১৫ রাষ্ট্রীয় স্থাপনা ‘মহাসেন’ হুমকিতে
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা আশংকা করছেন, ঘূর্ণিঝড় মহাসেন আঘাত হানলে শহর রক্ষা বাঁধের দূরাবস্থার কারনে এইসব প্রতিষ্ঠানের বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়ে জাতীয় বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।
বঙ্গোপসাগর এবং কর্ণফূলী নদীর মোহনার পতেঙ্গায় দেশের জ্বালানী তেল বিপননকারী তিনটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান স্থাপনা ছাড়াও জ্বালানী সেক্টরের আরো চারটি স্থাপনা। এই ছাড়াও আছে দুটি রপ্তানী প্রক্রিয়াজতকরণ অঞ্চল, চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমান বন্দর, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর ঘাঁটি এবং বাংলাদেশ নেভাল একাডেমী। কর্ণফূলীর দক্ষিণ পাড়ে আছে দেশের বৃহৎ সারকারখানা কর্ণফূলী ফার্টিলাইজার কোম্পানী কাফকো ও চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানী।
পতেঙ্গা এলাকার সংসদ সদস্য এমএ লতিফ বলেছেন, “এখানে রাষ্ট্রের কমপক্ষে ১৫টি অতি গুরুত্বপূর্ন স্থাপনা থাকলেও তা কখনো গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হয়নি।”
১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি বলেন, “ঘূর্ণিঝড়ের সাথে সমুদ্র থেকে উঠে আসা জলোচ্ছাসের কারনে এইসব প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিলো। এখনো স্বাভাবিকের চেয়েও বেশি মাত্রার জোয়ার হলে শহরে পানি চলে আসে।”
তিনি আরো বলেন, “ঘূর্ণিঝড়ের সাথে জলোচ্ছাস হলে রাষ্ট্রীয় এইসব প্রতিষ্ঠানের কি পরিণতি হবে তা একমাত্র আল্লাহ জানেন।”
এম এ লতিফ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “বিষয়টি জাতীয় সংসদেও একাধিকবার উত্থাপন করেছি, পানি উন্নয়ন বোর্ডকেও বিভিন্ন সময় চিঠি দিয়েছি কিন্তু কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
চট্টগ্রাম শহরসহ মোহনার উত্তর পাশে সমুদ্র ঘেষে আছে শহর রক্ষাবাঁধ। পতেঙ্গা থেকে কাট্টলী পর্যন্ত ২২ কিলোমিটারের বাঁধটি ১৯৯১ সালের ঘুর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসে বলতে গেলে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিলো। এরপর এটি ১৯৯২-৯৬ সালে পূননির্মাণ করা হয়। পূননির্মানের পর বাঁধটিতে বড় ধরনের কোন সংস্কার কাজ করা হয়নি। এই ছাড়া কর্ণফূলী নদীর তীর ঘেঁষে কোন বাঁধ নেই।
পানি উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রামের প্রধান প্রকৌশলী আশ্রাফ জামাল জানিয়েছেন, “শহর রক্ষা বাঁধের বেশ কয়েকটি স্থানে উচ্চতা কমে যাওয়ার পাশাপাশি গর্তও সৃষ্টি হয়েছে।”
বাঁধটি নির্মানের পর এর উপর দিয়ে কখনো পানি উপচে পড়েনি দাবি করে তিনি বলেন, “চট্টগ্রাম মহানগরীতে পানি প্রবেশ করে মূলত কর্ণফূলী নদী ও এর সংলগ্ন খালগুলো দিয়ে।”
তিনটি জ্বালানী তেল বিপননকারী প্রতিষ্ঠান পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার প্রধান সংরক্ষনাগার ছাড়াও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন বিপিসি’র মালিকানধীন দেশের একমাত্র জ্বালানী তেল শোধনাগার ইষ্টার্ণ রিফাইনারীও অবস্থিত কর্ণফ’লী নদীর তীর ঘেঁষে।
বিপিসি’র সচিব দীপক চক্রবর্তী বলেছেন, “তেল স্থাপনাগুলোর যেসব যন্ত্রপাতি সরানো যাবে সেগুলো সরিয়ে নেয়া শুরু হয়েছে।”
“শুধুমাত্র ঘুর্ণিঝড়ে তেমন কোন ক্ষতি হবেনা, তবে জলোচ্ছাস থাকলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশংকা বিবেচনায় রেখে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে” জানান তিনি ।
বিপিসির পরিচালক অপারেশান এস এম রেজওয়ান হোসাইন জানিয়েছেন, “কেপিআইগুলোতে যে ধরনের সতর্কতা নেওয়ার বিধান আছে সেই ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।”
তিনি আরো উল্লেখ করেন, “ঝড় জলোচ্ছাসের কারনে এইসব প্রতিষ্ঠানে ক্ষতির বিষয়টিতো আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।”
প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, শাহ আমানত বিমান বন্দরসহ অন্যান্য নৌ ও বিমান ঘাঁটিগুলোতে ঘুর্ণিঝড়ের মাত্রা অনুযায়ী মোকাবেলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
পতেঙ্গা এলাকায় রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো অরক্ষিত থাকার বিষয়টি ঘুর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়ার পর সরকারকে অবহিত করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।
সিটি মেয়র মনজুর আলম জানিয়েছেন, রাষ্ট্রীয় স্থাপনাগুলো রক্ষায় বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, আসন্ন ঘুর্ণিঝড় থেকে রক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে করণীয় সম্পর্কে নিজেদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
দীর্ঘ মেয়াদে এইসব প্রতিষ্টানগুলো রক্ষায় শহর রক্ষা বাঁধ শক্তিশালী করার পাশাপাশি কর্ণফূলী নদীর তীর ঘেঁষেও বাধ দিতে হবে বলে মনে করেন মেয়র মনজুর আলম।
এদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, বাঁধটি পূণনির্মাণের জন্য জাপানের সহায়তায় ১৭শ কোটি টাকার একটি প্রকল্প সরকারের বিবেচনাধীন আছে।