কাদের মোল্লার ফাঁসি

সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৩

kader-mollah-bg20130916215521ঢাকা জার্নাল: মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর দেওয়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা বাড়িয়ে চূড়ান্ত এ রায় প্রদান করেছেন সর্বোচ্চ আদালত।

মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনালের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে করা রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের করা আপিল মামলার রায়টি ঘোষণা করেন প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে ৫ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ। বেঞ্চের অপর বিচারপতিরা হচ্ছেন, বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী।

সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে মামলাটির (গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার বনাম আব্দুল কাদের মোল্লা) রায় ঘোষণা শুরু করেন আদালত। মাত্র ২ মিনিটে সকাল ৯টা ৩৭ মিনিটে সংক্ষিপ্ত রায় পড়া শেষ হয়।

কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ৬ নম্বর অভিযোগে সপরিবারে হযরত আলী লস্করকে হত্যার দায়ে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ অভিযোগটিতে অবশ্য বিভক্ত রায় দিয়েছেন আপিল বিভাগ। ৪ বিচারপতি কাদের মোল্লাকে ফাঁসির রায় দিলেও বাকি ১ জন বিচারপতি এতে দ্বিমত প্রকাশ করেছেন। অর্থাৎ, সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতির মতামতের ভিত্তিতে মৃত্যুদণ্ডাদেশ হয়েছে তার।
এছাড়া ৪ নম্বর অভিযোগে ঘাটারচর গণহত্যার দায়ে তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ হয়েছে, যে অভিযোগ থেকে ট্রাইব্যুনাল তাকে খালাস দিয়েছিলেন। অন্য অভিযোগগুলোতে ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। এর মধ্যে মিরপুরের আলোকদী (আলুব্দী) গ্রামে গণহত্যার দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ পেয়েছেন কাদের মোল্লা।

এছাড়া প্রথম অভিযোগ, মিরপুর বাঙলা কলেজের ছাত্র পল্লবকে গুলি করে হত্যার নির্দেশ দেওয়া, দ্বিতীয় অভিযোগ কবি মেহেরুননিসা, তার মা এবং দুই ভাইকে হত্যা এবং তৃতীয় অভিযোগে সাংবাদিক খন্দকার আবু তালেবকে হত্যার দায়ে প্রত্যেকটিতে কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ১৫ বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।

আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আপিল মঞ্জুর ও আসামিপক্ষের আপিল খারিজ করে দিয়েছেন।

ট্রাইব্যুনাল ৫টি অপরাধ প্রমাণিত বললেও অপিল বিভাগের রায়ে ৬টি অভিযোগের প্রত্যেকটি প্রমাণিত হওয়ার কথা বলা হয়েছে।

এর মধ্য দিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রথম কোনো মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হলো। দুই ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ৬টি মামলার রায়ের মধ্যে আরো ৪টির আপিল শুনানি শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে। বাকি ১টি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি পলাতক থাকায় আপিল করেননি।

রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের সমন্বয়ক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান এবং আসামিপক্ষে ট্রাইব্যুনালে জামায়াতের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ও খন্দকার মাহবুব হোসেন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর রায় নিয়ে করা আপিল শুনানি শেষ হলে গত ২৩ জুলাই যে কোনো দিন এ আপিল মামলার রায় ঘোষণা করা হবে জানিয়ে মামলাটি অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।শুনানি শেষ হওয়ার ৫৪ দিনের মাথায় রায় ঘোষিত হলো।

গত ৫ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। ৬টি অভিযোগের মধ্যে ট্রাইব্যুনাল তাকে ৫টি অপরাধে দায়ী করে দু’টিতে যাবজ্জীবন ও তিনটিতে ১৫ বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দেন। একটি অভিযোগ প্রসিকিউশন সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পারেননি উল্লেখ করে ওই অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেওয়া হয়।

