ভারতে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা: এবার নারী লেখককে ধর্ষণের হুমকি
অক্টোবর ২৫, ২০১৫ ভারতজুড়ে বেড়ে চলা সাম্প্রতিক ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে উদ্বেগ-বিক্ষোভ আর প্রতিবাদের মধ্যেই এবার হুমকির মুখে পড়লেন সেদেশের কন্যাদাভিত্তিক একজন নারী চলচ্চিত্রকার ও লেখক। গরু বেচাকেনা নিয়ে সবর হওয়া এবং হিন্দু সংস্কারকে প্রশ্নবিদ্ধ করায় ধর্ষণ, অ্যাসিড নিক্ষেপসহ বিভিন্ন হুমকি দেয়া হয়েছে তাকে। এনিয়ে ওই লেখক অভিযোগ করলে পুলিশ একটি মামলা দায়ের করেছে। তবে অভিযোগে ওই নারী লেখক ও চলচ্চিত্রকার ধর্ষণ কিংবা অ্যাসিড নিক্ষেপের প্রসঙ্গ আলাদা করে উল্লেখ করেননি।একজন উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার বরাতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, গেল একবছর ধরে তিনি হুমকি পেয়ে আসছেন ওই লেখক-চলচ্চিত্রকার চেতনা তীর্থথলি । তবে মূর্তি পূজার সমালোচনার পর কন্যাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং যুক্তিবাদী লেখক ড. মাল্লেশাপ্পা কালবুর্গির হত্যাকাণ্ড এবং তদন্তে অগ্রগতি না থাকার সাপেক্ষেই তিনি ভীত হয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন।
হিন্দু সংস্কারের সমালোচনা করে মুসলিম-প্রকাশনাসহ বিভিন্ন ম্যাগাজিনে তিনি নিবন্ধ লেখার পর থেকেই হুমকি পেয়ে আসছেন বলে জানান চেতনা। গরু কেনা-বেচার সমর্থনে ব্যাঙ্গালুরুতে বিপুল পরিমাণ লেখক ও নারীবাদীর সাম্প্রতিক মিছিলটিতেও ছিলেন তিনি।
পুলিশকে চেতনা জানিয়েছেন, গেল কয়েকমাস ধরে ফেসবুকে অব্যাহতভাবে হুমকি পেয়ে আসছেন তিনি। সব বিবেচনা করে শনিবার হনুমন্থ নগর পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন তিনি। অভিযোগে তিনি জানান, ৫/৬ মাস হলো তিনি বিভিন্ন হুমকি সমেত মেসেজ পেয়ে আসছেন।
‘প্রথমদিককার সব বার্তাই আসতো ভুয়া প্রোফাইল থেকে। এগুলো ছিল আমার ফেসবুক পোস্ট নিয়ে। আমি সেগুলো পাত্তা দিতাম না। কিছুদিন পর মধুসূদন আমাকে অব্যাহতভাবে বার্তা পাঠাতে থাকে, বিশেষত সাম্প্রতিক প্রতিবাদী মিছিলের পর থেকে। তার বার্তাগুলো সাম্প্রদায়িক, নারীবিদ্বেষী এবং অশ্লীল।’ সংবাদমাধ্যমকে বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, কালুবুর্গির হত্যাকাণ্ড এবং সে ঘটনার তদন্তে অগ্রগতি না হওয়াতে তিনি আর নিজেকে নিরাপদ মনে করছেন না। ‘আমি হয়তো কালুবুর্গির মতোন বড় মানুষ নই। তারপরও আমি ভীত। ঠিক তখনই আমি পুলিশে অভিযোগ করার সিদ্ধান্ত নিই যখন আমি দেখি ধারাবাহিকভাবে কিছু মানুষ আমার সব গতিবিধি এবং পোস্ট ফলো করছে এবং প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে।’ মন্তব্য করেন তিনি।
পুলিশ শান্তির বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলক তিরস্কারের ৩টি ধারায় এ ঘটনায় মামলা নিয়েছে। মধুসূদন নামের মানুষটিকে চিহ্নিত করতে মামলাটিকে সাইবার অপরাধ বিভাগেও পাঠানো হয়েছে।
এর আগে গরুরমাংস খাওয়া এবং সংরক্ষণ করার গুজবকে কেন্দ্র করে২৮শে সেপ্টম্বর রাতে (সোমবার) ভারতের উত্তর প্রদেশে মোহাম্মদ আখলাক নামে ৫০ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করে গ্রামবাসী।
এ নিয়ে ভারতের জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশনের সদস্যরা ঘটনাস্থলে এবং ঘটনার একটি তদন্ত প্রতিবেদনে দাবি করেছেন, একটা হিন্দু মন্দিরে এ ঘটনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে বিজেপি নেতা এবং হিন্দু মন্ত্রীরা এখনও বলেছেন, এ ঘটনা ছিল উত্তেজিত জনতার ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।
ভারতে হিন্দুত্ববাদীদের ক্রমবর্ধমান ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ও এর প্রতিবাদে প্রধানমন্ত্রীর কোন বক্তব্য না আসার প্রেক্ষাপটে বহু সাহিত্যিক তাদের একাডেমি পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়েছেন।
আর পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী খুরশিদ মাহমুদ কাসুরির বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে শিবসেনার হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন আয়োজক সুধেন্দ্র কুলকার্নি। কট্টর এ হিন্দুত্ববাদী দলটির কর্মীরা প্রকাশে সুধেন্দ্রর মুখে কালি ঢেলে দেয়। পরে মুখে কালি নিয়েই তিনি তার অফিসে খুরশিদ মাহমুদ কাসুরিকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন।