২৮০ কোটি টাকার প্রতারণা করে দেশে গিয়ে নিরাপদে চীনা কোম্পানি
ঢাকা : নিজ দেশের দুই কোম্পানির জালিয়াতির বিষয়ে গত ৫ বছরেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি চীন সরকার। কমপ্যাক্ট ফ্লুরেসেন্ট বাল্ব (সিএফএল) সরবরাহের বিপরীতে ভুয়া পারফরমেন্স গ্যারান্টি (পিজি) জমার মাধ্যমে কোম্পানি দুটি পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) সঙ্গে প্রতারণা করেছিল। এতে সময়মতো সিএফএল সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। এমনকি এ দুর্নীতির কারণে বিশ্বব্যাংক প্রকল্পটি থেকে সরে যায়।
সব মিলিয়ে আর্থিক ও কারিগরি দিকে ভীষণ ক্ষতির সম্মুখীন হয় সংস্থাটি। তাই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে চীন সরকারের কাছে বার কয়কে চিঠি দেয় আরইবি। কিন্তু ওপর পক্ষ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি।
সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠির সূত্র ধরে অনুসন্ধানে বিষয়টি জানা গেছে। অভিযুক্ত কোম্পানি দুটি হলো- সিচুয়ান টোপল্যাক এবং এক্সামিন গোল্ড ইউনিয়ন ইন্ডাস্ট্রিয়াল কোম্পানি ।
২০১০ নভেম্বরে আট লটে ১ কোটি ৭৫ লাখ সিএফএল কেনার দরপত্র আহ্বান করে আরইবি। এর দুই লটে কারিগরি এবং আর্থিকভাবে যোগ্য বিবেচিত হয় ওই দুই চীনা কোম্পানি। এই দুই লটের প্রতিটিতে ৪০ লাখ ৭৫ হাজার সিএফএল সরবরাহের কথা ছিল। এর জন্য জামানত হিসেবে (পিজি) ৯০ হাজার ডলার ব্যাংকে জমা দেয়ার শর্ত দিয়েছিল আরইবি ।
পরবর্তীতে কাগজপত্র যাচাই বাছাই করতে গিয়ে আরইবি দেখে কোম্পানি দুটি দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী পারফরমেন্স গ্যারান্টির জন্য চীনা ব্যাংকের যে কাগজ জমা দিয়েছিল তা ভুয়া। এরপর প্রতারণার শাস্তিস্বরূপ আরইবি কোম্পানি দুটির সিকউরিটি মানি বাবদ জমা রাখা অর্থ আটকের চেষ্টা করলেও তাতে ব্যর্থ হয়। কারণ কোম্পানি দুটি এ আরাইবির অজ্ঞাতসারে ব্যাংক থেকে এ অর্থ তুলে নেয়। পরবর্তীতে আরইবি ওই কোম্পানি দুটি কালোতালিকাভুক্ত করে।
বিদ্যুৎ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বাংলামেইলকে বলেন, ‘আমরা বিষয়টি চীনের সরকারকে অবহিত করলেও তারা ব্যবস্থা নেয়নি। এজন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিষয়টি চীন সরকারকে জানানোর চেষ্টা করছি।’
উল্লেখ্য, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য সরকার ২০১০ সালের দিকে বিনামূল্যে প্রায় ২ কোটি ৮০ লাখ সিএফএল বিতরণের সিদ্ধান্ত নেয়। এতে ব্যয় ধরা হয় ২৮০ কোটি টাকা। বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ইফিসিয়েন্ট লাইটিং ইনিসিয়েটিভ ফর বাংলাদেশ নামে এ প্রকল্পটি দুই ধাপে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের পাশাপাশি কম কার্বন নিঃসরণ বাবদ ১৯ দশমিক ৩৩ সিইআর (কার্বনের মাত্রা) বিক্রির চিন্তা করে সরকার, যার আর্থিক মূল্য ধরা হয় ১৬৮ কোটি টাকা।
২০১০ ও ২০১১ সালে দুই ধাপে প্রথম পর্বের ১ কোটি ৫ লাখ সিএফএল বিতরণ করা হয়। এ পর্যায়ে ৬ দশমিক ৯৪ সিইআর কার্বন ট্রেডিংয়ের আশা করেছিল সরকার। ৬০ কোটি টাকার বিনিময়ে এ সিইআর কিনে নিতে চেয়েছিল ডেনিস সরকার। কিন্তু বিতরণকৃত ১ কোটি ৫ লাখ বাল্বের মধ্যে ৩২ লাখ সিএফএল দু’মাসের মধ্যে নষ্ট হয়ে যায়। ফলাফল ভালো না হওয়ায় কার্বন ট্রেডিং এর অর্থ পায়নি বাংলাদেশ। এই বিশাল অংকের টাকার জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত দেশীয় দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কোনো বব্যস্থা নেয়নি সরকার। তবে ইএম মার্কেটিং ট্রায়াঙ্গেল ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে বাল্ব সরবরাহকারী দুই দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে কালোতালিকাভুক্ত করা হয়। ওই কোম্পানি দুটির বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তারা চীন থেকেই নিম্নমানের সিএফএল সরবরাহ করেছে