সাভারে নিখোঁজের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি !
ঢাকা জার্নাল: সাভারে ভবন ধসের কারণে ঠিক কতজন মানুষ এখনো নিখোঁজ তার সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়া লাশ গুমের অভিযোগ তুলেছেন। এছাড়া সেনাবাহিনী, ত্রাণ সংস্থা রেড ক্রিসেন্ট বা প্রশাসনের কাছ থেকেও এ ব্যাপারে নানা ধরনের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
বিরোধী নেত্রী তথা বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া গতকাল দাবি করেছেন প্রকৃত নিহত লোকের সংখ্যা সরকারি হিসেবের চেয়ে অনেক বেশি। এছাড়া লাশ গুম করে ফেলার অভিযোগও তুলেছেন তিনি।
অন্যদিকে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ১৪৯ জন নিখোঁজ রয়েছে বলে তথ্য দেয়া হয়েছিল, যদিও জেলা প্রশাসন বলছে তাদের তৈরি এই তালিকাকে প্রশাসন নিজেরাই গ্রহণযোগ্য বলতে রাজি নয়।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আজ নিখোঁজদের সঠিক পরিসংখ্যান দেওয়া সম্ভব না-হলেও আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা রেড ক্রিসেন্ট বলছে, তারা সন্ধানপ্রার্থীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে এখনও পর্যন্ত চারশো জনের নিখোঁজ থাকার তালিকা তৈরি করেছেন।
তারা ফোন করে সন্ধানপ্রার্থীদের কাছ থেকে নিখোঁজদের খোজ পাওয়া গেছে কিনা সে বিষয়ে যাচাই বাছাই করছে।
রেড ক্রিসেন্টের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১৮৯ জনকে ফোন করে কারো কারো স্বজনের খোঁজ মেলার কিংবা কারো মৃতদেহ পাওয়ার কথা জানা গেছে।
এদিকে রানা প্লাজার ধ্বংসস্তুপের নিচে নিখোঁজ থাকা লোকের সংখ্যা নিয়ে যখন বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য আসছে তখনও ভবনের আশে-পাশে বেশকিছু লোক নিখোঁজ স্বজনের মৃতদেহ না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করছেন।
তাদের দাবি ধ্বংসস্তুপের ভেতরে এখনো বহু সংখ্যায় মানুষের মৃতদেহ চাপা পড়ে আছে। স্বজনের খোজে আসা কেউ কেউ বলছিলেন ঘটনাস্থল, বিভিন্ন হাসপাতাল, মর্গ কোথাও গিয়ে তারা লাশের হদিস পাচ্ছেন না।
কেউ বলছেন লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে তারা কখনো ছুটছেন হাসপাতালে, কখনো যাচ্ছেন অধরচন্দ্র স্কুলের মাঠে কিন্তু লাশ মিলছে না।
কেউ দাবি করছেন ভবনটির পেছনের দিকে সে সিঁড়ি সেখান দিয়ে নামতে শুরু করেছিলেন অনেকে – কিন্তু পেছনের ওই অংশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেখানে চাপা পড়া অনেকের মৃতদেহ এখনো বের করা যায়নি।
তাদের দাবি, সেখানে কয়েকশো লোক আটকা পড়ে নিহত হয়েছে। সন্ধানপ্রার্থীরা সেখানে দ্রুত উদ্ধারকাজ চালানোর দাবি জানাচ্ছেন।
এই উদ্ধারকাজের সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করছে সেনাবাহিনী। তারা কিন্তু মনে করছে ভেতরে খুব বেশি মৃতদেহ নেই।
সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের ৮১ ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সিদ্দিকুল আলম শিকদার বলেছেন উদ্ধারকাজের এই পর্যায়ে এসে তাদের এখন সে রকমই ধারণা।
