সঠিক, সুস্থ জীবনযাপন ব্যাহত করতে পারে উচ্চ রক্তচাপ

এপ্রিল ২৮, ২০১৩

Blood-pressure-test-007ঢাকা জার্নাল: মহামারি আকারে যেন ছড়িয়ে পড়ছে উচ্চ রক্তচাপ৷ বর্তমানে সারা বিশ্বে কমপক্ষে ১৫০ কোটি মানুষ এ সমস্যায় ভুগছে৷ কিন্তু উচ্চ রক্তচাপের সেই অর্থে সংকটজনক কোনো লক্ষণ না থাকায় – একে গুরুত্ব দিচ্ছেন না অনেকেই! কী হচ্ছে তার ফল?

উচ্চ রক্তচাপ কোনো রোগ নয়, বরং অন্য কিছু রোগের উপসর্গ মাত্র৷ তারপরও উচ্চ রক্তচাপ যদি কোনো ব্যক্তির শরীরে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে, তবে তা হয়ে উঠতে পারে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ৷

জার্মানির ম্যুনস্টার হাসপাতালের অন্যতম হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ হান্স-ইয়র্গ হিপ্পে জানান, ‘‘অন্যান্য রোগের মতো উচ্চ রক্তচাপ শরীরের বিশেষ কোনো অঙ্গে হয় না৷ অথচ মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা স্ট্রোক, হাইপারটেনসিভ এনসেফালোপ্যাথি, প্যারালাইসিস, হৃৎপিন্ড বড় হয়ে যাওয়া, হার্ট অ্যাটাক, করোনারি হার্ট ডিজিজ, রেনাল ফেইলর, চোখের রেটিনায় জটিলতা – এসব কিছুই উচ্চ রক্তচাপের কারণে হতে পারে৷” মজার বিষয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ সমস্যাকে হাল্কাভাবে নেওয়ার কারণেই দেখা দেয় জটিলতা৷

এর কারণ, উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণগুলিকে আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে খুব সাধারণ৷ এই যেমন, সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর মাথা ব্যথা, ঘাড় ব্যথা, চোখে ঝাপসা দেখা বা দেখতে অসুবিধা হওয়া, রাতে ঘুমাতে না পারা, মেজাজ খারাপ থাকা৷

ডাক্তারদের পরিভাষায়, রক্তচাপ বা ‘ব্লাড প্রেশার’ হচ্ছে রক্ত কর্তৃক ধমনির অর্থাৎ আর্টারির গায়ে প্রয়োগ করা চাপ৷ সহজ করে বলতে গেলে, শরীর ও মনের স্বাভাবিক অবস্থায় রক্তচাপ যদি বয়সের জন্য নির্ধারিত মাত্রার ওপরে অবস্থান করে, তবে তাকে উচ্চ রক্তচাপ বলে৷ একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির ক্ষেত্রে যখন ‘সিস্টোলিক’ রক্তচাপ ১৪০ মি.মি. পারদ চাপের ও ‘ডায়াস্টোলিক’ রক্তচাপ ৯০ মি.মি. পারদ চাপের বেশি হয় – তখন তাকে উচ্চ রক্তচাপ বলে চিহ্নিত করা হয়৷ সাধারণত, দুটি কারণে এ সমস্যা দেখা দিতে পারে…

প্রাইমারি উচ্চ রক্তচাপ

উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ৯০-৯৫ শতাংশ রোগীদের ক্ষেত্রে এর কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না৷ একে ‘প্রাইমারি উচ্চ রক্তচাপ’ বলে৷ জেনেটিক কারণ অথবা পারিবারিক উচ্চ রক্তচাপের ইতিহাস, স্থূল ও মেদবহুল শরীর, ধূমপান, বেশি লবণ খাওয়া, অতিরিক্ত মদ্যপান করা এর কারণ হতে পারে৷

সেকেন্ডারি উচ্চ রক্তচাপ

অন্য কোনো রোগের উপস্থিতির কারণে এটা হয়ে থাকে৷ এর মধ্যে কিডনিজনিত রোগ, হরমোনগ্রন্থিজনিত রোগ, রক্তনালীর জন্মগত ত্রুটি, গর্ভধারণজনিত জটিলতা এবং দীর্ঘ দিন বিশেষ কোনো ওষুধ সেবন করা – যেমন লবণযুক্ত কোনো ওষুধ, জন্ম নিয়ন্ত্রণের বড়ি, স্টেরয়েড ইত্যাদি৷

জার্মান হার্ট ফাউন্ডেশনের মুখপাত্র হ্যারিব্যার্ট ব্র্যুক বলেন, ‘‘সময় থাকতে এই সমস্যা ধরা গেলে এবং তা নিয়ন্ত্রণে কিছু নিয়মকানুন মেনে চললে, যে কোনো মানুষ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে সক্ষম হবেন৷ এমনকি সেক্ষেত্রে, ওষুধেরও কোনো প্রয়োজন পড়বে না৷” তাই ব্র্যুক’এর কথায়, উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধের উপায়গুলি হলো – ওজন কম রাখা, দিনে অন্তত ৩০ মিনিট করে হাঁটা, খেলাধুলা, সাঁতার কাটা বা অন্য শারীরিক পরিশ্রমের অভ্যাস করা, ধুমপান থেকে বিরত থাকা, কাঁচা লবণ না খাওয়া এবং দুশ্চিন্তা পরিহার করা৷

অর্থাৎ, সুস্থ জীবনযাপনই উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধের মোক্ষম ওষুধ৷ অবশ্য তার জন্য সবচেয়ে আগে প্রয়োজন সচেতনতার৷

সূত্র: ডয়েচে ভেলে

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.