বিধায়কের মুখে কালি, শিবসেনা বিক্ষোভে ভন্ডুল ক্রিকেট বৈঠক
নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ বলছেন, তাঁরা উন্নয়নের কথাই ভাবতে চান। কিন্তু দেশের নানা প্রান্তে সঙ্ঘ পরিবারের বিভিন্ন শাখা, হিন্দু মৌলবাদী সংগঠন বা বিজেপির শরিক দলের কাজকর্মে ক্রমশই বাড়ছে অসহিষ্ণুতা। আর বিরোধীদের অভিযোগ, নরেন্দ্র মোদীরা আদৌ অসহিষ্ণুতার বাতাবরণ কাটাতে আগ্রহী নন। বরং এ ভাবেই মেরুকরণের রাজনীতি করতে চান তাঁরা। সেই সঙ্গে নজর ঘোরাতে চান সরকারের ব্যর্থতা থেকে।
সুধীন্দ্র কুলকার্নির উপরে কালি-হামলা, গোমাংস নিয়ে উত্তরপ্রদেশ ও কাশ্মীরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের আক্রান্ত হওয়া, এম কালবার্গি, গোবিন্দ পানসারের হত্যার মতো ঘটনায় যে মোদী সরকার প্যাঁচে পড়ছে তা হাড়ে হাড়েই বুঝছেন মোদী-অমিত শাহেরা। তাই গত কাল বিজেপির নেতা-কর্মীদের ডেকে সাম্প্রদায়িক উস্কানি থেকে দূরে থাকতে বলেছিলেন অমিত। বোঝাতে চেয়েছিলেন, বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব এই ধরনের উস্কানি সমর্থন করেন না।
কিন্তু আজ বেশ কয়েকটি ঘটনায় ফের বিজেপি তথা মোদী সরকারকে আক্রমণ করার সুযোগ পেয়ে গিয়েছেন বিরোধীরা। সুধীন্দ্র কুলকার্নির কায়দাতেই আজ দিল্লির প্রেস ক্লাবে জম্মু-কাশ্মীরের নির্দল বিধায়ক ইঞ্জিনিয়র রশিদের মুখে কালি ও মোবিল ছুড়েছে এক দল দুষ্কৃতী। জম্মুর উধমপুরে গো-হত্যার গুজবের পরে উন্মত্ত জনতার হাতে নিহত ট্রাকচালক জাহিদ আহমেদের পরিবারকে নিয়ে সেখানে সাংবাদিক বৈঠক করছিলেন রশিদ। অভিযুক্তেরা মৌলবাদী সংগঠন হিন্দু সেনার সদস্য বলে পুলিশ সূত্রে খবর। জাহিদের হত্যার ঘটনাতেও অভিযুক্ত হিন্দু মৌলবাদীরা।
আবার পাকিস্তানি গায়ক গুলাম আলির অনুষ্ঠান বন্ধ ও সুধীন্দ্র কুলকার্নির উপরে কালি-হামলার পরে আজ ফের সক্রিয় হয়েছে শিবসেনা। পাকিস্তানের সঙ্গে ক্রিকেট সম্পর্ক ফের শুরু করার আয়োজন মুম্বইয়ে বিসিসিআই অফিসে বিক্ষোভ দেখিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে তারা।
এই অসহিষ্ণুতার প্রতিবাদও চেহারা নিচ্ছে হিংসার। আজ যার সাক্ষী থাকল কাশ্মীর। নিহত ট্রাকচালক জাহিদ আহমেদের হত্যার প্রতিবাদে হরতালের ডাক দিয়েছিল বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলি। গোলমালের আশঙ্কায় কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছিল রাজ্যের বিজেপি-পিডিপি সরকার। কিন্তু জাহিদের গ্রাম বাতেনগুতে তাঁর শেষকৃত্যের পরেই শুরু হয় গোলমাল। বিজেপি ও আরএসএস-বিরোধী স্লোগান দিয়ে নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান স্থানীয় যুবকেরা। বিক্ষোভ হয়েছে কাশ্মীরের অন্য প্রান্তেও। উপত্যকায় বিপর্যস্ত জনজীবন। কেন্দ্রীয় সরকারি সূত্রে খবর, কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে বিশেষ উদ্বিগ্ন মোদী সরকার। এই আগুনে পাকিস্তান আরও ঘি ঢালতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের।