প্রমাণিত অভিযোগগুলোতে সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দণ্ডাদেশ না দেওয়ায় এবং একটি অপরাধের অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়ায় সাজা বাড়ানোর লক্ষ্যে এ রায়ের বিরুদ্ধে গত ৩ মার্চ আপিল করেন প্রসিকিউশন। আপিলে ওই ৫টি অভিযোগে দেওয়া সাজা অপর্যাপ্ত দাবি করে এবং খালাসের আদেশ বাতিল চেয়ে সর্বোচ্চ দণ্ড ফাঁসির আরজি জানানো হয়। আর ৪ মার্চ প্রমাণিত সকল অভিযোগ থেকে খালাসের আবেদন জানিয়ে আপিল করেন আব্দুল কাদের মোল্লা।

কাদের মোল্লার যতো অপরাধ
ট্রাইব্যুনালের রায় অনুসারে কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে গণহত্যা, বুদ্ধিজীবী হত্যা, ছাত্র ও আইনজীবীসহ আরো অনেককে হত্যার মোট ৬টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের মধ্যে ৫টি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছিল। অপিল বিভাগের রায়ে ৬টি অভিযোগের প্রত্যেকটি প্রমাণিত হওয়ার কথা বলা হয়েছে।

এর মধ্যে প্রমাণিত প্রথম অভিযোগ হচ্ছে, একাত্তরের ৫ এপ্রিল মিরপুর বাঙলা কলেজের ছাত্র পল্লবকে গুলি করে হত্যার নির্দেশ দেন কাদের মোল্লা।

দ্বিতীয় অভিযোগ হচ্ছে, একাত্তরের ২৭ মার্চ কাদের মোল্লা সহযোগীদের নিয়ে কবি মেহেরুননিসা, তার মা এবং দুই ভাইকে মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের বাসায় গিয়ে হত্যা করেন।

প্রমাণিত তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ২৯ মার্চ বিকেলে সাংবাদিক খন্দকার আবু তালেবকে আরামবাগ থেকে কাদের মোল্লা ও তার সহযোগীরা জল্লাদখানা পাম্প হাউসে নিয়ে জবাই করে হত্যা করেন।

এ তিন অপরাধের প্রত্যেকটিতে কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ১৫ বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। আপিল বিভাগ ট্রাইব্যুনালের এ সাজা বহাল রেখেছেন।

পঞ্চম অভিযোগ অনুসারে, একাত্তরের ২৪ এপ্রিল পাকিস্তানি সেনা ও অবাঙালি রাজাকারদের সঙ্গে কাদের মোল্লা মিরপুরের আলোকদী (আলুব্দী) গ্রামে হামলা চালান। ওই ঘটনায় ৩৪৪ জনের বেশি শহীদ হন।

ষষ্ঠ অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ২৬ মার্চ কাদের মোল্লা, তার সহযোগী এবং পাকিস্তানি সেনারা মিরপুরের ১২ নম্বর সেকশনে হযরত আলী লস্করের বাসায় যান। কাদের মোল্লার নির্দেশে হযরত, তার স্ত্রী, দুই মেয়ে এবং দুই বছরের এক ছেলেকে হত্যা করা হয়। ধর্ষণের শিকার হন শহীদ হযরত আলী লস্করের এক মেয়ে।

এ দুই অপরাধের প্রত্যেকটিতে কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। আর আপিল বিভাগ শেষ অপরাধে সাজা বাড়িয়ে ফাঁসির আদেশ দেন এবং পঞ্চম অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রেখেছেন।

প্রমাণিত হলো ঘাটারচর গণহত্যাও
ট্রাইব্যুনাল তার রায়ে বলেছিলেন, ঘটনা ঘটলেও কেরাণীগঞ্জের ঘাটারচর গণহত্যার সঙ্গে কাদের মোল্লার সংশ্লিষ্টতা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পারেননি রাষ্ট্রপক্ষ। এটা ছিল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে চতুর্থ অভিযোগে। আপিল বিভাগ এ অপরাধের দায়ও প্রমাণিত হয়েছে বলে উল্লেখ করে কাদের মোল্লাকে খালাসের আদেশ বাতিল করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন।

