ফতুল্লায় শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষে আহত ১০

মে ২০, ২০১৩

ঢাকা জার্নাল: নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লায় সোমবার বিকেলে একটি সোয়েটার কারখানায় এক শ্রমিককে মারধোরের গুজবের জের ধরে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ ঘটেছে। এতে শ্রমিক সংগঠনের এক নেতা ও শ্রমিক লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতাসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।

এছাড়া সন্ধ্যার পর ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-পাগলা সড়কের বেশ কয়েকটি স্থানে যানবাহন ভাঙচুর করেছে শ্রমিকরা। এসময় ফটো সাংবাদিকদের উপরও হামলা চালিয়ে তাদের মারধোর করা হয় ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়।

পুলিশ ও শ্রমিকরা জানান, ফতুল্লার পঞ্চবটি এলাকার পাইওনিয়ার সোয়েটার কারখানায় প্রায় তিন হাজার শ্রমিক কাজ করেন। কারখানাটি তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) আওতায় থাকলেও গার্মেন্ট মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ- এর তদারকি করে থাকে।

গত কয়েক মাস ধরেই শ্রমিক ছাঁটাই, বেতন ভাতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে পাইওনিয়ার সোয়েটার কারখানায় শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছিল। বেশ কয়েকদিন কারখানা বন্ধ থাকার পর গত এপ্রিলে বিকেএমইএ’র সভাপতি সেলিম ওসমানের মধ্যস্থতায় আবার খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু এরপরও বিভিন্ন সময়ে কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়।

সোমবার বিকেল ৩টায় শ্রমিক নেতা পলাশ, তার সংগঠনের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কবির হোসেন রাজুসহ আরও কয়েকজন কারখানার ভেতর প্রবেশ করেন। ওই সময় কারখানার ভেতরে কয়েক হাজার শ্রমিক উপস্থিত ছিলেন।

তখন শ্রমিকরা তাদের কাছে বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করতে থাকেন। শ্রমিকরা তাদের পছন্দের বাইরের কোনো কর্মকর্তাকে রাখা যাবে না বলে দাবি করলে মালিকপক্ষের লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।

শ্রমিকদের উপস্থিতিতে পলাশ মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করতে চাইলে মালিকপক্ষ বাঁধা দেয়। এ সময় হঠাৎ গুজব রটে যায়, কারখানার ভেতরে এক শ্রমিককে মারধোর করছে মালিকপক্ষের লোকজন।

এ খবরে শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে তারা কারখানার ভেতর ব্যাপক ভাঙচুর শুরু করে। খবর পেয়ে নারায়ণগঞ্জ শিল্পাঞ্চল পুলিশ ও ফতুল্লা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে শ্রমিকেরা। দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া শুরু হয়।

তখন পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ার শেল ও ফাঁকা রাবার বুলেট ছোড়ে। সংঘর্ষে কাউসার আহম্মেদ পলাশ, কবির হোসেন রাজুসহ অন্তত ১০ শ্রমিক আহত হয়। ঘটনার পর ওই কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

এর জের ধরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে আলীগঞ্জ ও পাগলা এলাকায় বিক্ষোভ শুরু করে পলাশ সমর্থিত শ্রমিকরা। তারা সড়কের বিভিন্নস্থানে যানবাহন এলোপাথাড়িভাবে ফেলে রেখে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। বেশ কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুরও করে।

এ সময় ফটো সাংবাদিক আরিফুর রহমান আরিফ ও শহীদুল ইসলাম শহীদ পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য আলীগঞ্জ যাওয়ার পথে দাপা এলাকায় শ্রমিকদের রোষানলে পড়ে। আরিফ এ ব্যাপারে বলেন, “আমরা সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পরও শ্রমিকরা লাঠিসোটা দিয়ে আমাদের উপর হামলা চালায় ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে।”

শিল্প পুলিশ-৪ এর পরিচালক (পুলিশ সুপার) মাহাবুবুল আলম জনান, শ্রমিক নেতা কাউসার আহম্মেদ পলাশের উস্কানিমূলক বক্তব্যের পরই শ্রমিকরা ভাঙচুর শুরু করে। তখন পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গুলি করে।

অন্যদিকে শ্রমিক নেতা কাউসার আহম্মেদ পলাশ বলেন, “আমরা শ্রমিকদের দাবি নিয়ে আলোচনা করার সময় হঠাৎ করে পুলিশ সেখানে হানা দিয়ে লাঠিচার্জ শুরু করে।”

বিকেএমইএ’র লেবার স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান জিএম ফারুক জানান, পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে। শ্রমিকদের দাবি নিয়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

ঢাকা জার্নাল, মে ২০, ২০১৩

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.