‘স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীকেই অংশ নেবে বিএনপি’
ঢাকা জার্নাল: দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিরোধিতা করলেও এই নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে বলে জানিয়েছেন দলটির ‘বুদ্ধিজীবী’ হিসেবে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ। ‘ফাঁকা মাঠে গোল দিতে দেওয়া হবে না`’ জানিয়ে তিনি আশা প্রকাশ করেন, ‘সঠিক এবং নিরপেক্ষ’ নির্বাচন হলে বিএনপি ৭০ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজয় অর্জন করবে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক স্মরণ সভায় তিনি এ কথা বলেন। বিশিষ্ট সাংবাদিক গিয়াস কামাল চৌধুরীর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী এবং প্রয়াত চলচ্চিত্রকার চাষী নজরুল ইসলামের স্মরণে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ‘জাতীয়তাবাদী দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও আন্দোলন’ নামের একটি সংগঠন।
এমাজউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিএনপি সব স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। দলীয় প্রতীকে নির্বাচনেও অংশ নেবে। ‘সঠিক ও নিরপেক্ষ’ নির্বাচন হলে বিএনপি ৭০ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজয় অর্জন করবে। আর অন্যায়ভাবে বিজয়কে কেড়ে নেওয়া হলে এর ভয়ঙ্কর ও তীব্র প্রতিক্রিয়া হবে। সেই প্রতিক্রিয়া সামলানোর শক্তি এই সরকারের থাকবে না।
তবে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে দুর্বল করবে বলেও মনে করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার এই ‘পরামর্শক’।
কেন্দ্রীয় সরকার ও স্থানীয় সরকারের মধ্যে পার্থক্য আছে উল্লেখ করে এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলেন, আগে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা, তারপর কেন্দ্রীয় সরকার। বাংলাদেশের সংবিধান যে সংবিধানকে সামনে রেখে তৈরি করা হয়েছিল, তা ব্রিটিশ সংবিধান। সেই ব্রিটেনেও স্থানীয় সরকারব্যবস্থা খুবই শক্তিশালী। সেখানে কেন্দ্রের কোনো হস্তক্ষেপ চলে না। কিন্তু বাংলাদেশে দলীয় প্রতীকে যে স্থানীয় নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে, তাতে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা দুর্বল করবে।’
তিনি বলেন, দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের অনেক অপকারিতাও আছে। এতে স্থানীয় অগ্রগতি বাধাগ্রস্তসহ নানা সংকট তৈরি হতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।
দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন সরকারের ‘চালাকি এবং ধূর্ততা’ আখ্যা দিয়ে এমাজউদ্দিন আহমেদ বলেন, ইচ্ছে করেই এই প্রক্রিয়ায় নির্বাচনের বিষয়টি আনা হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে ব্যক্তি পর্যায়কে দলীয় পর্যায়ে টেনে এনে কীভাবে বিজয় অর্জন করা যায় তার পরিকল্পনা।
তবে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের পরিবর্তন চান এমাজউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বে যারা আছেন এরা সমাজের উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তি। এই বয়সে এসে তাদের চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। কিন্তু তাদের দাসবৃত্তি মনোভব রয়ে গেছে। সেজন্য স্থানীয় এই নির্বাচনটিও সিটি করপোরেশনের মতো হতে পারে। তাই এই নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনের পরিবর্তন প্রয়োজন। তা না হলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকবে।
এই মুহূর্তে স্থানীয় সরকারের পরিবর্তে ‘সংকট নিরসনে’ জাতীয় নির্বাচন প্রয়োজন উল্লেখ করে খালেদা জিয়ার এই পরামর্শক বলেন, এখন স্থানীয় নির্বাচনে মনোযোগ না দিয়ে জাতীয় নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত ছিল। স্থানীয় সরকার নির্বাচন ছয় মাস পরে হলে সমস্যা ছিল না। কিন্তু সরকার ‘ভয়ঙ্কর’ ক্ষমতাসীন হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে এই নির্বাচনের আয়োজন করছে।
‘খুন-গুম আর ক্ষমতার অপব্যবহার করে দেশ থেকে আইনের শাসন বিতাড়িত করা হয়েছে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, সরকারের উচিত সংলাপের মাধ্যমে সব দলের অংশগ্রহণে একটি সঠিক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। সৎ পথে এগিয়ে জনস্বার্থ এবং জাতীয় স্বার্থে পদক্ষেপ নেওয়া। তা না হলে একসময় অবশ্যই এর প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। কারণ ক্ষমতা হলো স্বল্পস্থায়ী।
তিনি বলেন, ‘আশা করি, সরকারের শুভ বুদ্ধি উদয় হবে এবং জনস্বার্থে মনোযোগ দেবে।’
সম্প্রতি দুজন বিদেশি নাগরিক হত্যায় বিএনপিকে জড়িয়ে ক্ষমতাসীনদের দেওয়া বক্তব্যের সমালোচনা করে এমাজউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী কোনো কথা বললে তার মন্ত্রী-এমপিরা সেই কথার সূত্র ধরে কথা বলে যাচ্ছেন। বিদেশিদের নিরাপত্তা দিতে না পারা আমাদের জাতীয় ব্যর্থতা।
সরকার বিশেষ মহলের আশীর্বাদ পেতে দেশে মৌলবাদ ও সন্ত্রাসের কথা বলছেন বলেও অভিযোগ করেন এমাজউদ্দিন আহমেদ।
সাংবাদিক গিয়াস কামাল চৌধুরীর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী এবং চাষী নজরুল ইসলামকে স্মরণ করে তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে তিনি।
স্মরণ সভায় ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) সৈয়দ মো. ইব্রাহিম বীরপ্রতীক, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, এ বি এম মোশাররফ হোসেন, শাহ মো. আবু জাফর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম।
ঢাকা জার্নাল, অক্টোবর ২৩, ২০১৫।