয়েছি। এটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে কমিশন সভায় তুলে ধরা হয়েছে। মতগুলোর মধ্যে যেটি গ্রাহ্য সেটা কমিশন গ্রহণ করেছে। যেটি অগ্রাহ্য সেটি গ্রহণ করেনি।’

মাহবুব তালুকদারের নোট অফ ডিসেন্ট
রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইনের বিরোধিতা করে নোট অফ ডিসেন্ট দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। সমঝোতার পথ খুঁজে না পেয়ে কেবল রেকর্ড রাখার জন্য বাধ্য হয়ে তিনি নোট অফ ডিসেন্ট দিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের জানান। এ সময় তিনি লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনানোর পাশাপাশি আরও কিছু কথা বলেন।

নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারকমিশন সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘সমঝোতার পথ খুঁজে পাচ্ছি না, তাই বাধ্য হয়ে নোট অফ ডিসেন্ট দিয়েছি। ভিন্নমত অবশ্যই প্রকাশিত হতে হবে। ভিন্নমত প্রকাশিত না হলে সেটা ভিন্নমত হতে পারে না। কারণ, মতামত কী সেটাই তো দেশের মানুষ জানতে পারলোপ না। আমি যতবার নোট অফ ডিসেন্ট দিয়েছি তা বাধ্য হয়েই দিয়েছি। আমি সমঝোতার কোনও পথ খুঁজে পাইনি। এখানে এমন কিছু বিষয় রয়েছে যাতে কোনও সমঝোতা হয় না। আমি এখানে বলেছি আইনের প্রয়োজনীয়তা নেই। তারপরেও আমার কথাটা তো কেউ মেনে নিচ্ছে না। যার জন্য রেকর্ড দেখার জন্য আমি নোট অফ ডিসেন্ট দিয়েছি।’

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন “গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২”-এর “চ্যাপ্টার সিক্স এ”-এর বিভিন্ন আটিকেল কর্তন করে রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন আইন, ২০২০ প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি এই সিদ্ধান্তের সম্পূর্ণ বিরোধিতা করি। আরপিও বা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর অংশবিশেষ নিয়ে পৃথকভাবে আইন প্রণয়ন হঠকারী সিদ্ধান্ত। আমি আগেও বলেছি, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ একটি ঐতিহাসিক আইনগত দলিল, যা বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার অনন্য স্মারক। নির্বাচন কমিশনের এই প্রস্তাব গৃহীত হলে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ -এর অঙ্গহানি ঘটবে, যাতে একে বিকলাঙ্গ মনে হবে।’

লিখিত বক্তব্যে এই আইনের বিরোধিতা করে তিনি আরও বলেন, ‘প্রস্তাবিত “রাজনৈতিক দলসমূহের নিবন্ধন আইন, ২০২০”-এর প্রারম্ভিক অংশে “সংক্ষিপ্ত শিরোনাম, প্রয়োগ ও প্রবর্তন” ইত্যাদি পরিবর্তন বিষয়ে আমি একমত নই। এতে সংজ্ঞা পরিবর্তন করে নতুন যে পদ-পদবি প্রস্তাব করা হয়েছে, তা আমার কাছে অনাবশ্যক মনে হয়। রাজনৈতিক দলসমূহ ও সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে যে ৫০টি মতামত পাওয়া গেছে, তাতে এসব পদ-পদবি পরিবর্তনের বিষয়ে বিতর্ক রয়েছে। কী কারণে বা কোনও যুক্তিতে এই পরিবর্তন প্রয়োজন, তা আমার বোধগম্য নয়। তবে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে “আরপিও, ৭২”-এর সংশোধন করা যেতে পারে, যা পূর্বেও করা হয়েছে। আমি মনে করি, আইনের পরিবর্তন আইন কমিশনের কাছে ন্যস্ত থাকাই সমীচীন।

‘উল্লেখ্য যে, আজকের সভার কার্যপত্রে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনের ৬৩ তম সভার সিদ্ধান্তের আলোকে ‘রাজনৈতিক দলসমূহের নিবন্ধন আইন, ২০২০’-এর খসড়া প্রস্তুত করা হয়। এই আইন সম্পর্কে প্রাথমিক আলোচনায় নির্বাচন কমিশনে নানরূপ মতদ্বৈধতা ছিল। আইনটি মতামত যাচাইয়ের পূর্বে অধিকতর যাচাই বাছাই ও এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনে আরও আলোচনার প্রয়োজন ছিল। দেশের অন্যতম বৃহৎ দুটি রাজনৈতিক দলসহ অন্যান্য দলও এই আইন প্রণয়নের বিরোধিতা করেছে।

‘এ অবস্থায় “রাজনৈতিক দলসমূহের নিবন্ধন আইন, ২০২০” সম্পর্কে ভিন্নমত পোষণ করে আমি নোট অব ডিসেন্ট প্রদান করছি।’