Leadশিক্ষা-সংস্কৃতিসব সংবাদ

নোট গাইডের তকমায় অনুশীলন বই বন্ধের উদ্যোগ, ২৪ লাখ মানুষ জীবীকার হুমকিতে

বাংলাদেশে কোনও ‘নোট গাইড’ বই নেই বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশনা ও বিক্রেতা সমিতি। সংগঠনটির সহ-সভাপতি কামরুল হাসান শায়ক বলেন, “বাজারে ‘নোট গাইড’ বইয়ের কোনও অস্তিত্ব নেই। অনুশীলনমূলক বইকে নোট গাইডের তকমা দিয়ে বিক্রি বন্ধ করার প্রস্তাব করা হয়ে আইনে। এই বিধিনিষেধ আরোপের যে প্রস্তাব’ তা শিক্ষাখাত তথা জাতির বৃহত্তর স্বার্থে পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে। তা না হলে পুরো শিল্প ধ্বংসের মুখে পড়বে।”

শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির সসাগর-রুনি মমিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রস্তাবিত শিক্ষা আইন-২০১৯ -এর কয়েকটি ধারা-উপধারা সংশোধনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলনে আয়োজন করে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশনা ও বিক্রেতা সমিতিসহ ১২টি সংগঠন।

আইনে অনুশীলন বইয়ের সংজ্ঞা ঠিক করার দাবি করে শায়ক বলেন, ‘আইনে অনুশীলন বইয়ের সংজ্ঞায়িত করতে হবে। অনুশীলন বইয়ের মানোন্নয়ন  এবং অনিয়ম নিয়ন্ত্রণের জন্য মনিটরিং সেল গঠন করা যেতে পারে।’

শায়ক দাবি করে বলেন, অনুশীলন বই বন্ধ হয়ে গেলে শিক্ষার্থীরা পুরোপুরি কোচিং সেন্টার ও গৃহশিক্ষকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। এছাড়া অনুশীলন বইয়ের খাতে বিশাল যে জনগোষ্ঠী কর্মরত আছেন, তারা বেকার ও অর্ধবেকার হয়ে পড়বেন। ২৩ লাখ ১০ হাজার মানুষের  জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে।’

লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি আরিফ হোসেন ছোটন বলেন,  “প্রস্তাবিত আইনে নোট গাইড’ সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে কিন্তু অনুশীলন বইয়ের কোনও সংজ্ঞা নেই। ‘নোট গাইড’ হচ্ছে পাঠ্যবইয়ের দেওয়া উত্তরগুলো দেওয়া থাকে’ যা বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করা হয়। শিক্ষার্থীরা তা মুখস্ত করে পরীক্ষায় অংশ নেয়। অন্যদিকে অনুশীলন বইয়ের বিষয়বস্তু হচ্ছে পাঠ্য বিষয়ের সহজে অনুধাবন, প্রশ্নের নমুনা, উন্নত উত্তর লেখন পদ্ধতি। শিক্ষার্থীরা অনুশীলন বই মুখস্ত করে না। কারণ তা মুখস্ত করে কোনও লাভ নেই। সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষায় কোনও প্রশ্ন কমন পড়ে না।”

সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের অনুশীলন বই উপস্থাপন করা করেন শায়ক।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনুশীলন বইয়ের সহায়তায় পাঠ্যপুস্তক বই প্রকাশিত হয় দাবি করে সংগঠনের সসভাপতি আরিফ হোসেন বলেন, ‘বিশ্নের বিভিন্ন দেশে একেক রকম সহায়ক বা অনুশীলন বই রয়েছে। সিঙ্গাপুরে পাঠ্যবই অনুশীলন বই দিয়েই চলে লেখাপড়া।’

নোট বই থেকে পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র কমন পড়েছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সংগঠনের সহ-সভাপতি শ্যামল পাল বলেন, ‘কোনও অনুশীলন বই থেকে প্রশ্ন কমন পড়েনি। এটা বিগত বছরের প্রশ্ন থেকে এই বছরের প্রশ্ন করা হয়েছে। এই জন্য আমরা দায়ি নই। যারা প্রশ্নের প্রণেতা তারাই দায়ি।’

নোট গাইড বিক্রি বন্ধের জন্য ২০১৫ সালে হাইকোর্টের দেওয়া রুল এখনও নিষ্পতি হয়নি দাবি করে আইনজীবি পার্থ সারথি মন্ডল বলেন, “রিটের আদেশে বলা ছিল রুল নিষ্পতি না হওয়া পর্যন্ত ‘নোট গাইড’ বই বিক্রি অব্যাহত থাকবে। কিন্তু আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ও স্থানীয় প্রশাসন তা মানছেন না। তারা এটা নিয়ে ফায়দা নেওয়া চেষ্টা করছেও। যা আদালত অবমাননার শামিল।   

২৪ ফেব্রুয়ারি বন্ধ থাকবে পুস্তক বিক্রি কেন্দ্র  

প্রস্তাবিত শিক্ষা আইন-২০১৯ এর কয়েকটি ধারা-উপধারা সংশোধনের দাবিতে আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে মানববন্ধন করবে সংগঠনগুলো। ওইদিন সারাদেশের বই বিক্রির দোকান বন্ধ রাখাও ঘোষণা দিয়েছেন সংগঠনের সভাপতি সভাপতি আরিফ হোসেন ছোটন। 

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সহ-সভাপতি মির্জা আলী আশরাফ কাশেম, পরিচালক কাজী জহুরুল ইসলাম বুলবুল, কাজী শাহ আলম, শামসুল ইসলাম বাহার, নিরুপ সাহা নিরু, আনোয়ারুল ইসলাম প্রমুখ।