শিক্ষা-সংস্কৃতি

কলেজ অধ্যক্ষের বেতন বাড়িয়ে মাদ্রাসা অধ্যক্ষের সমান করা হচ্ছে

দেশে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের কলেজ অধ্যক্ষ মাদ্রাসার অধ্যক্ষের চেয়ে কম বেতন পান। দীর্ঘদিন ধরে চলা এই বৈষম্য দূর করতে সম্প্রতি উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা সংশোধন করে এই বৈষম্য দূর করা হচ্ছে।

২০২১ সালের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা সংশোধন সংক্রান্ত বৈঠকে কলেজ অধ্যক্ষের বেতন স্কেল বাড়াতে প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে একটি কর্মশালা করে।

গত ২৫ জুন রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকের এই প্রাথমিক সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী। তিনি   বলেন, ‘সবচেয়ে বড় প্রশ্ন মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বেতনের চেয়ে কলেজ অধ্যক্ষের বেতন কম। এতে সরকারের সদিচ্ছা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা তিন ধারায় বিভক্ত। এরমধ্যে আবার উপধারা আছে। মূল ধারার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর (সাধারণ, কারিগরি ও আলিয়া মাদ্রাসা) মধ্যে শুধু বেতন-ভাতার বৈষম্য নয়, আরও বৈষম্য আছে। নানা ধরনের বৈষম্য বিরাজমান। মূল ধারার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের যোগ্যতা ঠিকঠাক থাকতে হবে। সেগুলো দেখভালের দায়িত্ব তো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। শিক্ষা খাত নিয়ে পরিকল্পনা এবং বিনিয়োগের দায়িত্ব নিতে হবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা রয়েছে। সামগ্রিক পরিকল্পনা নিয়ে এসবের সমাধান করতে হবে। শিক্ষানীতিতে সব বলে দেওয়া আছে। আমরা বাস্তবায়ন করতে পারিনি।’

বৈঠকে ২০২১ সালের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালার বিভিন্ন বিধি স্পষ্টকরণ আর ২০২১ সালের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (মাদ্রাসা) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালার মধ্যে সমন্বয় এবং ২০২১ সালের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা সংশোধন নিয়ে আলোচনা হয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অধীনে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর দেশের মূল ধারার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্কুল ও কলেজ পরিচালনা করে। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী কলেজের অধ্যক্ষের বেতন গ্রেড ৬, বেতন স্কেল ৩৫৫০০-৬৭০১০ টাকা। অন্যদিকে একই মন্ত্রণালয়ের অধীনে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অধীনে মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ পরিচালনা করে দেশের সব আলিয়া মাদ্রাসা। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (মাদ্রাসা) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী মাদ্রাসা অধ্যক্ষের বেতন গ্রেড ৫, বেতন স্কেল ৪৩০০০-৬৯৮৫০ টাকা। দীর্ঘদিন থেকে এই বৈষম্য চলে আসছে। শুধু তাই নয়, দেশের বেসরকারি কলেজের অনার্স-মাস্টার্স স্তরের শিক্ষকরা জনবল কাঠামোর বাইরে থাকায় সরকারি কোনও সুযোগ-সুবিধা পান না। দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করেও কোনও লাভ হয়নি। অন্যদিকে সমপর্যায়ের মাদ্রাসা শিক্ষার কামিল স্তরের শিক্ষকরা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামোর মধ্যে রয়েছেন। ফলে তাদের এমপিওভুক্তিতে কোনও সমস্যা নেই, বেতন পান নিয়মিত।

জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ  বলেন, বৈঠকে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে কর্মশালা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

এই বৈষম্য দূর করতে বেসরকারি কলেজে অধ্যক্ষদের বেতন মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বেতনের সমান করা হচ্ছে। তবে অনার্স শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির উদ্যোগ নিলেও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি না পাওয়ায় আপাতত বঞ্চিতই থেকে যাচ্ছেন বেসরকারি কলেজে অনার্স-মাস্টার্স স্তরের শিক্ষকরা।