কিন্তু দেশে মৌল বাদীদের বাড়াবাড়ি বা অহিষ্ণুতা কমাতে বিজেপি আদৌ উদ্যোগী নয় বলে দাবি বিরোধীদের। কংগ্রেসের আনন্দ শর্মা বা সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরির দাবি, সাম্প্রদায়িক উস্কানি থেকে বিজেপি, সঙ্ঘ পরিবার বা শিবসেনা দূরে থাকবে এটা অসম্ভব। নরেন্দ্র মোদী বা অমিত শাহ মুখে যা-ই বলুন, তাঁরা এই অসহিষ্ণুতাতেই তলে তলে মদত দিচ্ছেন। কারণ, বিজেপি মেরুকরণের রাজনীতি করে অভ্যস্ত। আবার খাদ্যসামগ্রীর মূল্য নিয়ন্ত্রণ, অর্থনীতির হাল ফেরানো, বিনিয়োগ টানার মতো বিষয়ে মোদী সরকার চূড়ান্ত ব্যর্থ। তাই সে দিক থেকে নজর ঘোরানোর জন্যও অস্থিরতা তৈরি করা হচ্ছে। আনন্দ শর্মা, ইয়েচুরিদের হুঁশিয়ারি, এখন মোদী ইচ্ছে করেই অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণ করছেন না। কিন্তু পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। আবার এই অসহিষ্ণুতা-বিরোধী পরিসরটি দখল করতে প্রবল প্রতিযোগিতা চলছে বিরোধীদের মধ্যেও। তাই এক দিকে গরম-গরম বিবৃতি দিচ্ছে কংগ্রেস-সিপিএম। আবার অন্য দিকে পাকিস্তানের সঙ্গে ক্রিকেট সম্পর্ক শুরু হওয়া নিয়ে বিসিসিআই ও পাক ক্রিকেট বোর্ডের বৈঠক কলকাতায় করার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আজ আবার পটনায় বিরোধীদের পাল্টা তোপও দেগেছেন অমিত শাহ। তাঁর কথায়, ‘‘কালবার্গি হত্যা ও দাদরির ঘটনা ঘটেছে কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টি শাসিত রাজ্যে। এই ঘটনার সঙ্গে কেন্দ্রের কোনও যোগ নেই। আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের বিষয়। তাই এ নিয়ে কর্নাটক ও উত্তরপ্রদেশ সরকারের জবাবদিহি করা উচিত।’’
সম্প্রতি পশ্চিম এশিয়া সফরে যাওয়ার আগে প্রণব মুখোপাধ্যায় ভারতের বহুত্ববাদ বজায় রাখার আর্জি জানিয়েছিলেন। বিহারের জনসভায় রাষ্ট্রপতির দেখানো পথে চলার ডাক দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদীও। আজ ফের রাষ্ট্রপতি বলেছেন, ‘‘অখণ্ডতাই ভারতের সম্পদ।’’ সেইসঙ্গে শারদীয়ার সময়ে সমাজের ‘অসুর’ বা অশুভ শক্তি বিনাশের ডাক দিয়েছেন তিনি। বিরোধীদের দাবি, মোদী সরকার অস্থিরতা দমনে ব্যর্থ হওয়াতেই এত অল্প সময়ের মধ্যে ফের মুখ খুলেছেন প্রণববাবু। বোঝাতে চেয়েছেন, অসহিষ্ণুতার ‘অসুর’ দমনে মোদী সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ করা উচিত।