ফেনীতে লাথির চোটে মায়ের পেটেই শিশুর মৃত্যু

অক্টোবর ৩০, ২০১৫

06ফেনীতে সরকারদলীয় ক্যাডারদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ ও পেটের সন্তান। তার পেটে উপর্যুপরি লাথির চোটে ঘটনাস্থলেই মৃত বাচ্চা প্রসব করেন তিনি। পৃথিবীর আলো দেখার আগেই জীবন প্রদীপ নিভে যায় শিশুটির। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ও মারধরে গুরুতর আহত গৃহবধূ তুলসী রানী দাসকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার অবস্থাও আশংকাজনক। লক্ষ্মীপূজায় আতশবাজি ফোটানোর ‘অপরাধে’ বুধবার রাতে সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের মাথিয়ারা জেলেপাড়ায় হামলা চালায় সরকারদলীয় ক্যাডাররা। এ সময় আরও ২০ জন আহত হয়েছেন। পুলিশ ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো জানায়, রাত সাড়ে ৮টার দিকে মাথিয়ারা গ্রামের সাহাবউদ্দিনের ছেলে সরকারদলীয় ক্যাডার ইকবালের নেতৃত্বে ৭-৮ জন যুবক জেলেপাড়ায় যায়। মঙ্গলবার লক্ষ্মীপূজায় কেন আতশবাজি ফোটানো হল- এ নিয়ে তারা জহরলাল দাসসহ সেখানকার নারী-পুরুষদের অকথ্য গালমন্দ করতে থাকে। তাদের রোষানল থেকে বাঁচতে স্থানীয় সংখ্যালঘু নেতারা বিনীতভাবে তাদের কাছে ক্ষমা চান। তখন তারা (ক্যাডাররা) চলে যায়।

 কিছুক্ষণ পর সরকারদলীয় আরেক ক্যাডার সম্রাটসহ প্রায় ২২-২৫ জন সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে ইকবাল আবার জেলেপাড়ায় ঢোকে। আর পাড়ার ঘরবাড়িগুলোতে আচমকা ভাংচুর ও লুটপাট শুরু করে। প্রতিবন্ধী স্বপন দাসের দোকানের মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায় তারা। এ সময় তাদের ঠেকাতে পাড়ার লোকজন এগিয়ে এলে ক্যাডাররা নিরীহ সংখ্যালঘুদের মারধর শুরু করে। হামলাকারীদের হাত থেকে আহত রবীন্দ্রদাসকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন তার ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী তুলসী রানী দাস। তার ওপরও এতটুকু মায়া হয়নি সন্ত্রাসীদের। তারা তুলসীর পেটে উপর্যুপরি লাথি মারে। মুহূর্তেই রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে যায় তার। কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থলেই মৃত সন্তান প্রসব করেন তিনি।
 বৃহস্পতিবার সকালে আহত তুলসীকে ফেনী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি বলেন, সম্রাট ও ইকবাল আমার তলপেট ও কোমরে লাথি মারে। অন্যরা লাঠি দিয়ে আমাকে মারধর করে।
 হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার ছরোয়ার জাহান বলেন, গৃহবধূ তুলসী রানীর অত্যধিক রক্তক্ষরণ হয়েছে। তাই তিনি এখনও শংকামুক্ত নন। এদিকে নিহত নবজাতকের ময়নাতদন্ত শেষে তার পরিবারের কাছে মৃতদেহ হন্তান্তর করা হয়েছে।
 জেলেপাড়ার আহত ব্যক্তিরা জানান, সন্ত্রাসীদের হামলায় তাদের পাড়ার আরও প্রায় ২০ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন- আলোরানী দাস, জহরলাল দাস, শোভারানী দাস, বিকাশ, শুকদেব দাস ও পরিমল দাস।
 তারা আরও জানান, হামলার সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মানিকের সাহায্যের জন্য তাকে মোবাইল ফোনে বারবার চেষ্টা করেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে প্রায় অর্ধশত পরিবার বাড়িঘর ছেড়ে নৌকায় ছোট ফেনী নদীতে আশ্রয় নেন। পরে রাত সাড়ে ৯টায় পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে জেলে পরিবারগুলো নদী থেকে বাড়ি ফিরে আসে। আর আহতরা রাতেই পুলিশের সহযোগিতায় ফেনী সদর হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেন।
 ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুব মোর্শেদ জানান, হামলার খবর পেয়ে দ্রুত ২টি মোবাইল টিম ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে জহরলাল দাস বাদী হয়ে ফেনী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় সম্রাট ও ইকবালসহ ১৭ জনের নামোল্লেখ করে আরও ৮-১০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে এজহারভুক্ত দুই আসামিসহ ৬ জনকে আটক করা হয়েছে।
 জেলা পুলিশ সুপার মো. রেজাউল হক পিপিএম, জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদের সাধারণ সম্পাদক শুকদেব নাথ তপন, জেলা পূজা পরিষদের সভাপতি রাজিীব খগেশ দত্ত, লিটন সাহা, গণেশ ভৌমিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। স্থানীয় ইউপি সদস্য তাজু মেম্বার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, তুচ্ছ একটি ব্যাপার নিয়ে এমন লঙ্কাকাণ্ড হয়েছে। হামলাকরীরা সরকার দলের কোনো পদে না থাকলেও সবাই সরকারদলীয় ক্যাডার। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.