বন্দি হস্তান্তরের পথ খুলল, সহসাই ফিরছে না অনুপ

অক্টোবর ২৩, ২০১৩

anup-chatia20130714035105ঢাকা জার্নাল: বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্বাক্ষরিত বহির্সমর্পণ চুক্তির অনুসমর্থন দলিল সাক্ষর ও বিনিময় করেছে দুই দেশ। আর মধ্য দিয়ে দুই দেশের বন্দি হস্তারের পথ উন্মুক্ত হলো।

তবে সহসাই নিজ দেশে ফিরতে পারছেনা ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম (উলফা) নেতা অনুপ চেটিয়া।

বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এই অনুসর্থন দলিল সাক্ষর ও হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে কার্যত এই চুক্তি কার্যকারিতা শুরু হলো। এর মধ্য দিয়ে অনুপ চেটিয়াকে নিজ দেশে ফেরত দেওয়ার চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবে বাংলাদেশ। আর দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতার আলোকে অনুপ চেটিয়াসহ বন্দি হস্তান্তরের বিষয়টি দু’টি দেশই সম্পন্ন করতে পারবে।

গত বছর সেপ্টেম্বরে ঢাকা দুই দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর মধ্যে পাঁচদিন ব্যাপী সম্মেলনে বন্দি হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এর আলোকে গত ২৮ জানুয়ারির একটি চুক্তি সাক্ষর হয়।

বাংলাদেশ চুক্তিটি কার্যকরে গত ১১ অক্টোবর মন্ত্রিসভায় অনুসমর্থন প্রস্তাব অনুমোদন দেয়। অপরদিকে ভারতও একইভাবে অনুসমর্থন প্রস্তাব অনুমোদন দেয়। সেই আলোকে আজ বুধবার বহি:সমর্পন চুক্তির অনুসমর্থন দলিল সাক্ষর ও বিনিময় করেছে দুই দেশ। চুক্তিটির অনুমর্থন দলিলে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সি.কিউ.কে মুসতাক এবং ভারতের পক্ষে হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ।

এ সময় উপস্থিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক) কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, এ চুক্তির ফলে দুই দেশের মধ্যে বন্দি হস্তান্তরের পথ উন্মোচিত হলো। দুই দেশেই আর সন্ত্রাসীরা অভয়ারণ্য সৃষ্টি করতে পারবে না।

দুপুরে দলিল স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেন, এই চুক্তির ফলে অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে দুই দেশের সহযোগিতার এক নতুন দিক উন্মোচিত হলো।
দুই দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ ও পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে কাজ করলে এক দেশের অপরাধীরা অন্য দেশে অভয়ারণ্য সৃষ্টি করতে পারবে না।

অনুপ চেটিয়াকে ফেরত দেওয়া হচ্ছে কীনা এমন প্রশ্নের জবাবে কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিষয়টি উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে। রাজনৈতিকভাবে উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের পর দুই দেশের আলাপ আলোচনার মাধ্যমে বন্দি হস্তান্তর করা যাবে।

ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ বলেন, এই চুক্তির মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যে সন্ত্রাসবাদ দমন নিশ্চিত হবে। এক দেশ আরেক দেশে অপরাধীদের প্রত্যর্পণ করবে। দুই দেশ এ ব্যাপারে সহযোগিতা করবে।
১৯৯৭ সালের ২১ ডিসেম্বর ঢাকার আদাবর থানা পুলিশ অনুপ চেটিয়াকে গ্রেফতার করে। অবৈধ প্রবেশ এবং অবৈধ মূদ্রা ও স্যাটেলাইট ফোন রাখার অভিযোগে মামলা হয় তার নামে। এসব অপরাধের জন্য ৭ বছরের কারাদ- দেয় আদালত।

অনুপ চেটিয়ার সাজার মেয়াদ শেষ হলেও আইনী জটিলতায় আটক থাকে বাংলাদেশের কারাগারে। এক পর্যায়ে তিনি কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গত ১৩ মে দেশে ফিরে যাওয়ার আবেদন করেন। সঙ্গে তার দুই সঙ্গী লক্ষ্মী প্রসাদ গোস্বামী ও বাবুল শর্মাকেও নিয়ে যেতে চান তিনি। যদিও এর আগে থেকেই অনুপ চেটিয়াকে ভারত ফেরত নেওয়ার চেষ্টা চালায়।

এ ঘটনার পর থেকে অনুপ চেটিয়া ফেরত যাচ্ছে বলে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রচার হতে থাকে। অনুপ চেটিয়া ফেরত যাচ্ছে কীনা তা তা জানতে চাইলে ওই সময় কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিষয়টি নিয়ে গোপনীতার কিছু নেই। প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বহি:সমর্পন চুক্তিও হয়েছে। অনুসমর্থন সাক্ষর হলে চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শুরু হবে।

তিনি জানান এই চুক্তি বন্দি বিনিময় চুক্তি নয়, বহি:সমর্পন চুক্তি। বন্দির বিনিময় হবে না। দুই দেশের চাহিদা অনুযায়ী বন্দি হস্তান্তর করতে পারবে দুই দেশ। একজনের বিনিময়ে আরেকজনকে আনার বিষয় নয় বলে উল্লেখ করেন কামাল উদ্দিন আহমেদ।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অপর একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, কার্যত বন্দি হস্তান্তরের বিষয়ে দুই দেশের রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হবে। উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতেই অনুপ চেটিয়াকে ফেরত দেওয়ার বিষয়টি সুরাহা হবে।

ঢাকা জার্নাল,অক্টোবর ২৩, ২০১৩।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.