প্রকাশিত হল নজরুলের গানের ইংরেজি ভার্সান প্রথম সিডি
ঢাকা জর্নাল (চুরুলিয়া, পশ্চিমবঙ্গ ভারত): কবির মাটি থেকেই খুলে গেল বিশ্বে বাংলা সংগীতের নতুন জগত। এতদিন যে স্বাদ বাংলা ভাষীরাই পেতেন এবার পাবে যে কোন ভাষা ভাষীর মানুষ। সেই কথা সেই সুর সেই ছন্দ সেই অন্তমিল ও শব্দ প্রয়োগ বৈশিষ্ট, ভাষা ইংরেজী। এ অভাব বোধ দীর্ঘ দিনের, কিন্তু কাজটি ছিল অসম্ভব জটিল।
কবির স্মৃতি বিজড়িত ভারতের চুরুলিয়া নব কৃষ্ণ হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক গীতিকার কবি গিয়াসুদ্দিন এ অসাধ্য সাধন করলেন যা ঐতিহাসিক। এ কাজে লেগে আছেন ২০০৮ সাল থেকে।২৫০ টি গানের সুর সহ ভাষান্তর করেছেন সামগ্রিক নজরুল সাহিত্য অনুবাদের ফাকে ফাকে,যা বই আকারে প্রকাশিত হতে যাচ্ছে সিলেক্টেড নজরুল তৃতীয় খণ্ড হিসেবে। তারই পরিচয় করিয়ে দিতে বের করলেন ইংরেজি ভাষায় ৬ টি গান ও ৬টি জনপ্রিয় নজরুল কবিতার সিডি। কণ্ঠ মৌসুমি ঘোষাল ও অনুবাদকের।
ইংরেজিতে নজরুল চর্চার পীঠস্থান হয়ে উঠল বিদ্যালয়। বাংলা গান কে আধুনিক করেছেন কাজী নজরুল ইসলাম কথায় ও সুরে। নানান দেশের সুরকে আত্মস্থ করে পেশ করেছেন নিজের মত। আদল ভেঙেছেন অদ্ভূত দক্ষতায়।করেছেন পরীক্ষা নিরিক্ষা। ফলে বাংলা গান পেয়েছে নতুন আঙ্গিক। তৈরি হয়েছে নজরুল শৈলী বা ঘরানা। সৃষ্টি করেছেন নতুন রাগ। এবং আশ্চর্যের বিষয় হল তাঁর কথার মাধুর্য ও কাব্য ময়তা এবং সুরের সঙ্গে বিষয় বস্তুর সাযুজ্য। সঙ্গীত জগতের মানুষ তা জানেন। আর তাই এত নেগেটিভিজমের মধ্যেও নজরুল গীতি আজও সাধারণ মানুষের মধ্যে সমান জনপ্রিয়।
কবি বলতেন, এস আমরা বাংলায় খেয়াল গাই। আমরা দেখেছি তিনিই এনেছেন বাংলায় গজল, হামদ, নাত এবং যুদ্ধ সংগীতও। ভারতের উত্তরের চৌরাসকা থেকে দক্ষিণের নানান সুর।গড়েছেন হেরিটেজ।বাংলা সঙ্গীতকে এগিয়ে দিয়েছেন কয়েক শ বছর। আমরা পেয়েছি ৩৫০০ গান। কিন্তু এর স্বাদ বাংলা না জানা শ্রোতা পেতেন না কারণ ভাষাই হল এ রত্ন ভাণ্ডারে ঢোকার চাবিকাঠি। তাঁরা কথা ছাড়া সুরের জগতে বিচরণ করতেই পারেন কিন্তু সম্পূর্ণ রসাস্বাদন থাকত অধরা। এইখানেই আলোচ্য সিডি টির উপযোগিতা ও সাফল্য। গানগুলো শুনলে তাঁর বিষয় বস্তু যেমন জানা যাচ্ছে তেমনি ইংরেজি শব্দকে আশ্রয় করে সুর বিস্তার, লয়কারি,গমক,পকড় মীড় জাতীয় সাংগীতিক কাজগুলিও পেয়ে যাচ্ছেন। এমনি হয়েছে এ ভাষান্তর।
শিল্পীর দক্ষতা নিঃসন্দেহে এখানে বড় সহায়কের কাজ করেছে। অনুবাদকের তত্বাবধানে বর্তমানে ১৪ জন গায়ক গায়িকা ইংরেজিতে নজরুল গীতি গাইছেন কিন্তু রেকর্ড করলেন মৌসূমি ঘোষাল এই প্রথম। অনুবাদকের সঙ্গে সকলেরই আশা নজরুল গীতির প্রখ্যাত শিল্পীরা এবং রেকর্ড কোম্পানি গুলি এগিয়ে আসুন এই কাজে।
এ প্রয়াস ঐতিহাসিক ও অভূতপূর্ব, বললেন নজরুল সাহিত্য বিশারদ ড. আবুল হাসনাত। নজরুলের গানের ইংরেজি ভার্সান করে গিয়াসুদ্দিন নজরুল চর্চার এক অন্য দিগন্ত খুলে দিলেন বিশ্ব সঙ্গীত পিপাসুদের কাছে। তাঁর এ কাজের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দাবী করছি, বললেন বিশিষ্ট নজরুল গবেষক ড. বাঁধন সেনগুপ্ত। বিশেষ আগ্রহ দেখিয়েছেন পশ্চিম বঙ্গ কাজী নজরুল ইসলাম একাদেমি।
উল্লেখ্য, ঢাকা জার্নাল প্রথম এই অনুবাদকের সামগ্রিক নজরুল সাহিত্যের অনুবাদ গ্রন্থ সিলেকটেড নজরুল ভল্যুম ওয়ান এর রিভিউ প্রকাশ করে ২০১৪ সালে। অনুবাদক জানিয়েছেন শিগগিরই আসছে তাঁর ভল্যুম টু গ্রন্থটি। কাজ চলছে পাশা পাশি বাংলা ও ইংরেজি রেখে শুধু গানের সঙ্কলন ভল্যুম থ্রির। ইংরেজিতে গানগুলোর জন্য যোগাযোগ করতে হবে ০৯৩৩২০৭৬৯৩৯ অথবা giasuddin51@gmail.com এ।