জমির দখল পেলে খাজনা মেটাবেন অর্পিত সম্পত্তির মালিকরা
অমিতাভ ভট্টশালী : বাংলাদেশের অর্পিত সম্পত্তির মালিক ভারতীয় নাগরিকরা বলছেন, তাঁরা নিজেদের জমির বকেয়া খাজনা মিটিয়ে দিতে চান। তবে তার আগে বাংলাদেশ সরকারকে সেই সব সম্পত্তি দখলমুক্ত করে হস্তান্তর করতে হবে।
ওই সম্পত্তি যাতে শিল্প-কারখানার জন্য এবং সমাজসেবায় ব্যবহার করা যায়, তার জন্য বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতাও চাইছেন তাঁরা।
১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভারতে চলে আসায় বহু জমি প্রথমে শত্রু সম্পত্তি ও পরে অর্পিত সম্পত্তি বলে চিহ্নিত হয়েছে।
ওই সব জমির মালিক, প্রধানত হিন্দু মালিকরা বলছেন, বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশ মতো নিজেদের জমির সব বকেয়া খাজনা মিটিয়ে দিতে চান তাঁরা। তবে খাজনা মেটানোর আগে সব জমি দখলমুক্ত করে দিতে হবে বাংলাদেশ সরকারকে।
অর্পিত সম্পত্তির মালিকদের সংগঠন, অনাবাসী বাংলাদেশী গণপরিষদ নামের একটি সংগঠন বৃহস্পতিবার কলকাতায় এই ঘোষণা করেছে।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক শচীপতি মৈত্র বিবিসি-কে বলেন, “এ বছরের নভেম্বরের মধ্যে সব খাজনা মিটিয়ে দিতে বলা হয়েছে। নিজেদের জমির খাজনা তো অবশ্যই মেটাব আমরা। কিন্তু তার আগে ক আর খ – দুই তফশীলে থাকা আমাদের যেসব সম্পত্তি দখল হয়ে গেছে, সেগুলোকে দখলমুক্ত করে দিতে হবে। আমরা দখলমুক্ত জমি-বাড়ী পেলে সব খাজনা মিটিয়ে দেব।”
তারা আরও বলছেন, যেসব অর্পিত সম্পত্তি বাংলাদেশ সরকার আগে লিজ দিত, হিন্দুদের সেই সব সম্পত্তি লিজ দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আগে সেই লিজের টাকা থেকেই জমির খাজনা পূরণ হত।
লিজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক খাজনা বাকি পড়ে রয়েছে। সেই বকেয়া খাজনাই মেটাতে চান তাঁরা – কারণ নভেম্বরের সময়সীমার মধ্যে খাজনা না মেটালে হয়ত সরকার জমিগুলি খাস করে নেবে।
তবে খাজনা মিটিয়ে দিলেও অর্পিত সম্পত্তির সব মালিকরা যে ভারত থেকে বাংলাদেশে চলে যাবেন – এমন সম্ভাবনা নেই।
সংগঠনটির কার্যকরী সভাপতি রন্তিদেব মৈত্র বলছিলেন পূর্বপুরুষদের ফেলে আসা সম্পত্তিগুলি নিয়ে তাঁদের কী পরিকল্পনা রয়েছে।
মি. মৈত্রর কথায়, “বাংলাদেশের স্থানীয় শিল্পপতি বলুন বা ভারতের আর অন্যান্য দেশের থেকেও বহু শিল্পপতি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চান। গার্মেন্টস শিল্প, বড় হোটেল, বিদ্যুৎ কেন্দ্র – এই সব খাতে অনেকেই বিনিয়োগ করতে চাইছেন, কিন্তু একটা বড় সমস্যা হচ্ছে জমির। শিল্পস্থাপনের জন্য বড় জমি পাওয়া যায় না যেগুলোর পরিষ্কার দলিল আছে বা মালিকানা নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। বড় জমির মালিকানা তো আমাদের কাছে। দলিল তো আমাদের পূর্বপুরুষদের নামে। জমিগুলোর খাজনা মিটিয়ে যদি আমরা হস্তান্তর করে দিতে পারি, তাহলে প্রচুর বিনিয়োগ সম্ভাবনা আছে – ওখানকার মানুষেরই উপকার হবে।“
এছাড়াও স্কুল-কলেজ বা হাসপাতাল তৈরির জন্যও নিজেদের জমি দান করতে বা সরকারকেও জমি দিতে আগ্রহী অর্পিত সম্পত্তির মালিকরা।
“এতদিন বাদে অর্পিত সম্পত্তির সমস্যার যে একটা সমাধান করতে সেদেশের সরকার উদ্যোগী হয়েছে, আমরাও তার প্রতিদান দিতে চাই,” বলছিলেন রন্তিদেব মৈত্র।
অনাবাসী বাংলাদেশী গণপরিষদ বলছে খাজনা মিটিয়ে দেওয়া আর জমি দখলমুক্ত করে দেওয়ার দাবী জানিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে কলকাতার উপদূতাবাসের মাধ্যমে একটি চিঠি পাঠাচ্ছেন তাঁরা।
একই সঙ্গে সেদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে অর্পিত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত জমিগুলিতে শিল্প-স্থাপন বা সমাজকল্যাণে দান করার প্রস্তাবগুলি নিয়ে বিশদে আলোচনাও করতে চান তাঁরা।
সূত্র: ডয়েচে ভয়েল।