সংসদেই সমাধান: স্পিকার

জুন ৪, ২০১৩

Shirin-shirmin20130603080921ঢাকা জার্নাল: স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, সংসদীয় গণতন্ত্রের কেন্দ্র জাতীয় সংসদে আলোচনার মাধ্যমেই যে কোনো রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান সম্ভব। সোমবার নবম জাতীয় সংসদের ১৮তম অধিবেশনের উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

স্পিকার বলেন, “গণতন্ত্রের ভিত্তি সুসংহত করতে হলে সরকারি ও বিরোধী দলের মধ্যে সমঝোতা ও সমন্বয় থাকা আবশ্যক।

বাংলাদেশের প্রথম নারী স্পিকার হিসেবে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেওয়ার জন্য সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়াসহ সব সংসদ সদস্যকে ধন্যবাদ জানান স্পিকার।

শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, “গণতন্ত্রের অব্যাহত অগ্রযাত্রা সুসংহত করার মধ্য দিয়ে সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা, আইনের শাসন ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে সংসদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সংবিধানের আলোকে শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা, সব নাগরিকের জন্য রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামগ্রিক লক্ষ্যে স্বাধীনতা এবং সুবিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারি দল, বিরোধী দলসহ সব সদস্যকে ভুমিকা রাখতে হবে। গণতন্ত্রের ভিত্তি সুসংহত করতে হলে সরকারি ও বিরোধী দলের মধ্যে সমঝোতা ও সমন্বয় থাকা আবশ্যক।”

বিরোধী দলকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “আপনাদের অব্যাহত উপস্থিতি, গঠণমূলক ভুমিকা, সংসদ অধিবেশনের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ সংসদকে প্রাণবন্ত ও অধিক কার্যকর করে তুলবে।”

প্রথমবারের মতো একজন নারীকে স্পিকার নির্বাচিত করাকে বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নে এক অনন্য দৃষ্টান্ত ও মাইলফলক হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন, “সংসদীয় গণতন্ত্রের কেন্দ্র জাতীয় সংসদে জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে সব সংসদ সদস্যের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে গণমানুষের আশা আকাঙ্খা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সংসদীয় গণতন্ত্র বিকশিত হবে।”

গণতন্ত্র চর্চার কথা উল্লেখ করে স্পিকার বলেন, “গণতন্ত্রে মতপার্থক্য থাকা কেবল স্বাভাবিক ও গ্রহণযোগ্যই নয়, বরং সুষ্ঠু গণতন্ত্র চর্চার ক্ষেত্রে অনেকাংশে প্রয়োজনীয়। তবে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে মতপার্থক্য ও ভিন্নতা আলোচনার মধ্য দিয়ে নিরসন সম্ভব। এজন্য জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলা প্রয়োজন।”

তিনি বলেন, “সংসদীয় গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় সংবিধান ও কার্য প্রণালী বিধির আলোকে গড়ে ওঠা পদ্ধতির গুরুত্ব অপরিসীম। এই কাঠামোর আওতায় অর্থবহ বিতর্ক, আলোচনা, গঠনমূলক সমালোচনা গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়।”

স্পিকার বলেন, “চলতি অধিবেশনে ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপিত হবে। আগামী অর্থবছরে জনকল্যাণে যেসব কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে সেগুলোর রূপরেখা সম্বলিত এই বাজেট। সামগ্রিকভাবে রাজস্ব আয়-ব্যয় এবং সামস্টিক অর্থনীতির প্রতিফলন ঘটবে এই বাজেটে।”

তিনি বলেন, “বাজেট কেবল আয় ব্যয়ের হিসাব নয়, সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনার চিত্র। আমাদের সুচিন্তিত মহামত, গঠনমূলক আলোচনা, সমালোচনা, বিশ্লেষণ ও মূল্যবান দিক নির্দেশনার মধ্য দিয়ে জনগণের আশা আকাঙ্খার বাস্তবায়ন ঘটবে এবং বাজেট সার্বিকভাবে অর্থবহ ও বাস্তবমুখী হবে।”

স্পিকার বলেন, “অপার সম্ভাবনার বাংলাদেশের মূল শক্তি হচ্ছে জনগণ। নারী, পুরুষ, তরুণ ও শিশু সবাই। নারীরাও আজ পুরুষের পাশাপাশি বিভিন্ন কর্ম ও পেশায় দৃশ্যমানভাবে অংশ গ্রহণ করছেন। জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ব মন্দার মধ্যেও দেশের অর্থনীতির সূচক, প্রবৃদ্ধিও হার, রিজার্ভ, রেমিটেন্স সব ইতিবাচক। মানব সম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র, মাতৃত্ব ও শিশু মৃত্যুও হার হ্রাস, শিক্ষা ক্ষেত্রে জেন্ডার সমতা, সার্বিকভাবে নারীর ক্ষমতায়ন ও দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশের সাফল্য রয়েছে। দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পথে। আমাদের সন্তানরা হিমালয় জয় করেছে। আসুন, আমরা সম্মিলিতভাবে উন্নয়নের এই অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিয়ে যাই।”

ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, “আলোচনার মাধ্যমে যে কোনো রাজনৈতিক সংকট ও জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মত পার্থক্যের গ্রহণযোগ্য সমাধান আমরা করতে পারি বলে বিশ্বাস করি। জাতীয় সংসদকে অর্থবহ ও কার্যকর করে তোলা আমাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব। স্পিকার হিসেবে এ দায়িত্ব আমি আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালনের জন্য সচেষ্ট থাকবো।”

সংসদ পরিচালনায় আমি আপনাদের সবার অব্যাহত সার্বিক সহযোগিতা একান্তভাবে কামনা করছি। আপনাদের সমর্থন, সহযোগিতা আমার দায়িত্ব পালন ও চলার পথে সহায়ক হবে।”

ঢাকা জার্নাল, জুন ৩, ২০১৩।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.