এ অভিযোগ অনুসারে, ২৫ নভেম্বর কাদের মোল্লা ও ৬০-৭০ জন রাজাকার কেরাণীগঞ্জ থানার ভাওয়াল খানবাড়ি এবং ঘাটারচরে (শহীদনগর) শতাধিক নিরস্ত্র গ্রামবাসীকে হত্যা করেন।

শুনানির কার্যক্রম
আপিল শুনানি ও অ্যামিকাস কিউরিদের মতামত প্রদানের জন্য ৩৯ কার্যদিবস সময় লেগেছে আপিল বিভাগে। এর মধ্যে ১৫ কার্যদিবসে রাষ্ট্রপক্ষ ও ১৮ কার্যদিবসে আসামিপক্ষ শুনানি করেছেন। আদালত মনোনীত ৭ জন অ্যামিকাস কিউরি তাদের মতামত দিয়েছেন ৬ কার্যদিবসে।

গত ১ এপ্রিল থেকে শুরু হয় আপিল শুনানি। প্রথমে রাষ্ট্রপক্ষ ও পরে আসামিপক্ষের করা আপিলের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

এর মধ্যে ১ এপ্রিল থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত, ৬ জুন থেকে ২০ জুন পর্যন্ত এবং ২৩ জুলাই মোট ১৫ কার্যদিবসে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের সমন্বয়ক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান। অন্যদিকে ২৯ এপ্রিল থেকে ৬ জুন পর্যন্ত এবং ২২ জুলাই ১৮ কার্যদিবসে আসামিপক্ষে শুনানি করেন ট্রাইব্যুনালে জামায়াতের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক।

রাষ্ট্রপক্ষ তাদের শুনানিতে কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ দেওয়া সাক্ষীদের সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেওয়ার বিপক্ষে যুক্তি তুলে ধরে তার সর্বোচ্চ শাস্তি কামনা, ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায় পাঠ, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন’১৯৭৩ সংশোধনী বিষয়ে বক্তব্য এবং আসামিপক্ষের যুক্তির জবাব দেন।

অন্যদিকে আসামিপক্ষ কাদের মোল্লাকে খালাস দেওয়ার পক্ষে নিজেদের বক্তব্য উপস্থাপন এবং রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তির জবাব দেন।

এর আগে গত ১০ মার্চ প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ৬ সদস্যের বেঞ্চ শুনানির জন্য ৩১ মার্চ রোববার দিন ধার্য করেন। তবে ওই দিন আপিল বিভাগের নতুন বিচারপতিদের শপথ গ্রহণ ও সংবর্ধনার জন্য এ মামলার শুনানি শুরু হয়েছে গত ১ এপ্রিল। একজন বিচারপতি ইতিমধ্যে অবসরে চলে যাওয়ায় শুনানি সম্পন্ন হয় ৫ বিচারপতির বেঞ্চে।

অ্যামিকাস কিউরিদের মতামত
আপিল শুনানি চলাকালে দু’টি আইনগত প্রশ্ন দেখা দেয়। এর মধ্যে একটি হচ্ছে কাস্টমারি ইন্টারন্যাশনাল ল’ (প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইন) এর আওতায় কাদের মোল্লার মামলার এই মামলা পড়বে কিনা এবং দ্বিতীয়টি হল আপিলের সমান সুযোগ রেখে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন’১৯৭৩ এ যে সংশোধনী আনা হয়েছে এবং ২০০৯ সালের ১৪ জুলাই থেকে তার যে ভুতাপেক্ষ কার্যকারিতা দেখানো হয়েছে- সেটি এ মামলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে কিনা।

এ দু’টি বিষয়ে আদালতকে সহায়তা করতে গত ২০ জুন সাতজন বিশিষ্ট আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি নিযুক্ত করেন আপিল বিভাগ। তাদের কাছে দু’টি বিষয়ের ওপর আইনগত ব্যাখ্যা জানতে চান আপিল বিভাগ।

