৯৭ উপজেলায় ভোট বুধবার

ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৪

ঢাকা জার্নাল: চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণ বুধবার। এদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতীহীনভাবে মোট ৯৭ উপজেলায় ভোটগ্রহণ চলবে। এজন্য ভোট এলাকায় ঘোষণা করা হয়েছে সাধারণ ছুটি।

তবে এসব এলাকায় মধ্যে হিন্দু ও ক্ষুদ্র জাতিসত্তা অধ্যুষিত এলাকায় থাকবে চারস্তরের বিশেষ নিরাপত্তা। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ইসির তৈরি করা এক কার্যপত্র থেকে এসব বিষয় জানা গেছে।

প্রতিবেদনে সম্ভাব্য গোলযোগপূর্ণ ভোটকেন্দ্র, হামলাকারীদের নাম পরিচয় তালিকা দেওয়া হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার দেওয়া প্রতিবেদনে চারটি সুপারিশও করা হয়েছে নাশকতা এড়ানো জন্য।

সুপারিশে বলা হয়েছে- সম্ভাব্য গোলযোগপূর্ণ কেন্দ্রগুলোয় আইনশৃঙ্খলা জোরদার করার পাশাপাশি ভোটের ৪৮ ঘণ্টা আগ থেকে পরের দুই দিন পর্যন্ত গোপন নজরদারির ব্যবস্থা নিতে হবে।

সম্ভাব্য হামলাকারীদের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে তাদের গ্রেপ্তার করার পাশাপাশি অন্যদের নজরদারিতে আনা ছাড়াও সার্বক্ষণিক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হবে। অন্যদিকে ভোটের আগে-পরে নাশকতা এড়াতে স্থানীয়ভাবে জনপ্রতিনিধিদের পাহারার ব্যবস্থা করতে হবে।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার শাহ নেওয়াজ বলেন, “গোয়েন্দা সংস্থা ও মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের যে প্রতিবেদন আমরা পেয়েছি তাতে সহিংসতার শঙ্কা নেই। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি বিশেষ নজর দিতে বলেছি।”

গত ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচনের দিন ও আগে-আগে পরে সহিংসতায় দুই নির্বাচন কর্মকর্তাসহ ২১ জন লোক নিহত হন। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত কিছু এলাকায় গোলযোগ বেশি।

ইতোমধ্যে নজরদারির বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আদালত পরিচালনায় রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে নির্দেশনা দেওয়া ও সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভাগে  প্রতিবেদনের কপি সরবরাহ করার বিষয়টি নিশ্চিতের জন্য নির্দেশনা দিয়েছে কমিশন।

ইসি নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখা নাম প্রকাশে এক কর্মকর্তা বলছেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ ইতোমধ্যে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতে জোর দিয়েছেন।

প্রথম ধাপে ৯৭টি উপজেলা পরিষদের তিনটি পদে মোট ১ হাজার ২৫৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছে ৪২৯ জন,  ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ৫০৫ জন, মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান প্রার্থীর সংখ্যা ৩২৫ জন।

এসব উপজেলায় মোট ভোটার ১ কোটি ৬২ লাখ ১৫ হাজার ৪৩৭ জন। এসব ভোটার প্রায় ৬ হাজার ৯০০টি ভোটকেন্দ্রের ৪৩ হাজার ২০০টি ভোটকক্ষে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন।

৯৭ উপজেলার জন্য প্রিজাইডিং কর্মকর্তা সাড়ে ৬ হাজার আর সহকারি প্রিজাইডিং কর্মকর্তা প্রায় ৪৩ হাজার নিয়োগ করেছে ইসি। এতে প্রায় ৮৬ হাজার পোলিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন।

ইসি সচিবালয়ের সহকারি সচিব আশফাকুর রহমান বলেছেন, নির্বাচনের ৩২ ঘণ্টা আগে থেকে হতে প্রচার-প্রচারণা বন্ধ রয়েছে। তা অব্যাহত থাকবে নির্বাচনের পর ৬৪ ঘণ্টা পর্যন্ত। তা অমান্য করলে অর্থদণ্ডসহ কারাদণ্ড অথবা প্রার্থীতাও বাতিল করতে পারবে ইসি।

নির্বাচন কমিশন প্রথম দফায় ১০২টি উপজেলার তফসিল ঘোষণা করলেও সীমানা নির্ধারণ নিয়ে জটিলতার কারণে রংপুরের চারটি উপজেলায় নির্বাচন স্থগিত করা হয়। পরে পীরগঞ্জ উপজেলার ভোট ১৯ তারিখ থেকে পিছিয়ে পিছিয়ে ২৪ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ করা হয়েছে।

এদিকে নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন করতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এতে প্রতি উপজেলায় এক প্লাটুন করে সেনাবাহিনী সদস্য দেবে। প্রতি উপজেলায় সেনাবাহিনীর দুই থেকে তিনটি গাড়ি থাকবে। তাদের সঙ্গে থাকবে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট ও সেনাবাহিনীর কমান্ডিং অফিসার।

এছাড়া মোবাইল ফোর্স হিসেবে পর্যাপ্ত পরিমাণ র‌্যাব, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে।

কেন্দ্রপ্রতি একজন পুলিশ (অস্ত্রসহ), অঙ্গীভূত আনসার একজন (অস্ত্রসহ), অঙ্গীভূত আনসার ১০ জন (মহিলা ৪, পুরুষ ৬ জন) এবং আনসার একজন (লাঠিসহ) ও গ্রামপুলিশ একজন করে আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকবে।

পার্বত্য এলাকা, দ্বীপাঞ্চল ও হাওর এলাকায় এ সংখ্যা শুধুমাত্র পুলিশের ক্ষেত্রে দু’জন হবে। নির্বাচনে শৃঙ্খলা নিশ্চিতে দায়িত্ব পালন করবেন ৩৮৮ জন নির্বাহী ও ৯৭ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট।

এদিকে ইসির বাজেট শাখা হতে জানা গেছে, এ নির্বাচনে অর্থছাড় হয়েছে প্রায় ৬৪ কোটি টাকা। আর ব্যয় হবে দুইশ কোটি টাকার কাছাকাছি।

সর্বশেষ ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে একদিনেই তৃতীয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। কিন্তু প্রথম নির্বাচন ১৯৮৫ সালে ও ১৯৯০ সালের দ্বিতীয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন একাধিক দিনে অনুষ্ঠিত হয়েছিলো।

ইসি এরই মধ্যে মোট চার দফার তফসিল ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে দ্বিতীয় দফায় নির্বাচন হবে ২৭ ফেব্রুয়ারি ১১৭ উপজেলায়, তৃতীয় দফায় ৮৩ উপজেলায় নির্বাচন হবে ১৫ মার্চ আর ৯২ উপজেলায় চতুর্থ দফায় নির্বাচন হবে ২৩ মার্চ।

ঢাকা জার্নাল, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৪।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.