সাত অভিযোগের মধ্যে পাঁচ অভিযোগ প্রমাণিত’
ঢাকা জার্নাল- একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মোহাম্মদ কামারুজ্জামান বৃহত্তর ময়মনসিংহে আলবদর বাহিনীকে সংগঠিত করেন।এই জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে সাত অভিযোগের মধ্যে হত্যা, গণহত্যা ও নির্যাতনের পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে রায়ে উল্লেখ করেন ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান।
বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ কামারুজ্জামানের মামলার রায়ের সংক্ষিপ্তসার পড়ে শোনান তিনি।
এই বিচারক বলেন, প্রসিকিউশন অভিযোগে বলেছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর পর পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতা করতে বৃহত্তর ময়মনসিংহে যে আলবদর বাহিনী গড়ে তোলা
হয়, কামারুজ্জামান ছিলেন তার ‘চিফ অর্গানাইজার’।এর পক্ষে প্রসিকিউটররা দৈনিক সংগ্রামের সেই সময়ের একটি প্রতিবেদনও উপস্থাপন করেন, যে পত্রিকাটি জামায়াতে ইসলামের মুখপত্র হিসাবে পরিচিত।
বিচারক বলেন, আসামির আইনজীবীরা প্রসিকিউশনের এ বক্তব্য খণ্ডাতে পারেননি।
কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে আনা সাত অভিযোগের প্রথমটিতে প্রসিকিউশন বলেছে,
তার নেতৃত্বেই একাত্তর সালের ২৯ জুন শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী থানার কালীনগর গ্রামে ফজলুল হকের ছেলে বদিউজ্জামানকে রামনগর গ্রামের আহম্মদ মেম্বারের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায় আলবদর বাহিনীর সদস্যরা। এরপর তাকে নির্যাতন করে আহম্মদনগরের রাস্তার ওপরে গুলি করে হত্যা করা হয়। পরে লাশ টেনে নিয়ে কাছাকাছি কাঠের পুলের নিচে পানিতে ফেলে দেওয়া হয়।
রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলে, “বদিউজ্জামানকে অপহরণ করেছে আল বদর বাহিনী। তাই এ ক্রিমিনাল লায়াবিলিটি কামারুজ্জামান এড়াতে পারেন না।”
এই অভিযোগের পাশাপাশি একাত্তরের ২৫ জুলাই শেরপুরের নালিতাবাড়ি উপজেলার সোহাগপুর গ্রামে গণহত্যা ও শেরপুর কলেজের তৎকালীন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ আব্দুল হান্নানকে নির্যাতন এবং ২৩ অগাস্ট গোলাম মোস্তফা তালুকদারকে গুলি করে হত্যা এবং টেপা মিয়ার বাড়ি ঘেড়াও করে তার ছেলেসহ ৫ জনকে হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তবে একাত্তরে রমজান মাসের মাঝামাঝি সময়ে লিয়াকত আলীসহ ১১ জনকে হত্যা এবং নভেম্বরে দিদারসহ কয়েকজনকে ময়মনসিংহ জেলা পরিষদ ডাকবাংলোয় ধরে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ প্রসিকিউশন সন্দেহতিতভাবে প্রমাণ করতে পারেনি বলে রায়ে উল্লখ করা হয়।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ৫ মিনিটে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে ট্রাইব্যুনালের এজলাসে হাজির করার পর বিচারকরা এজলাসে বসেন।
দুই পক্ষের আইনজীবীদের ধন্যবাদ দিয়ে মামলার ইতিবৃত্ত সংক্ষেপে তুল ধরেন এই ট্রাইব্যুনালের প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
এরপর ১১টা ২১ মিনিটে জনাকীর্ণ আদালতে রায়ের সংক্ষিপ্তসার পড়া শুরু করেন ট্রাইব্যনালের সদস্য বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম।
পুরো রায় ২১৫ পৃষ্ঠার হলেও এর সংক্ষিপ্ত সার ৬২ পৃষ্ঠার। বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া রায়ের দ্বিতীয় অংশ পড়ার পর ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান চূড়ান্ত আদেশ দেবেন।
সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট পরিহিত কামারুজ্জামান আদালত কক্ষে প্রবেশের পর কোনো দিকে না তাকিয়ে সোজা এজলাসে আসামির জন্য নির্ধারিত স্থানে চলে যান। এ সময় তার চুলগুলো তেল দিয়ে আঁচড়ানো দেখা যায়। তার মাথায় টুপি ছিল না।
রায় উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই সাংবাদিক, আইনজীবীসহ বিশিষ্টজনরা ট্রাইব্যুনালে আসতে শুরু করেন। সাড়ে ৯টার দিকে কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে নিয়ে আসা হয় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামানকে। আগের দিন সন্ধ্যায় তাকে কাশিমপুর কারাগার থেকে ঢাকায় নিয়ে আসে কারা কর্তৃপক্ষ।
ট্রাইব্যুনালের তিন সদস্য বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি মো. মুজিবুর রহমান মিয়া ও শাহিনুর ইসলামও আদালতে পৌঁছান সকাল ১০টার দিকে।
বেলা পৌনে ১১টার দিকে জাতীয় পতাকা ও সংগঠনের পতাকা নিয়ে ট্রাইব্যুনালের সামনে পৌঁছান মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিরের সদস্যরা। কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল হেলাল মোর্শেদ খান তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন তারা।