সংসদীয় পদ্ধতির আদলে স্থানীয় সরকার কাঠামোর দাবি

মার্চ ৫, ২০১৪

MMCঢাকা জার্নাল : সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের ভূমিকার জন্য স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করার দাবি জোরালো হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীও এ ব্যবস্থা সংস্কারের ওপর জোর দিয়েছেন। এমনকি দলীয়ভাবে নির্বাচন করার পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও বলেছেন তিনি।

তবে কাঠামোগত পরিবর্তন না করে দলীয়ভাবে নির্বাচন করলেও স্থানীয় সরকার শক্তিশালী হবে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের দাবি সংসদীয় পদ্ধতি অনুসরণ করে নির্ববাচন ও অন্যন্য ব্যবস্থা রেখে আইন করে স্থানীয় সরকার কাঠামো তৈরী করতে হবে।

মঙ্গলবার ‘স্থানীয় সরকার সাংবাদিকতা : অগ্রগতি ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা তাদের মতামত তুলে ধরেন।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ। মূল আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. গোলাম রহমান, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা সহযোগী অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস এবং সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট এন্ড কো-অপারেশন (এসডিসি)-এর সিনিয়র প্রগ্রাম অফিসার লুবনা ইয়াসমিন। এছাড়া সেমিনারে আরও অংশ নেন বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের স্থানীয় সরকার বিটের সাংবাদিকরা।

সেমিনাওে সূচনা বক্তব্য রাখেন প্রেস ইনস্টিটিউটের (পিআইবি) মহাপরিচালক ও সাংবাদিক শাহ আলমগীর। আর সঞ্চালনা করেন মাস-লাইন মিডিয়া সেন্টারের (এমএমসি) কামরুল হাসান মঞ্জু।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও সাংবাদিকতার বিশকাশ হয়েছে। আর নেতিচাচক সংবাদ প্রকাশ ও প্রচারের প্রাধান্য থাকলেও সাংবাদিকদেও ভূমিকার কারণে স্থানীয় সরকার নিয়ে সাংবাদিকতার উন্নয়ন হয়েছে। আর এ কারণেই স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালী ও কাঠামো সংস্কারের দাবি জোরালো হচ্ছে। সুশীল সমাজ ও সাংবাদিকরা যেভাবে ভূমিকা রাখছে তা এই দাবি বাস্তবায়ন তরান্বিত হবে।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম স্থানীয় সরকার সংস্কারের কথা বলেছেন। আইন সংস্কার করে দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের কথা বলেছেন।
সৈয়দ আশরাফের সংস্কার করার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্ববাচন করা জরুরি। তবে স্থানীয় সরকার কাঠামো পরিবর্তন না কওে দলীয়ভাবে নির্ববাচন কোনো সুফল বয়ে আনবে না।

তার মতামত তুলে ধরে ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলে স্থানীয় পর্যায়ে সুশাসন নিশ্চিত হবে। জবাবদিহীতা তৈরী করবে। তবে শুধু চেয়ারম্যান বা মেয়রের ক্ষমতা সর্বস্ব স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা থাকলে এর কিছুই হবে না। সংসদ সদস্যসের অনুমোদন ছাড়া কোনো উন্নয়ন কর্মকা-ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা না থাকলে স্থানীয় সরকার শক্তিশালী হওয়া তো দূরের কথা, আরও অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। স্থানীয় সরকারে নির্বাহি বিভাগের পাশপাশি লেজিসলেটিভ বিভাগকেও সক্রিয় করতে হবে।

স্থানীয় পর্যায়ে উন্নয়নের জন্য জেলা পরিষদ, পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদ স্থানীয় সরকারের কাজ করলেও সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থা সমন্বয়ের ক্ষেত্রে। উপজেলা পরিষদ অর্থ বরাদ্দের কাজ ছাড়া আর কোনো কিছুই করতে পাওে না।

সেমিনারে স্থানীয় সরকার কাঠামোর সংস্কারের দাবি তুলে ধরে তিনি বলেন, বর্তমান পদ্ধতিতে সংরক্ষিত মহিলা সদস্য আর সদস্যরা কোনো ভূমিকা রাখতে পারে না উন্নয়ন কাজে। চেয়ারম্যানের চাইতে সদস্যদের ক্ষমতার বিরাট ফারাক থাকায় প্রকল্প পেলেই সন্তুষ্টু থাকেন সদস্যরা। এ ছাড়া আর তাদের কোনো কিছু করারও নেই।

দলীয়ভাবে নির্ববাচনের প্রয়োজনীয়তা ও নতুন স্থানীয় সরকার কাঠামোর নমুনা তুলে ধরেন ড. তোফায়েল আহমেদ। মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রধান ব্যক্তি মেয়র বা চেয়ারম্যান হতে হলে তাকে আগে সদস্য বা কাউন্সিলর হবে হবে এমন বিধান করা জরুরি। তাহলে যোগ্যতম সদস্য বা কাউন্সিল নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। জবাবদিহীতাও নিশ্চিত হবে।

দলীয়ভাবে নির্ববাচন আইয়ূব খানের মৌলিক গণতন্ত্রমূখী হবে কিনা এমন আলোচনায় বিশেষজ্ঞরা বলেন, ওই সময়ের মৌলিক গণতন্ত্র আসলে কোনো গণতন্ত্র ছিলা না। সেটি ছিল একনায়কতন্ত্র। নির্বাচিত ৮০ হাজার মানুষ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করার বিধান ছিল তখন। যা বলা হতো ৮০ হাজার ফেরেস্তারাই সব করবে।
(বিস্তারিত পরে দিচ্ছি।)

দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাংবাদিকতা বিভাগে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা বিষয় অন্তভূূক্ত করার দাবি উত্থাপন করেন সেমিনারে অংশগ্রহণকারিরা। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অ্যধাপক ড. গোলাম রহমান এবং সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট এন্ড কো-অপারেশন (এসডিসি)-এর সিনিয়র প্রগ্রাম অফিসার লুবনা ইয়াসমিন শুধু সাংবাদিকতা বিভাগেই নয়, এ বিষয়ে সাধারণ শিক্ষার প্রয়োজনে শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকেই স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা নিয়ে বিষয় থাকা দরকার।

স্থানীয় সরকার সাংবাদিকতায় পুরস্কার পেলেন ৫ সাংবাদিক

স্থানীয় সরকার সাংবাদিকতায় পুরস্কার পেয়েছেন তিন সাংবাদিক।মাস-লাইন মিডিয়া সেন্টার-এমএমসি স্থানীয় সরকার সাংবাদিকতা পুরস্কার- ২০১৩ পুরষ্কারর দেওয়া হয় রাজশাহী ও সিলেট বিভাগের ৫জন সাংবাদিককে।

বেসরকারি গণমাধ্যমভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা এমএমসি ও পিআইবি’র যৌথ আয়োজনে পিআইব সেনিার কক্ষে অনুষ্ঠিত ‘স্থানীয় সরকার সাংবাদিকতা: অগ্রগতি ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক একটি সেমিনারে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়।

সেরা প্রতিবেদন ক্যাটাগরিতে রাহশাহী থেকে প্রকাশিত দৈনিক সোনারদেশ পত্রিকার মোস্তাকিমা তাবাসসুম নিতু, দৈনিক সাইনশাইন পত্রিকার ফেরদৌস সিদ্দিকী ও সিলেট থেকে প্রকাশিত দৈনিক সবুজ সিলেট প্রতিকার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুনকে পুরস্কার পেয়েছেন।

বিশেষ প্রতিবেদন ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছেন দৈনিক সবুজ সিলেট’র প্রণীত রঞ্জন দেবনাথ ও দৈনিক তরফবার্তা, এম এ আহমেদ আজাদ।

পুরস্কার হিসেবে সেরা তিন প্রতিবেদকের প্রত্যেককে ১৫ হাজার টাকা, একটি ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে। অন্য দুই প্রতিবেদককে একটি ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়।

বিজয়ী প্রতিবেদকদের পুরস্কারের ক্রেস্ট, সম্মানী এবং সার্টিফিকেট প্রদান করেন সেমিনারে উপস্থিত প্রেস ইনস্টিটিউটের (পিআইবি) মহাপরিচালক ও সাংবাদিক শাহ আলমগীর, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. গোলাম রহমান এবং সহযোগী অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট এন্ড কো-অপারেশন (এসডিসি)-এর সিনিয়র প্রগ্রাম অফিসার লুবনা ইয়াসমিন এবং মাস-লাইন মিডিয়া সেন্টারের (এমএমসি) কামরুল হাসান মঞ্জু।

ঢাকা জার্নাল,মার্চ ৫, ২০১৪।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.