শিক্ষা-সংস্কৃতি

বাল্যবিয়ে ঠেকিয়ে দেওয়া বর্ষা পেলো জিপিএ-৫

দরিদ্র পরিবারে জন্ম। তাই বছর খানেক আগে ১৬ বছর বয়সেই বিয়ে দিতে চেয়েছিল পরিবার। কিন্তু শ্রাবন্তী সুলতানা বর্ষা পরিবারের এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেনি। নিজের বাল্যবিয়ে ঠেকাতে দরখাস্ত নিয়ে থানায় হাজির হয় এই স্কুলছাত্রী। পরে পুলিশ গিয়ে তার মাকে বোঝালে বিয়ের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। বছর ঘুরতেই সেই মেয়েটি তাক লাগিয়ে দিয়েছে এসএসসি পরীক্ষায়। পেয়েছে জিপিএ-৫।

একসময় যে পরিবার তার বিয়ের পিঁড়িতে বসার দিনক্ষণ ঠিক করে ফেলেছিল এখন তারাই বর্ষাকে নিয়ে নতুন স্বপ্ন বুনছেন। তার সাফল্যে খুশি শিক্ষক, সহপাঠী ও প্রতিবেশী। তাকে সংবর্ধনা দিয়েছে জেলা পুলিশ।

জানা গেছে, গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর শ্রাবন্তী সুলতানা বর্ষাকে দেখতে পাত্র পক্ষের আসার কথা ছিল। বর্ষা তখন চুয়াডাঙ্গা ঝিনুক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী। বাল্যবিয়ের আয়োজনের বিষয়টি বুঝতে পেরে বর্ষা ছুটে গিয়েছিল চুয়াডাঙ্গা সদর থানায়। নিজের বাল্যবিয়ে ঠেকাতে ওসির কাছে দিয়েছিলেন একটি দরখাস্ত। সেখানে উল্লেখ করেছিল, আর্থিক দুরবস্থার কারণে বিয়ে দেওয়া সব সমস্যার সমাধান নয় বরং বাল্যবিয়ের কারণে আমাদের দেশে হাজারো মেয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয় এবং একপর্যায়ে অপমৃত্যুর শিকার হয়।

থানার তৎকালীন ওসি মোহাম্মদ মহসীনকে বর্ষা বলেছিল, বাল্যবিবাহ নয়, আমি পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। পরে মেয়েটির সাহসী ভূমিকায় বিয়ের আয়োজন ভেস্তে যায়। সে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে।

বর্ষা জানায়, একটা সময় পরিবারসহ প্রতিবেশীরা সবাই বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিল। তবে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে সে বাধ্য হয় প্রশাসনের আশ্রয় নিতে। আজ সে সফল। একটা সময় যেসব মানুষ তাকে তাচ্ছিল্য করেছিল তারাই আজ তাকে দেখতে বাড়িতে ফুল নিয়ে যাচ্ছে। বর্ষা সাংবাদিক হতে চাই। ভাঙতে চাই বাল্যবিয়ের শেকল। তুলে
ধরতে চাই সমাজের অসঙ্গতি।

মা বিউটি খাতুন জানান, স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর অনেক কষ্টে মেয়ের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হয়েছে তাকে। অভাবের সংসারে মেয়েকে বিয়ে দেবার দিন ঠিক করলেও মেয়ের ইচ্ছাতেই বিয়ে আর হয়নি। মেয়ের পরীক্ষায় ভালো ফল পাল্টে দিয়েছে তার স্বপ্ন। এখন মেয়ের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশায় বুক বাঁধছেন।

প্রতিবেশী রাবেয়া জানান, বর্ষা তাদের এলাকার গর্ব। তাকে দেখেই এলাকার অনেক মেয়েই এখন অনুপ্রাণিত হবে।

জাহানারা বেগম নামে আরেক প্রতিবেশী বলেন, তাকে আমরা ছোট থেকে দেখেছি, খুবই মেধাবী। বড় হয়ে সে দেশের জন্য কাজ করবে এমনটাই প্রত্যাশা করি।

দরিদ্র পরিবারের বর্ষার সহযোগিতা করেছিলেন অনেকে। শিক্ষক থেকে সাধারণ মানুষ, সবার সহযোগিতায় সে আজ এ পর্যায়ে। আনন্দ বিরাজ করছে সেসব মানুষের মধ্যেও।