যুক্তরাষ্ট্রে ডেসটিনির ৪ মিলিয়ন ডলার পাঁচারের সন্ধান

মে ১৩, ২০১৩
34602_Destine-Doduk
ঢাকা জার্নাল: মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) নির্ভর ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ডেসটিনি গ্রুপের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে পাচারকৃত প্রায় ৪ মিলিয়ন ডলারের সন্ধান পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৩৩ কোটি টাকা। একই সঙ্গে হংকং ও কানাডায়ও ডেসটিনির অর্থ পাচারের তথ্যের তদন্ত চলছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক কর্মকর্তা  জানান, কয়েকদিন আগে আমেরিকায় ডেসটিনির প্রায় ৪ মিলিয়ন ডলারের সন্ধান পাওয়া গেছে। আমাদের আইন উপদেষ্টার মাধ্যমে এ বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।

অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে তিনি বলেন, যেহেতু এটা মানিলন্ডারিং আইনের বিষয় তাই পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে আসামির বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ প্রথমে প্রমাণ করতে হবে। এরপর এটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে তা দেশে ফেরত আনার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে।

দুদক সূত্রে জানা যায়, ডেসটিনি গ্রুপ্রের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান বেস্ট এয়ারের নামে এ টাকা পাচার করা হয়েছে। যা আমেরিকার এটলাস এভিয়েশন নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে  পাঠানো হয়। উল্লিখিত অর্থ দুইবারে পাঠানো হয়। প্রথমে  সাড়ে ৩ মিলিয়ন ডলার এবং পরে দশমিক ৬৭ মিলিয়ন ডলার পাচার করা হয়।

অনুসন্ধান কর্মকর্তা জানান, ডেসটিনির অর্থ শুধু যুক্তরাষ্ট্রে নয় সিঙ্গাপুর, চীন, ফ্রান্স, কানাডায়ও পাচার হয়েছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের এটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠিয়েছে দুদক। কিন্তু সেসব দেশ থেকে এখন পর্যন্ত পর্যাপ্ত সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। তাই ডেসটিনির কর্মকর্তাদের আত্মসাত করা অর্থ অনুসন্ধানে বিশেষ করে ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল আমীনের কাছে থাকা অর্থের খোঁজে নতুন কৌশলে অনুসন্ধান চালাচ্ছে দুদক টিম।

এর আগে তার যুক্তরাষ্ট্রের একটি ব্যাংকেও টাকা থাকার কথা জানতে পেরেছে দুদক। দুদক সূত্র জানায়, সিঙ্গাপুরে দুটি অ্যাকাউন্টে অর্থ পাচার করা হয়েছে। ওই দুটি অ্যাকাউন্টের মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমিনের অন্যটি প্রতিষ্ঠানের নিজ নামের। ওই দুই অ্যাকাউন্টে মোট প্রায় ৭৭ হাজার ছয়শ’ সিঙ্গাপুরী ডলার পাচার করা হয়েছে। এর মধ্যে রফিকুল আমিনের অ্যাকাউন্টে ৬৪ হাজার ৫৮১ সিঙ্গাপুর ডলার এবং প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে ১৩ হাজার ২৭ দশমিক ৭৮ সিঙ্গাপুরী ডলার পাচার করা হয়েছে।

চীনের হংকংয়ের একটি ব্যাংকে সফটেড অনলাইন (এইচকে) লিমিটেডের (ইনকরপোরেশন নং- ৮৯৭০১৯ বিআরসি) নামে ৫০ কোটি টাকার মালামাল আমদানি দেখিয়ে অর্থ পাচার করা হয়েছে।

ফ্রান্সে বেস্ট এভিয়েশন লিমিটেডের নামে একটি ব্যাংকে ৮৪ হাজার ছয়শ’ ইউরো অবৈধভাবে পাচার করা হয়েছে।

এছাড়া কানাডার নভস্কশিয়ার ব্যাংকে ডেসটিনির এমডির নিজ নামের পৃথক দুটি অ্যাকাউন্টে বেশকিছু অর্থ পাচারের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

উল্লেখ্য, ডেসটিনি মাল্টিপারপাস লি. ও ডেসটিনি ট্রি প্লানন্টেশন প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহকের মোট ৩২৮৫ কোটি ২৫ লাখ ৮৮ হাজার ৫২৪ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গত ৩১ জুলাই প্রতিষ্ঠানটির ২২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে।

দুদকের উপপরিচালক মো. মোজাহার আলী সরদার ও সহকারী পরিচালক মো. তৌফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা দুটি দায়ের করেন।

মামলার আসামিরা হচ্ছেন ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমিন, লে. জেনারেল (অব.) এম হারুন-উর-রশিদ বিপি, মোহাম্মদ হোসেন, গোফরানুল হক, সাইদ-উর-রহমান, মেজবাউদ্দিন স্বপন, সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন, ইরফান আহমেদ সানী, ফারহা হোসেন দিবা, জামসেদ আরা চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার শেখ তৈয়বুর রহমান, সেলিনা রহমান, নেপাল চন্দ্র বিশ্বাস, মিতু রানী বিশ্বাস, জাকির হোসেন, আজাদ রহমান, আকবর হোসেন সুমন, শিরীন আক্তার, রফিকুল ইসলাম সরকার, মজিবুর রহমান, সুমন আলী খান, সাইদুল ইসলাম খান রুবেল, আবুল কালাম আজাদ ও লে. কর্নেল (অব.) দিদারুল আলম।

ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমিন, ডেসটিনির প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হোসেন, আবুল কালাম আজাদ (ম্যাক আজাদ) ও লে. কর্নেল (অব.) দিদারুল আলম বর্তমানে রিমান্ড শেষে কারাগারে আছেন।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.