তিনি বলছেন, ‘পেছন দিক থেকে এরই মধ্যে মৃতদেহ বের করে আনা হয়েছে। এখন আমি বলবো ভেতরে খুব বেশি মৃতদেহ হয়তো নেই। আমরা ধীরে ধীরে ভেতরের দিকে চলে যাচ্ছি। দুই, তিন এবং চারতলায় এর আগে ম্যানুয়ালি সার্চ করা হয়েছে, সুতরাং সেখান থেকে অনেক মৃতদেহ বের হয়েছে আগেই’।
গতকাল সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে নিখোঁজদের সংখ্যা হিসেবে ১৪৯জনের তালিকার উল্লেখ করা হয়েছিল। তারা বলেছিল এটি জেলা প্রশাসনের তৈরি তালিকা । যদিও জেলা প্রশাসক বলছেন এই তালিকাকে গ্রহণযোগ্য বলা যাবে না।
কারণ তারা সন্ধানপ্রার্থীদের তালিকা করার উদ্যোগ নিয়েছিল, কিন্তু ১৪৯ জনের তালিকা করার পর বেশ কিছু জটিলতার কারণে শেষ পর্যন্ত তা সম্পন্ন করেনি জেলা প্রশাসন।
ঢাকার জেলা প্রশাসক শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, ‘একদিন আমার কন্ট্রোল রুমে একটি রেজিস্ট্রার রাখা হয়েছিল সেখানে জনগণ এসে ১৪৯ জনের নাম লিখেছিল। কিন্তু এমনও হয়েছে একটি নাম আটবার এসেছে। অতএব এই তালিকা তো গ্রহণযোগ্য কোনও তালিকা নয়।’
ফলে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, ‘আপাতত আমরা এই তালিকা আর করছি না। অতএব যাচাই বাছাই না করে এটি বলা উচিত নয়। তাছাড়া বিভিন্নভাবে লোকজনকে বিভ্রান্ত করে আমাদের এখানে নাম লেখানো হচ্ছে।’
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভবনের ভেতরে পোশাক কারখানাগুলোতে কতজন কর্মকর্তা কর্মচারী ছিল সে তথ্য চাওয়া হয়েছিল বিজিএমইএর কাছে। কিন্তু তারা তা এখনো দেয়নি।
একই কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক শেখ ইউসুফ হারুন নিজেও। ফলে প্রকৃত হতাহত কিংবা নিখোঁজদের তালিকা করা জটিল হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, ‘বিজিএমইএকে পত্র দিয়েছি ওই দিন যে সমস্ত শ্রমিক ৫টি কারখানায় কাজ করেছিল কিংবা আগের দিন যারা কাজ করেছিল তাদের তালিকা আমাদের সরবরাহ করার জন্য। যদি সেটি পাই তাহলে একটি বস্তুনিষ্ঠ এবং নির্ভরযোগ্য তালিকা আমরা করতে পারবো’।
এদিকে শুরু থেকেই উদ্ধার তৎপরতার নানা কার্যক্রমের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করছে আন্তর্জাতিক সংস্থা রেড ক্রিসেন্ট। তারা সন্ধানপার্থী ব্যক্তিদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে নিখোঁজদের একটি তালিকা তৈরি করেছে।
এই কার্যক্রমটি তদারকি করছেন সংস্থার অনুসন্ধান বিভাগের কর্মীরা। রেড ক্রিসেন্টোর ঢাকা যুব ইউনিটের প্রধান আব্দুস সবুর পিলু জানান, তাদের করা হিসেব মোতাবেক চারশো জন নিখোঁজ রয়েছে।
‘আমরা সন্ধানপ্রার্থীদের ফোন নম্বর রেখে দিয়েছি এবং এখন সেই তালিকা অনুসারে সন্ধান প্রার্থীদের কাছে ফোন করে খোঁজ নেয়া শুরু হয়েছে, পরিবারের নিখোঁজ ব্যক্তিটির সন্ধান পাওয়া গেছে কি-না। মৃতদেহ পাওয়া গেছে নাকি সে আহত আছে-এসব খোঁজ নেয়া হচ্ছে’, বলেন আব্দুস সবুর পিলু।
এদিকে নয়দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো ধ্বংসস্তুপের ভেতর থেকে মৃতদেহ বের করে আনা হচ্ছে এবং উদ্ধারকাজের সংশ্লিষ্টরা বলছেন নিখোঁজ যতক্ষণ পর্যন্ত ভেতরে মৃতদেহ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত উদ্ধার তৎপরতা চলবে।