ধ্বংস এখন অবধারিত: ইউনূস
ঢাকা জার্নাল: গ্রামীণ ব্যাংক আইন সংশোধনের তীব্র সমালোচনা করে ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, এর মধ্য দিয়ে পরম গৌরবের একটি প্রতিষ্ঠানকে ‘ধ্বংসের দিকে’ ঠেলে দেয়া হলো।
জাতীয় সংসদে গ্রামীণ ব্যাংক বিল পসের প্রতিক্রিয়ায় বুধবার এক বিবৃতিতে ইউনূস বলেন, “এর মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংকের ধবংস অবধারিত হলো।”
আইন সংশোধনের ফলে এখন থেকে গ্রামীণ ব্যাংককে সরকারের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আর্থিক হিসাব দিতে হবে। এছাড়া ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনোনয়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্তৃত্বও বাড়ানো হয়েছে সংশোধিত আইনে।
ইউনূস সেন্টারের ওয়েবসাইটে দেয়া বিবৃতিতে ইউনূস বলেন, “সরকার কর্তৃক গ্রামীণ ব্যাংকের আইনে পরিবর্তন আনাকে আমি আমার তীব্রতম ভাষায় নিন্দা জানাচ্ছি।”
তার ভাষায়, গ্রামীণ ব্যাংক সৃষ্টি করা হয়েছিল গরীব মহিলাদের মালিকানায় এবং তাদের ব্যবস্থাপনায় একটা স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসাবে। ওই আইনে গ্রামীণ ব্যাংকে সরকারের হস্তক্ষেপের কোনো সুযোগ ছিল না।
“এ কারণেই গ্রামীণ ব্যাংক জাতিকে আন্তর্জাতিক সম্মানের সুউচ্চ শিখরে নিয়ে যেতে পেরেছিল। এখন সরকার এই আইন পরিবর্তন করে তাতে এমন সব সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে যাতে সরকার এই ব্যাংককে একশতভাগ নিজস্ব নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিতে পারে।”
আইন সংশোধনের ফলে গ্রামীণ ব্যাংকের চরিত্রে মৌলিক পরিবর্তন আনা হয়েছে বলেও মনে করেন ইউনূস।
“আমি অত্যন্ত দুঃখিত যে কিছু অপরিণামদর্শী মানুষের বিবেচনাহীতার কারণে জাতির একটা পরম গৌরবের প্রতিষ্ঠানকে এই পরিণতির দিকে ঠেলে দেয়ার মর্মান্তিক ঘটনাটি জাতিকে প্রত্যক্ষ করতে হলো।”
১৯৮৩ সালে এক সামরিক অধ্যাদেশের মধ্য দিয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের সূচনা। শুরু থেকেই এ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন ইউনূস। ২০০৬ সালে তিনি ও গ্রামীণ ব্যাংক দারিদ্র্য বিমোচনের মাধ্যমে শান্তিতে অবদানের জন্য নোবেল পুরস্কার পান।
অবসরের বয়সসীমা পেরিয়ে যাওয়ার কারণ দেখিয়ে ২০১১ সালের মার্চে ইউনূসকে অব্যাহতি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর বিরুদ্ধে আদালতে গিয়ে হেরে যান ইউনূস।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সামরিক শাসনামলে নেয়া বিভিন্ন অধ্যাদেশ পরিবর্তন ও বাতিলের কাজ শুরু করে। এরই আওতায় ১৯৮৩ সালের গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ বতিল করে নতুন আইনের প্রস্তাব করা হয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।
ইউনূসের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়ে বিরোধী দল বিএনপিও গ্রামীণ ব্যাংক আইন সংশোধনের সমালোচনা করে আসছে।
ইউনূস তার বিবৃতিতে বলেন, “জাতি হিসেবে এখন আমাদের দৃঢ় সংকল্প নিতে হবে, যাতে গ্রামীণ ব্যাংকের কোনো অনিষ্ট হবার আগেই দ্রততম সময়ে আমরা এই আইনের পরিবর্তনগুলি বর্জন করে ফেলতে পারি।”
এ বিষয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ইউনূস বলেন, “দেশের সকল মানুষ, গ্রামীণ ব্যাংকের সকল ঋণগ্রহীতা-মালিক, তাদের পরিবারের সদস্যবর্গ, ব্যাংকের সকল কর্মচারী-কর্মকর্তা এলক্ষ্যে একযোগে এগিয়ে আসবেন – এই কামনা করছি।”