সৌদি সেনাদের হাতে ৬০০ হাজির শাহাদত দিবস আজ

অক্টোবর ১২, ২০১৩

সৌদি সেনাদের হাতে ৬০০ হাজির শাহাদত দিবস আজ

ঢাকা জার্নাল: আজ ১২ অক্টোবর । আজ থেকে ২৭ বছর আগে এ দিনে  বিভিন্ন দেশের ৪০০ থেকে ৬০০ জন হজযাত্রী  পবিত্র হজ্বের  একটি ফরজ বা অবশ্য-পালনীয় অনুষ্ঠান হিসেবে কাফির-মুশরিকদের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা উচ্চারণের দায়ে সৌদি-ওয়াহাবি সেনাদের গুলিতে শহীদ হন। আহত হয়েছিলেন কয়েক হাজার হজযাত্রী। খবর তেরান রেডিও’র। 

দিনটি ছিল হিজরি সন অনুযায়ী ৬ ই জিলহজ, ১৪০৭, খ্রিস্টিয় তারিখ অনুযায়ী ১৯৮৭ সালের ২১ শে জুলাই।

ততকালীন সৌদি মন্ত্রী নায়েফ ইবনে আবদুল আজিজের নির্দেশে এই গণহত্যা চালানো হয়েছিল।

এই অনুষ্ঠান পালনের সময় হজযাত্রীরা মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য বৃদ্ধির আহ্বান জানাচ্ছিলেন এবং ইসলামের প্রধান শত্রুদের প্রতি বিশেষ করে, আমেরিকা ও অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করেন। তারা আমেরিকা ও ইসরাইল ধ্বংস হোক বলে শ্লোগান দিয়েছিলেন।

কিন্তু এইসব শ্লোগান ভাল লাগেনি রাজতান্ত্রিক সৌদি ওয়াহাবি সরকারের। ইসরাইল ও আমেরিকার বিরুদ্ধে শ্লোগানে তাদের বন্ধু সৌদি-ওয়াহাবিরা অপমান বোধ করেছে বা এর মধ্যে নিজেদের ভবিষ্যতের জন্য বিপদ দেখেছে। এ ছাড়াও তারা হয়তো ভেবেছিল এ ধরনের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশে দেশে ইরানের ইসলামী বিপ্লবের প্রভাব ছড়িয়ে পড়বে এবং আরব বিশ্বে সাম্রাজ্যবাদীদের লালিত সেবাদাস ও রাজতান্ত্রিক সরকারগুলোর পতন ঘটবে।

সৌদি-ওয়াহাবি সেনারা অতীতেও কাবা ঘরের ভেতরে বহু মুসলমানকে হত্যা করেছিল। এমনকি আহলে সুন্নাত আল জামাতের প্রখ্যাত অনেক আলেমসহ বহু সুন্নি মুসলমানদের হত্যা করতেও দ্বিধা বোধ করেনি সৌদি-ওয়াহাবিরা। (বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছ শামির ‘কিতাবুল বোগাত’ বইয়ে)

এর আগে অতীতে এমন জঘন্য কাজ করেছিল ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়া। 

সৌদি-ওয়াহাবিরা ১৯৭৯ সালেও সেই দেশেরই একদল বিপ্লবী যুবককে হত্যা করেছিল কাবা ঘর দখলের মিথ্যা অপবাদ দিয়ে। পবিত্র কুরআনের আয়াত মতে যারা কাবা ঘরে নিরাপত্তার জন্য আশ্রয় নেবে তারা নিরাপদ -ওয়া আমানাদাখালাহু কানা আমিনান। এ আয়াত অনুযায়ী কাবা ঘরে মানুষ হত্যা হারাম বা নিষিদ্ধ। আর এ জন্যই প্রাচীনকাল থেকে মক্কাকে বলা হত শান্তির নগরী।

উল্লেখ্য, বর্তমান যুগে ইসলামী জাগরণের অগ্রদূত ও ইরানের ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম ইমাম খোমেনী (র.) এবং ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী কাফির মুশরিকদের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা বা বারাআত নামক হজের  ফরজ কর্তব্যটি পালনের ওপর বিশেষভাবে জোর দিয়েছেন যাতে আমেরিকা ও ইসরাইলের জুলুমের বিরুদ্ধে দেশে দেশে মুসলমানদের মধ্যে জাগরণ ছড়িয়ে পড়ে।  

সুরা তওবার প্রথম আয়াতের নির্দেশ অনুযায়ী প্রতি বছর হজের সময় এই বিশেষ অনুষ্ঠানটি পালন করা হয়।  এই আয়াতে বলা হয়েছে, بَرَاءَةٌ مِنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ إِلَى الَّذِينَ عَاهَدْتُمْ مِنَ الْمُشْرِكِينَ

– সম্পর্কচ্ছেদ করা হল আল্লাহ ও তাঁর রসূলের পক্ষ থেকে সেই মুশরিকদের সাথে, যাদের সাথে তোমরা চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলে।

উল্লেখ্য, মহান আল্লাহর আদেশে এই আয়াতটি হজের অনুষ্ঠানে পড়ে শোনানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন বিশ্বনবী (সা.)। আর ওই নির্দেশের ভিত্তিতে  আমিরুল মুমিনিন আলী (আ.) তা পড়ে শোনান।   সেই থেকে পবিত্র মক্কায় ও কাবাঘরের আশপাশে কাফির-মুশরিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়েছিল।

পবিত্র কুরআনে সুরা মায়েদার ৫১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইহুদি ও খ্রিস্টানকে বন্ধু বানাবে না। তারা অর্থাত ইহুদি ও খ্রিস্টানরা পরস্পরের বন্ধু। আর যে তাদের সাথে মিতালী বা বন্ধুত্ব করবে সে অবশ্যই তাদের বলে গণ্য হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ জালিমদেরকে হেদায়াত করেন না।”

এই আয়াতের আলোকে ইহুদি ও খ্রিস্টানদের সঙ্গে বন্ধুত্বকারীরা হচ্ছে জালিম এবং আল্লাহ জালিমদেরকে সুপথ দেখাবেন না। এ কারণেই ইহুদি ও খ্রিস্টানদের বন্ধু সৌদি সরকার নিজেও সুপথে নেই ও মুসলমানদের প্রকৃত কোনো উপকার করতে পারছে না বলে অনেক ইসলামী বিশেষজ্ঞ ও তাফসিরকারক মনে করেন। 

নানা ঐতিহাসিক সাক্ষ্য প্রমাণে দেখা যায় সৌদি আরবের রাজতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠায় ব্রিটেনের সহায়তা ছিল। তুর্কি খেলাফতকে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করার জন্য সৌদি-ওয়াহাবিদেরকে ব্যবহার করেছিল ইংরেজরা। আর ইসরাইল প্রতিষ্ঠায় সৌদি রাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা প্রথম সৌদি রাজার সম্মতি ছিল। (এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন রেডিও তেহরানের সাম্প্রতিক প্রবন্ধ ‘সৌদি আরব নামের ইতিহাস ও ইসরাইল প্রতিষ্ঠায় ইবনে সৌদের ভূমিকা’।)

মক্কায়  হজযাত্রীদের ওপর সৌদি-ওয়াহাবিদের গণহত্যার নিন্দা জানিয়েছিলেন সারা বিশ্বের বিপ্লবী আলেম ও মুসলমানরা। অবশ্য সৌদি-ওয়াহাবিপন্থীরা এ ঘটনার নিন্দা জানায়নি। বাংলাদেশেও কথিত বড় মাপের  কোনো কোনো ইসলামী ব্যক্তিত্ব বা নেতা এই গণহত্যার নিন্দা জানানোর পরিবর্তে উল্টো ইরানের হজযাত্রীসহ বহু দেশের হজযাত্রীদের বিপ্লবী ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সেইসব ততপরতার নিন্দা জানিয়েছিলেন। সৌদি আরবের ওয়াহাবি রাজতান্ত্রিক সরকারের প্রতি তাদের বেশ সুধারণা ছিল বা এখনও আছে।

একটি হাদিস বা ইসলামী বর্ণনা অনুযায়ী আরব দেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠার পর বিশ্বনবী (সা.) এই অঞ্চলে কাফির মুশরিকদের প্রবেশ বা ততপরতা নিষিদ্ধ করেছিলেন। (আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস-রা. বর্ণিত ওই হাদিসে বিশ্বনবী-সা. বলেছেন, আরব ভূমি থেকে কাফির-মুশরিকদের বহিষ্কার কর। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস-রা. ছিলেন বিশ্বনবী-সা.-এর আপন চাচাতো ভাই) কিন্তু সৌদি রাজাসহ কয়েকটি আরব সরকার তাদের দেশে আমেরিকা ও ব্রিটেনকে সামরিক ঘাঁটি পর্যন্ত করতে দিয়েছে। তাই সমসাময়িক ইসলামী চিন্তাধারা সংস্থার প্রধান জাফর বাঙ্গাশসহ অনেক ইসলামী চিন্তাবিদ মনে করেন কাফির-মুশরিকদের এইসব বন্ধু তথা আরব রাজা-বাদশাহদের জবর-দখল ও স্বেচ্ছাচারী ততপরতার হাত থেকে অন্তত পবিত্র মক্কা ও মদীনাকে উদ্ধার বা রক্ষা করতে হবে এবং এইসব পবিত্র শহরের নেতৃত্ব অর্পণ করতে হবে মুসলিম বিশ্বের সর্বজনমান্য ন্যায়পরায়ন আলেমদের হাতে।

ঢাকা জার্নাল, ১২ অক্টোবর, ২০১৩।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.