আমেরিকান অ্যাপারেলসের নোংরামী
ঢাকা জার্নাল : ‘মেড ইন বাংলাদেশ’। বিশ্বের দামি দামি ব্র্যান্ডের পোশাকে এই ট্যাগ বিশাল গর্বের। তৈরি পোশাকে বাংলাদেশের নারীরা তাদের ঘাম আর শ্রম দিয়ে বিদেশি মুদ্রার পাশাপাশি দেশের জন্য এই গর্ব কিনে আনে। কিন্তু সেই ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ কথাটির ন্যক্কারজনক ব্যবহার ঘটালো যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পোশাকের জায়ান্ট ক্রেতা আমেরিকান অ্যাপারেলস। নগ্ননারী বক্ষে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ কথাটিকেই তার বসন হিসেবে দেখিয়ে নগ্নতার ঘৃণ্য-নগ্ন প্রকাশ ঘটিয়েছে আমেরিকান অ্যাপারেলস। আর সেই বিজ্ঞাপনের মডেল হিসেবে ব্যবহার করেছে এক বাংলাদেশি-আমেরিকান নারীকেই।
বিজ্ঞাপনে নগ্নতা, অসংলগ্নতা প্রকাশ করে এরই মধ্যে বারবার বিতর্কিত এই প্রতিষ্ঠান এবার নতুন বিতর্কে জড়িয়েছে।
বিষয়টিকে সামনে এনেছে নিউইয়র্কভিত্তিক ফ্যাশন ম্যাগাজিন এলি। এই ম্যাগাজিনে প্রকাশিত ছবিটির নিচে মডেলের নাম লেখা হয়েছে ‘ম্যাকস’। বলা হয়েছে, ম্যাকস বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত আমেরিকান এবং ২০১০ সাল থেকে আমেরিকান অ্যাপারেলসে মারচেন্ডাইজার হিসেবে কাজ করছেন।
এলি ম্যাগাজিনের সংস্কৃতি বিষয়ক খবরের অংশে বিষয়টির কড়া সমালোচনা লিখেছেন আরেক বাংলাদেশি নারী তন্বী নন্দিনী ইসলাম।
তন্বী নন্দিনী লিখেছেন, নগ্নতায় আমার আপত্তি নেই। আমি অতি শিষ্টাচারে বিশ্বাসীও নই কিংবা ঘৃণা ছড়াতেও পছন্দ করি না। কিন্তু একইভাবে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ কথাটি আমি কোনো নারীর নগ্নবক্ষে দেখতেও পছন্দ করি না।
ছবির মডেল ম্যাকসের বিষয়েও নন্দিনী লিখেছেন, এই মেয়েটি ঢাকায় জন্ম নিয়ে চার বছর বয়সে ক্যালিফোর্নিয়ায় অভিবাসী হন, বেড়ে ওঠেন মুসলিম পারিবারিক পরিমণ্ডলেই। কিন্তু তিনি তার ধর্মীয় চেতনাকে জলাঞ্জলি দিয়ে নিজের পথ বেছে নিয়েছেন।
প্রশ্ন উঠেছে আমেরিকান অ্যাপারেল এই বিজ্ঞাপন দিয়ে কি বোঝাতে চাইছে? তারা কি বলতে চাইছে মডেল ম্যাক ‘মেড ইন বাংলাদেশ’। নাকি ম্যাকের যে পোশাকটি প্রয়োজন তা ‘মেড ইন বাংলাদেশ’।
এখানে এই বিজ্ঞাপনে একটি গর্বের বাক্যবন্ধকে (‘মেড ইন বাংলাদেশ’) যৌনতার লেবেল আঁটা ছাড়া আর কিছুই করা হয় নি। তবে আরো গভীরে গেলে বলা যায়, এটি বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের ওপর স্রেফ চপেটাঘাত। সে-শিল্পখাতটির প্রাণভোমরা নারীশ্রমিক তাদের জন্য এই বিজ্ঞাপন অপমানের।বাংলাদেশে ৩.৬ মিলিয়ন শ্রমিক তৈরি পোশাকশিল্পে কাজ করেন। তাদের হাতেই আয় হয় বছরে ১৮ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা। এই নারীরাই বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির চালিকাশক্তি।
এই নগ্নতা দিয়ে আমেরিকান অ্যাপারেলস জানিয়ে দিলো তার নিজের নগ্ন চেহারা। এই প্রকাশে তারা ব্যবহার করলো আরেক বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত নারীকে, সেটাই উদ্বেগের।
ঢাকা জার্নাল, মার্চ ৮, ২০১৪।