মুকুলের বান্ধবী সিঁথিও শ্রীঘরে
ঢাকা জার্নাল: গাজী টেলিভিশন থেকে চাকরিচ্যুত সাংবাদিক রকিবুল ইসলাম মুকুলের কথিত প্রেমিকা মেহেরুন বিনতে ফেরদৌস সিঁথিকে কারাগারে পাঠিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট অমিত কুমার দের আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে বিচারক আবেদন নামঞ্জুর করে সিঁথিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
দুপুর ১২টায় জামিন শুনানিতে সিঁথির আইনজীবী গোলাম মোস্তফা খান দাবি করেন, মুকুলের সঙ্গে তার কোনই সম্পর্ক নেই। তার স্বামী রাজিউল আমিনের সঙ্গেই তিনি বসবাস করছেন। মুকুলকে নির্যাতনে প্ররোচনা দেওয়ার সঙ্গে তার কোন সম্পর্ক নেই।
সিঁথির জামিনের বিরোধিতা করেন অ্যাডভোকেট কাজী নজীবউল্লাহ হিরু, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি, অ্যাডভোকেট মবিনুল ইসলাম ও সৈয়দা ফরিদা ইয়াসমিন জেসি।
মুকুল ও সিঁথির কিছু অন্তরঙ্গ মূহুর্তের ছবি আদালতকে দিয়ে অ্যাডভোকেট হিরু বলেন, সিঁথি তার স্বামীর ঘর সংসার করলে অন্যের স্বামীর সঙ্গে এমন অন্তরঙ্গ ছবি আসে কিভাবে। মুকুলের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের কারণেই মুকুল নাজনীনের উপর নির্যাতন করতেন।
এসময় সিঁথির আইনজীবী এসব ছবি কম্পিউটারে তৈরি করা বলে দাবি করেন।
সিঁথির আইনজীবীকে ম্যাজিস্ট্রেট অমিত কুমার দে বলেন, মামলায় আত্মসমর্পন করলে তার জামিন হতে পারে, জেলও হতে পারে, এমন সঙ্কটময় মূহূর্তে তার স্বামী আদালতে নেই কেন? তিনি কোথায়? তার স্বামীকে নিয়ে আসেন। তিনি এসে সিঁথিকে জিম্মায় নিলেই জামিন হতে পারে।
এরপর সিঁথির স্বামী ঢাকা ব্যাংকের মতিঝিল শাখার সিনিয়র প্রিন্সিপ্যাল অফিসার রাজিউল আমিনকে আদালতে হাজির করে আসামিপক্ষ। কিন্তু রাজিউল আমিন আদালতে এলেও সিঁথিকে নিজের ঘরে ফিরিয়ে নিতে অসম্মতি জানান।
এ অবস্থায় আদালত সিঁথির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে জেলে পাঠান।
তবে এরও আগে রাজিউল আমিন ও সিঁথিকে বেশ ক’বার নিজেদের মধ্যে কথা বলে সমঝোতা করার সুযোগ দেন তাদের আইনজীবীরা। প্রতিবারই রাজিউল আমিন স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে অস্বীকার করেন।
এ সময় সিঁথি পালানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।
সিঁথির সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে সাংবাদিক স্ত্রী নাজনীন আক্তার তন্বীর ওপর নির্যাতন করেন রকিবুল ইসলাম মুকুল।
এতে তন্বীর মামলা ঠুকে দিলে মুকুলকে গত ২৬ জুন দিবাগত রাতে আটক করে পুলিশ।
পরে আদালতের নির্দেশে তাকে ১ দিনের রিমান্ডে নেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাসুদ পারভেজ। গত ২৮ জুন রিমান্ড শেষে মুকুলকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। মুকুল বর্তমানে কারাগারে আটক আছেন।
নতুন করে কোনো রিমান্ড বা জামিনের আবেদন না থাকায় তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট অমিত কুমার দে।
মামলার বাদী নাজনীন আক্তার দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক। গত ২৫ জুন নাজনীন তার স্বামী মুকুল ও মেহেরুন বিনতে ফেরদৌস ওরফে সিঁথির বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন ও যৌতুকের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।
মামলায় নাজনীন আখতার অভিযোগ করেন, ২০১৩ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর একমাত্র মেয়ে চন্দ্রমুখী মারা যাওয়ার পর শোকে তিনি পাঁচতলা থেকে লাফ দিয়ে পড়ে গুরুতর আহত হন। এরপর দীর্ঘদিন হাসপাতালে ছিলেন। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে আবার তারা দু’জন সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
কিন্তু এর মধ্যে মেহেরুন বিনতে ফেরদৌসের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন রকিবুল। এ নিয়ে কথা বললে স্বামী মুকুল বিভিন্ন সময়ে নাজনীনকে অন্তঃসত্বা অবস্থায় শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন। মেহেরুনের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময়ও মুকুল তাকে কয়েকবার নির্যাতন করেছেন বলেও অভিযোগ করেন নাজনীন।
একবার রক্তাক্ত অবস্থায় সহকর্মীরা বাসা থেকে নাজনীনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। এর কিছুদিন পর তার দ্বিতীয় কন্যার জন্ম হয়। কিন্তু সন্তানের জন্মের পর থেকে কখনোই খোঁজ নিতেন না মুকুল।
নাজনীনের অভিযোগ, বিভিন্ন সময়ে মুকুল তার কাছ থেকে যৌতুকের জন্য টাকাও নিয়েছেন।
ঢাকা জার্নাল, জুলাই ২, ২০১৫