খুনি ধরতে ‘আল্টিমেটাম’ গণজাগরণের
প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপনের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের জন্য সরকারকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ।
এই সময়ের মধ্যে খুনিরা ধরা না পড়লে ওইদিন শাহবাগে ‘গণসমাবেশ’ থেকে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার হুমকি দিয়েছেন মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার।
শুক্রবার বিকালে শাহবাগে এক সমাবেশে তিনি বলেন, “খুনিদের গ্রেপ্তারে সরকারকে ১৫ দিনের সময় বেঁধে দিচ্ছি। এর মধ্যে গ্রেপ্তার করতে না পারলে ২০ নভেম্বরের গণসমাবেশ থেকে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।” সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ এবং রাজনীতিতে ধর্মের ‘অপব্যবহার’ বন্ধের দাবিতে ২০ নভেম্বর শাহবাগে গণসমাবেশের ডাক দেন ইমরান।
গত শনিবার শাহবাগে জাগৃতি প্রকাশনীর মালিক দীপনকে হত্যা এবং লালমাটিয়ায় শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর অফিসে হামলা চালিয়ে প্রকাশক আহমেদুর রশিদ টুটুলসহ তিনজনকে হত্যাচেষ্টার প্রতিবাদে বিকালে শাহবাগে ‘মুক্তচিন্তার সংহতি সমাবেশে’ করে জাগরণ মঞ্চ।
সমাবেশে অধ্যাপক অজয় রায় উপস্থিত ছিলেন, যার ছেলে লেখক অভিজিৎ রায়কে গত ফেব্রুয়ারিতে টিএসসি এলাকায় কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। ধারাবাহিকভাবে লেখক-প্রকাশক হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে আরও কিছু কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন ইমরান।
৯ নভেম্বর বিকাল ৪টায় শাহবাগে সমাবেশ শেষে শহীদ মিনারের দিকে আলোর মিছিল এবং ১৩ নভেম্বর শাহবাগে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশ করবে তারা।
ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা: কোন পথে বাংলাদেশ’ শিরোনামে সেমিনারের আয়োজন করবে গণজাগরণ মঞ্চ।
জঙ্গি দমনে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়ে ইমরান বলেন, “সরকারের প্রতি আহ্বান জানাব- আর তাকিয়ে থাকবেন না, আর কারও উপর দোষ চাপাবেন না, ঘটনা অস্বীকার করবেন না। এদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিন। সন্ত্রাস ও ধর্মের নামে হত্যাকাণ্ড বাড়ার সুযোগ করে দিবেন না।
“এদের লাগাম টেনে ধরুন। না হলে জনগণ আপনাদের কখনও ক্ষমা করবে না।”
তিনি বলেন, “জঙ্গিবাদ ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি দমনের যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তরুণ প্রজন্মের ভোট পেয়ে বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসেছিল, তার ঠিক উল্টো পথেই তারা চলছে।
“আমরা তাদের কাছে বিভিন্ন বক্তব্য নিয়ে গেলে তারা একই কলের গান বাজাচ্ছেন। তারা বলে থাকেন, ‘আগের সরকারের সময়ে আরও বেশি মাত্রায় হয়েছিল। আমরা কঠোর অবস্থান নিচ্ছি।’ আমরা যাদের (বিএনপি-জামায়াত জোট) প্রত্যাখ্যান করেছি, তাদের উদাহরণই এখন তারা টানছেন।”
সরকারের এ অবস্থানের কারণে ‘মুক্তচিন্তার মানুষরা একে একে লাশ হয়ে ফিরছে’ বলে অভিযোগ করেন তিনি।
যুদ্ধাপরাধের বিচার দাবিতে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র বলেন, “জঙ্গিবাদ দমনে সরকার তৎপর নয়। এর বিপরীতে যারা সরকারের জঙ্গিবাদ দমনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভিন্নমত পোষণ করেন তাদের দমনে উৎসাহ নিয়ে কাজ করে।”
শুক্রবার উত্তরায় নিজেদের বাসায় হামলায় তাইওয়ানের এক ব্যবসায়ী ও তার স্ত্রী আহত হওয়ার খবর দিয়ে ইমরান বলেন, “এবারও হয়তো এটাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলা হবে। পরিকল্পিত প্রেস ব্রিফিং নিয়ে সরকারের কোনো মন্ত্রী হাজির হবেন।”
ইমরান এইচ সরকার বলেন, “গত কয়েক মাসে আমাদের পাঁচজন সহযোদ্ধাকে হারিয়েছি। এর প্রতিবাদে সমাবেশ, বিক্ষোভসহ বিভিন্ন কর্মসূচি আমরা পালন করেছি। সর্বশেষ দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় আমরা অর্ধদিবস হরতালও পালন করি।
“খুনিদের বিচার চেয়ে আমাদের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে একই কথা বারবার বলতে হয়েছে। কিন্তু কোনো প্রতিকার বা বিচার আমরা পাইনি।”
অধ্যাপক অজয় রায়ের সভাপতিত্বে সংহতি সমাবেশে অন্যদের মধ্যে ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহফুজা খানম, বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম, নিজেরা করি’র নির্বাহী পরিচালক খুশি কবির, মুক্তিযোদ্ধা ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী, উদীচীর সহ-সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম, নাট্যকার আজাদ আবুল কালাম, শ্রাবণ প্রকাশনীর মালিক রবীন আহসান, শিল্পী মাহমুদুজ্জামান বাবু বক্তব্য রাখেন।