অন্যান্যসব সংবাদস্পটলাইট

গণমাধ্যমে কথা বলতে বিধি প্রয়োজন, তবে বিঘ্ন সৃষ্টি করে নয়

ঢাকা: সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের গণমাধ্যমে কথা বলার ক্ষেত্রে কিছু বিধিমালার প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার চেয়ারম্যান, ঢাকা বিশ্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।

তিনি বলেন, বিধিমালার প্রয়োজন আছে।

তবে গণমাধ্যমে তথ্য সরাবরাহের কাজ যেন বিঘ্ন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
অনুমতি ছাড়া কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর গণমাধ্যমে কথা বলা এবং নিবন্ধ প্রকাশ না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সে পরিপ্রেক্ষিতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।

ড. আরেফিন সিদ্দিক বলেন, নির্দেশনায় শিল্প, সাহিত্য ও ক্রীড়া বিষয়ে কথা বলার ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তারা অনুমতি সাপেক্ষে কথা বলতে পারবেন। এই প্রজ্ঞাপনটা নতুন কিছু নয়, ১৯৭৯ সালের প্রজ্ঞাপন। এখন নতুন শতাব্দীর নতুন বাস্তবতার সময়। তখন ছিল মাত্র একটা টেলিভিশন, রেডিও একটা, আর কিছু দৈনিক পত্রিকা। সেই সময়ে সীমিত গণমাধ্যমের জন্য যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, তা তখনকার বাস্তবতায়। একবিংশ শতাব্দীতে এসে সেই নির্দেশনার পূণর্মূল্যায়ন করা উচিৎ।

তিনি বলেন, বর্তমানে সম্প্রচার জগত বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। বেসরকারি রেডিও, টেলিভিশন, কমিউনিটি রেডিও, পত্রিকা এবং অনলাইন নিউজ পোর্টালের সংখ্যা বহুগুণে বেড়েছে। তাই সরকারি এই নির্দেশনার বিষয়ে নতুন করে চিন্তা ভাবনা করতে হবে। একইসঙ্গে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের গণমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত করে কিভাবে সরকারের মূল লক্ষ্য অর্জন করা যায়, তা ভাবতে হবে। সরকারি চাকরির যে মৌলিক নীতিমালা আছে, তার সঙ্গে সমন্বয় করেই এই কাজ করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এ উপাচার্য আরও বলেন, আমি মনে করি, আমাদের যারা জনপ্রতিনিধি আছেন, তাদের এ বিষয়ে দৃষ্টি দেওয়া উচিৎ। গণমাধ্যমের কাজ করার স্বাধীনতা নিশ্চিত করাটা সরকারের এবং আমাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব। এটা প্রত্যেক নাগরিকেরও দায়িত্ব যে, আমরা তথ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে কোনো বাধার সৃষ্টি করবো না। একই কারণে শেখ হাসিনার সরকার তথ্য কমিশন গঠন করেছে। পাশাপাশি তথ্য অধিকার আইনও প্রণয়ন করেছে। তথ্য অধিকার আইনের সাথে সঙ্গতি রেখে, একবিংশ শতাব্দীর গণমাধ্যমের বিস্তারকে বিবেচনায় রেখে, সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের আচরণ বিধিমালা সংশোধন, সংযোজন, পরিমার্জন এবং সর্বোপরি সময়োপযোগী করাই এখন দরকার।

এই নির্দেশনার ফলে গণমাধ্যমের কাজে কোনো বাধা সৃষ্টি হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের যারা নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে আছেন, তাদের কথা বলার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না। তবে নিচের দিকে যারা আছেন, তাদের অনুমতি নিয়ে কথা বলতে সময়ের অপচয় হবে। কিন্তু তথ্য প্রযুক্তি যে ক্ষিপ্র গতিতে পরিচালিত হয় সেখানে সময় একটা বড় বিষয়, অনুমতি যদি নিতেই হয়, তা যেন দ্রুত গতিতে হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। গণমাধ্যমকে তথ্যের জন্য যেন মুহূর্তের জন্যেও অপেক্ষা করতে না হয়। আবার এটাও ঠিক, একজন সব বিষয়ে কথা বলতে পারবেন না, এটা উচিতও না। ইদানিং সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের কেউ কেউ আবার কথা বলার এই স্বাধীনতাকে যথেচ্ছভাবে ব্যবহারও করছেন। কোনো কোনো কর্মকর্তা যে কোনো বিষয়ে কথা বলা শুরু করে দেন। এর ফলে মাঝে মধ্যে সরকার বিব্রত হয়।

তিনি আরও বলেন, সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের গণমাধ্যমে কথা বলার ক্ষেত্রে কিছু বিধিমালার প্রয়োজন আছে, তবে গণমাধ্যমের তথ্য সরবরাহের কাজ যেন বিঘ্ন না হয় সেদিকটা খেয়াল রাখতে হবে। সরকারের সব কর্মকাণ্ড জনগণের জন্য। তাই সরকারের কর্মকাণ্ড কিভাবে পরিচালিত হচ্ছে, তা দেশের জনগণের জানার পূর্ণ অধিকার আছে। আর সে তথ্য দেবেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই।