‘সে দাগ সবার গায়ে ভালবাসার স্পর্শ নিয়ে বসে না’
জুলাই ২৪, ২০১৫ ঢাকা জার্নাল : নারীদের নানা সমস্যা সংসারের ভেতরে এবং বাইরে। তাদের জীবনের বেশিরভাগ চাহিদাই নির্ভর করে পূরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার মর্জির উপর। সে কারণে তার আর্থিক নিরাপত্তা সব সময়ই পরনির্ভরশীল এবং পরিবর্তনশীল। আর সমাজের অবক্ষয়তো চলছে অনেক দিন ধরেই।
এ অবস্থায় একজন নারীর সংসারের সব দায় যার নিজের ঘাড়ে, তার কীভাবে রাত ও দিনের হিসেব মেলে তা হয়ত একটি গল্পে তুলে আনা সম্ভব হয়না। তার পরেও কখনও কোনো বাস্তবতা নির্ভর গল্প বা লেখা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিতে পারে আমাদের সমাজে নারীর অবস্থান এখনও কতটা ঝুঁকির মধ্যে।
পড়ুন তামান্না সেতুর গল্পে। সেতু তার দেখা একটি বাস্তব জীবনের গল্প তুলে ধরেছেন ফেসবুকের মাধ্যমে। পাঠকের কাছে তা তুলে ধরা হল-
তামান্না সেতু : ভোরের বাসে আমি ময়মনসিং যাচ্ছিলাম। পাশের সিটের অপরিচিতা মেয়েটির মাথা বারংবার ঘুমের ভারে ভেঙ্গে পরছিল আমার কাঁধের ওপর।
মেয়েটি কাকলি থেকে বাসে উঠেছিল, আমি মহাখালি থেকে। মেয়েটির সাথে একটু ক্লোজ হয়ে বসে ওকে আরাম করে মাথাটা কাঁধে রাখার সুযোগ করে দিয়ে আমি পত্রিকা পড়ছিলাম।
কিছুক্ষণ পর সে বেশ আরাম করে মাথা রেখে ঘুমাতেই আমি তাকে একটু খুঁটিয়ে দেখলাম। ফর্সা, গোলগাল মুখ, চুলগুলো রুক্ষ লালচে, চোখের তলায় গাড় কালি। মেয়েটির গলায় এবং ঠোঁটের পাশের বেশ খানিকটা জায়গায় লালচে দাগ। এই দাগগুলোর বেশ সুন্দর একটা নাম আছে-“লাভ স্পট”। বিবাহিত বলে ওই দাগগুলো আমি চিনি। যদিও সে দাগ সবার গায়ে ভালবাসার স্পর্শ নিয়ে বসে না।
ঘুমের ভেতরেও মেয়েটি শক্ত হাতে তার কমদামি র্যাক্সিনের ব্যাগটি ধরে রেখেছিল।
আমি আরও একটু কাছ ঘেশে বসে ওর মাথাটা ঠিকভাবে আমার কাধে রাখতে দিলাম।
মিনিট পাঁচেক পরেই একটা জ্যামে গাড়িটা দাঁড়ালে, এক শশা বিক্রেতার ডাকে মেয়েটি তার ভ্যানিটি ব্যাগ খুলে শশা কেনার জন্য যখন টাকা দিচ্ছিল তখন আমি ভীষণ অভদ্রের মত আড় চোখে ওর ব্যাগের দিকে তাকালাম, সেখানে কিছু এমিটিশনের অরনামেন্ট এবং কয়েকটা কনডমের প্যাকেট।
আমি এতক্ষনের একটা হালকা ধারনার আরও একটু কাছাকাছি পৌছালাম।
ভীষণ ক্ষুধার্তের মত শসাটি খেয়েই দু’মিনিটের ভেতরেই মেয়েটি আবার আমার কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেলো।
ভালুকাতে বাস থেকে নামার কিছু আগে কন্ডাকটর ভাড়া নিতে আসলে মেয়েটি ঘুমন্ত দেখে আমি ব্যাগ খুলে ওর আর আমার ভাড়া দিতে গিয়েছি এমন সময় মেয়েটি জেগে উঠে পরিস্থিতি বুঝেই নিজের ভাড়া নিজেই এক রকম জোর করে দিয়ে দিল।
কন্ডাকটর চলে যেতেই বড় শান্ত গলায় একজোড়া মায়াবী চোখ তুলে মেয়েটি বলল “আপনার কান্ধে মাথা রাইখা ঘুমানোর জন্যউ কি টেকা নিমু আফা? এতই কি মরছি?”
ঢাকা জার্নাল, জুলাই ২৪, ২০১৫।