মুন্সীগঞ্জে নতুন গার্মেন্টস পল্লী গড়ার উদ্যোগ

মে ২০, ২০১৩

3..1ঢাকা জার্নাল: পোশাক শিল্পের ঝুঁকি নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ তৈরি হওয়ার প্রেক্ষাপটে সরকার এই শিল্পের জন্য একটি পৃথক পল্লী গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আবারো কথাবার্তা শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকায় বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবনে সম্পূর্ণ অপরিকল্পিতভাবে পোশাক কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, এবং এসব কারখানা সবসময়ই ঝুঁকির মধ্যে থাকে।

সম্প্রতি সরকার ঢাকার কাছেই মুন্সীগঞ্জের বাউশিয়াতে প্রায় পাঁচশ একর জমি বরাদ্দ দিয়েছে একটি নতুন গার্মেন্টস পল্লীর জন্য। বিজিএমইএ আশা করছে, এ পল্লী হলে ঢাকা থেকে অনেক পোশাক কারখানা সরিয়ে নেয়া সম্ভব হবে।

আশুলিয়ার মতোই মুন্সীগঞ্জে আরেকটি নতুন গার্মেন্টস পল্লী গড়ে তোলার বিষয়ে রোববার রাতে বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিজিএমইএ নেতৃবৃন্দ।

গত ২৪শে এপ্রিল যে ভবন ধসের ঘটনায় এক হাজারের বেশি পোশাক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে সে ভবনটি ছিল রাজধানী ঢাকার কাছেই সাভারের একটি বাণিজ্যিক ভবনে। রাজধানী ঢাকায় এমন অসংখ্য পোশাক কারখানা রয়েছে শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোর বাণিজ্যিক ভবনগুলোতে, এমনকি অনেক আবাসিক ভবনেও গড়ে উঠেছে পোশাক কারখানা।

বিজিএমইএর সহ-সভাপতি এস এম মান্নান কচি বলেছেন, ইতোমধ্যে চীন ও জাপানের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন তারা।

তিনি বলেন, “সরকার বাউশিয়াতে ৫৩০ একর জমি আমাদের দিয়েছে। সেখানে আমরা ঢাকায় থাকা কারখানাগুলোকে স্থানান্তরের চেষ্টা করবো। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আজকের বৈঠকে তারা কিভাবে আমাদের সহায়তা করতে পারে সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।”

বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএর সাবেক সহ সভাপতি ফারুক হাসান। পোশাক শিল্পের কর্মপরিবেশ এবং সাম্প্রতিক দুর্ঘটনাগুলো সম্পর্কে বিশ্বব্যাংকের মনোভাব কেমন ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছেন তারা।

ফারুক হাসান বলেন, “রানা প্লাজার এটা দ্বিতীয় ধ্বসের ঘটনা। সেফটি এবং অগ্নি দুর্ঘটনার বিষয়ে আমরা কাজ করছি। আমাদের আরও উন্নতি করতে হবে। এ বিষয়ে আমরা শক্ত অবস্থানে রয়েছি। আমাদের সদস্যদের আরও এ বিষয়ে কঠিন হতে হবে।”

কারখানা চালানোর মত সুবিধা নেই – ঢাকায় এমন অনেক ভবনে কারখানা চালাতে গিয়ে ছোটবড় অনেক দুর্ঘটনা ঘটেছে গত ত্রিশ বছরে। আর সেজন্যই গার্মেন্টস শিল্পকে রাজধানীর বাইরে নিয়ে পরিকল্পিত শিল্প এলাকা গড়ে তোলার একটি দাবি ছিল অনেক দিনের।

নতুন গার্মেন্টস পল্লী হলে এ সমস্যার কতটুকু সমাধান হবে জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন উদ্যোগটি ভালো। তবে তার আগে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা কারখানাগুলোর উন্নতি জরুরী।

তিনি বলেন, “যেসব কারখানা বসতবাড়িতে গড়ে উঠেছে সেগুলো ওখানে নেয়াটা একটি প্রক্রিয়ার বিষয়, তবে তার আগে এখনই সেগুলোকে যতটুকু নিরাপদ করা যায় তার উপর গুরুত্ব দেয়া দরকার”।

ঢাকা থেকে গার্মেন্টস কারখানা সরানো যায়নি কেন, জানতে চাইলে মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, “কারখানাগুলো ঠিক ভাবে গড়ে উঠছে কিনা এটা যাদের দেখার কথা তারা ঠিকমত কাজ করেননি।”

বিজিএমইএ নেতৃবৃন্দ বলেছেন, প্রস্তাবিত গার্মেন্টস পল্লীতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো পেলে ক্ষুদ্র কারখানার উদ্যোক্তারাও সেখানে ভবন ভাড়া নিতে পারবেন। এভাবে মানসম্মত কারখানা প্রতিষ্ঠা ও সেখানে আন্তর্জাতিক মানের কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা যাবে। পর্যায়ক্রমে আরও কয়েকটি পল্লীর জায়গা পেলে রাজধানী থেকে সব পোশাক কারখানাই সরিয়ে নেয়া যাবে।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.