৭ অ্যামিকাস কিউরি ৬ কার্যদিবসে মতামত দিয়েছেন। তাদের মধ্যে এ সংশোধনী আব্দুল কাদের মোল্লার মামলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে বলে মতামত দিয়েছেন ৫ জন। তারা হচ্ছেন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদুল ইসলাম, ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি ও ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ। অন্য দুই অ্যামিকাস কিউরি টিএইচ খান ও এএফ হাসান আরিফ মনে করছেন, এটি প্রযোজ্য হবে না।

অন্যদিকে কাস্টমারি ইন্টারন্যাশনাল ল’ (প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইন) এর আওতায় এ মামলা পড়বে বলে তিনজন, পড়বে না বলে দুইজন এবং অন্য দুই জন ভিন্ন ধরনের মতামত দিয়েছেন। ব্যারিস্টার রফিক-উল হক ও ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদের মতে, প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইন প্রযোজ্য নয়। অন্যদিকে ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, মাহমুদুল ইসলাম ও এএফ হাসান আরিফের মতে, প্রযোজ্য হবে। আর ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসির মতে, প্রযোজ্য হবে, যদি তা দেশীয় আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। দেশীয় আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হলে এটি প্রযোজ্য হবে না। টিএইচ খানের মতেও প্রযোজ্য হবে। তবে তিনি মনে করেন, যে ক্ষেত্রে দেশীয় আইনের সঙ্গে আন্তর্জাতিক আইনকে সাংঘর্ষিক বলে মনে হবে, সে ক্ষেত্রে দেশীয় আইন প্রাধাণ্য পাবে।

প্রসঙ্গত, কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন কাদণ্ডাদেশের রায়ের পর মানবতাবিরোধী অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শাহবাগে আন্দোলন করে গণজাগরণ মঞ্চ। এরপর ১৭ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) (সংশোধন) বিল, ২০১৩ জাতীয় সংসদে পাস হয়। সংশোধিত আইনে রায়ের বিরুদ্ধে উভয় পক্ষের আপিল করার বিধান রাখা হয়। আগে শুধু আসামিপক্ষ আপিল করতে পারতেন।

আরও ৪ মামলা সুপ্রিম কোর্টে
ঘোষিত অন্য ৫টি রায়ের মধ্যে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান ও পলাতক জামায়াতের সাবেক রোকন (সদস্য) আবুল কালাম আজাদ বাচ্চু রাজাকারকে ফাঁসি এবং জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমকে ৯০ বছর ও আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে।

ঘোষিত রায়গুলোর মধ্যে সাঈদী ও গোলাম আযমের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করেছেন রাষ্ট্র ও আসামি উভয়পক্ষই। কামারুজ্জামান ও মুজাহিদ তাদের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলেও সর্বোচ্চ সাজা হওয়ার প্রেক্ষিতে আপিল করেননি রাষ্ট্রপক্ষ।

সাঈদীর মামলায় প্রমাণিত সব অভিযোগগুলোতে সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষ আর ফাঁসির দণ্ডাদেশ থেকে খালাসের আরজি জানিয়ে আপিল করেছেন আসামিপক্ষ। একইভাবে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া সাজা অপর্যাপ্ত উল্লেখ করে গোলাম আযমের ফাঁসির আরজি জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষ এবং ৯০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ থেকে খালাসের আরজি জানিয়ে আপিল করেছেন তিনি। কামারুজ্জামান ও মুজাহিদ আপিল করেছেন ফাঁসির দণ্ডাদেশ থেকে খালাস চেয়ে।

সাঈদীর মামলার আপিল শুনানি মঙ্গলবারই শুরু হতে পারে। ইতিমধ্যেই উভয়পক্ষের আপিলের সার-সংক্ষেপ জমা পড়েছে আদালতে। অন্য মামলাগুলোর আপিল শুনানি শুরুর দিন ধার্যের অপেক্ষায় রয়েছে।
পলাতক জামায়াতের সাবেক রোকন (সদস্য) আবুল কালাম আজাদ বাচ্চু রাজাকার প্রথম থেকেই পলাতক থাকায় আপিল করেননি।

ঢাকা জার্নাল: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৩

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.