ছাত্রের প্রেমে মজলেন ঋতুপর্ণা
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর মনে শান্তি নেই। কী করেই বা থাকবে? স্বামী তাঁর প্রতি যথেষ্ট মনোযোগী নন, বরাবরই তিনি থাকেন দূরে দূরে। অবশ্য কেরিয়ারের সঙ্গে আপোস করতে না-পেরে ঋতুপর্ণাও পছন্দ করেন স্বামীর থেকে দূরে থাকতেই। আর পরিচালক রেশমি মিত্রর বোনা এই প্লটে ‘মুক্তি’ ছবিতে অভিনয় করতে করতে কাহিনিতে নায়িকা নয়নিকা ওরফে ঋতুপর্ণার প্রেমে পড়ে হাঁটুর বয়সী এক ছেলে।
তা, তাতে অসুবিধে কী? শিক্ষিকার সঙ্গে ছাত্রদের প্রেম নিয়ে বরাবরই ভাল ভাল সব গায়ে কাঁটা দেওয়া ছায়াছবি তৈরি হয়েছে; এবার রেশমি মিত্রর ভাবনায় বাংলায় তৈরি হল এমন ছবি। আর কলকাতার একটি অভিজাত ক্লাবে সেই ছবির সাংবাদিক বৈঠকের বেশ অনেকটা সময় শুধু নীল পোস্টারে ঝাপসা হয়ে উপস্থিত থাকলেন ঋতুপর্ণা; হাজির হলেন যথাসময়ের অনেকটা পরে। ততক্ষণ পর্যন্ত অকপটে নিজের ঋতুপর্ণা-মুগ্ধতার কথা সবাইকে জানালেন পরিচালক।
‘আমি বরাবরই ঋতুপর্ণার অভিনয়ের ভক্ত। তাই অনেকদিন ধরে ওর সঙ্গে একটা ছবি তৈরি করতে চাইছিলাম। এখন ঋতুপর্ণাকে নায়িকা করে একটা ছবি বানাব বললেই তো আর হল না, তার আগে ঠিকঠাক একটা স্ক্রিপ্টও তৈরি করতে হবে, একটা জুতসই চরিত্রও ভাবতে হবে যা বেশ চ্যালেঞ্জিং হবে। তখনই আমার মাথায় এই মুক্তির প্লটটা এল’।
রেশমি মিত্র আসলে ঋতুপর্ণাকে অফার করতে চেয়েছিলেন এমন একটা চরিত্র, যা তুলে ধরবে এক নির্ভার নারীসত্ত্বাকে। সেই নারী শিকড়ের টান উপেক্ষা করে না ঠিকই; কিন্তু স্বাধীনতার আকাশে ভাসিয়ে রাখে তার ইচ্ছেডানাজোড়া। আবার কোথাও একটা গিয়ে সেই নারী শুধুই অর্ধেক আকাশ; নিঃসঙ্গতায় মোড়া।
‘নয়নিকা চরিত্রটাকে দেখুন! সে রীতিমতো কড়া ধাতের মহিলা। একটা এক্সট্রা-ম্যারিটাল করব বলে সে কিন্তু ছাত্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে না। তার স্বামী তাকে ছেড়ে অন্য মেয়ের সঙ্গে থাকে; সেই নিঃসঙ্গতার জায়গাতেই তাকে দুর্বল করে তোলে তার ছাত্র অর্ক’, সরাসরি জানালেন পরিচালক।
তা বলে খুব বাঁধনছাড়া কিছুও রেশমির ছবিটা থেকে আশা করা অন্যায়। কেন না, শিক্ষিকা-ছাত্রর উদ্দাম প্রেম যেরকম ট্রেন্ড তৈরি করে দিয়েছে ফরাসি ছবি ‘লা পিয়ানিস্তে’, সেই জায়গা থেকে সচেতনভাবে সরে এসেছেন রেশমি। প্র্যাকটিক্যালি এরকম হলে একজন বুদ্ধিমতী বাঙালি মহিলা যা করেন, নয়নিকাও তাই করেছে। কী করেছে, সেটা জানা যাবে ছবিটা মুক্তি পেলেই।
ঋতুপর্ণা ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে এছবিতে অভিনয় করেছেন শ্রীলা মজুমদার, দোলন রায়, মনামি ঘোষ-এর মতো নামজাদা অভিনেত্রীরা। ঠিক তেমনই এই ছবি জন্ম দিচ্ছে অঙ্কিতা নামে এক নবাগতা নায়িকার। প্রথম ছবির সাংবাদিক বৈঠকে স্বাভাবিকভাবেই বেশ উচ্ছ্বসিত ছিলেন অঙ্কিতা। হাসতে হাসতে জানালেন, ‘যতটা পারি, মন দিয়ে কাজ করেছি। এবার বাকিটা ছেড়ে দিলাম দর্শকদের ওপর’।
আর ঋতুপর্ণা? সাংবাদিক বৈঠকে লাল-কালোর যুগলবন্দীতে বাসন্তী রাতকে নেশাতুর করে তুললেও হাসতে হাসতে নায়িকা জানালেন যে ছবিতে তাঁকে দর্শক দেখতে পাবেন প্রায় নো মেক-আপ লুকে। ‘আমি আজকাল খুব বেছে বেছে ছবি করছি; তারই মধ্যে এই ছবিটার চিত্রনাট্য আমার বেশ ভাল লেগেছে। নয়নিকা খুব অন্যরকমের এক মহিলা। তার সৌন্দর্যের পুরোটাই আন্তরিক; সেই জন্য ছবিতেও তাকে দেখা যাবে সাদামাটাভাবেই। চরিত্রটা যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং; আমিও চেষ্টা করেছি যতটা সম্ভব নয়নিকাকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে’, এটুকু বলেই সাংবাদিক বৈঠক থেকে ইতি নিলেন ঋতুপর্ণা। আর মুক্তি পেয়েই প্রায় যেন অদৃশ্য হলেন তিনি। চিন্তা নেই, তাড়াতাড়িই ছবিঘরে দেখা দেবেন তিনি নয়নিকা হয়ে।
আনন্দবাজার পত্রিকা
কলকাতা, ৯ মার্চ, ২০১৩