উপজেলা নির্বাচনে সিটি করপোরেশনের পূণরাবৃত্তি কঠিন হবে

ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৪

Anandabazarঢাকা জার্নাল: হতাশ কর্মীদের নিয়ে উপজেলা নির্বাচনে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি করা কঠিন তা বুঝেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তবে হাল ছাড়ছেন না। তৃণমূলের কর্মীদের উজ্জীবিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন এই নির্বাচনে আওয়ামী জোট থেকে এগিয়ে থাকতে।

বুধবার উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ নিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের হতাশার কথা তুলে ধরে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা।

পত্রিকাটি জানায়, বাংলাদেশের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বেগম খালেদা জিয়ার দল বিএনপি। আর নেতৃত্বের সেই সিদ্ধান্তই দলের সাধারণ নেতা-কর্মীদের মধ্যে তুলে দিয়েছে এক গুচ্ছ প্রশ্ন- সাধারণ নির্বাচন তা হলে কেনো বয়কট করা হল? প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগকে বিনা লড়াইয়ে সরকার গড়তে দিয়ে বিএনপির কী লাভ হল? সংসদীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থায় পাঁচ বছরের জন্য সংসদের বাইরে থাকার অর্থ যে রাজনৈতিক ভাবে অপাংক্তেয় হয়ে পড়া, বিএনপি নেতৃত্ব কেনো সে কথা বোঝেননি?

পাঁচ জানুয়ারি নির্বাচনের পর শপথ নিয়ে ১২ জানুয়ারি শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভা গঠন করে । জাতীয় সংসদ অধিবেশনও শুরু হয় গত ২৯ জানুয়ারি। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশের নানা প্রান্ত ঘুরে শেথ হাসিনা এক দিকে যেমন জনমনে আস্থা ফেরাতে তৎপর হয়েছেন। তেমনই তৃণমূল স্তরে দলের কর্মীদের উজ্জীবিত করার চেষ্টা করছেন। যাতে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী জোট এগিয়ে থাকতে পারে। উল্টো দিকে নির্বাচনের পরে বিএনপির সাধারণ কর্মীরা এতটাই হতাশ হয়ে পড়েছেন যে, বিক্ষোভ কর্মসূচি ডেকেও সাড়া পাচ্ছেন না। এই পরিস্থিতিতে কর্মীদের চাঙ্গা করতে নজিরবীহিনভাবে বার বার সাংবাদ সম্মেলন ডাকছেন খালেদা জিয়া। মঙ্গলবার তার সর্বশেষ বক্তব্যে তিনি একই যুক্তি দিয়ে বোঝাতে চেয়েছেন সাধারণ নির্বাচন বর্জন করা আসলে সঠিক সিদ্ধান্তই ছিল।

খালেদা জিয়া বুঝেছেন, সাধারণ মানুষ তাঁদের হরতালের ডাকে শুধু যে সাড়া দিচ্ছেন না তা-ই নয়, রীতিমতো বিরক্ত তারা। একের পর এক পশ্চিমী শক্তিও বিএনপিকে হতাশ করে জানিয়ে দিয়েছে। একতরফা নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও শেখ হাসিনার নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাবে তারা। বিরোধীদের লাগাতার হরতাল-অবরোধ যে তারা পছন্দ করছে না, সেটাও জানিয়ে দিয়েছে আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও কমনওয়েলথ। তার পর থেকে আরও ‘কড়া’ কর্মসূচি নিতে পারছে না বিএনপি।

আর এর প্রভাব আসন্ন উপজেলা নির্বাচনেও পড়তে পারে, এমন আশঙ্কা করছেন বিএনপি নেতারা। সাধারণ নির্বাচনের আগে সিটি কর্পোরেশনের সব নির্বাচনে আওয়ামী জোটকে পরাস্ত করেছিল বিএনপি-জামাত প্রার্থীরা। কিন্তু হতাশ কর্মীদের নিয়ে উপজেলা নির্বাচনে তার পুনরাবৃত্তি করা যে কঠিন, খালেদা জিয়া তা বুঝেছেন। ওই দিন সাংবাদিক সম্মেলনেও তিনি স্বীকার করে বলেছেন, আমাদের গুছিয়ে উঠতে সময় লাগবে।’ খালেদা যদিও অভিযোগ করেছেন, তাঁদের এই অগোছালো হয়ে যাওয়ার জন্য সরকারের দমন নীতিই দায়ী। তার অভিযোগ, বিরোধী নেতাদের ধরপাকড় করে, কর্মীদের নানা মামলায় ফাঁসিয়ে আতঙ্ক তৈরি করেছে সরকার। গত কয়েক মাসে তাঁদের প্রায় ৩০০ কর্মীকে খুন বা গুম করার অভিযোগও তুলেছেন খালেদা। মঙ্গলবারও তিনি বলেন, এই নিবার্চন মানেন না, এই সংসদ তামাশার সংসদ এবং এই সরকার অবৈধ। ভোটে লড়লে তার জোট দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা পেত।

চট্টগ্রাম আদালত দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার রায়ে ভারতে বড়সড় নাশকতার জন্য উলফা জঙ্গিদের কাছে ওই বিপুল অস্ত্র পাঠানো হচ্ছিল। খালেদা জিয়ার সরকার প্রত্যক্ষভাবে এই অস্ত্র চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত ছিল বলে মন্তব্য করেছেন বিচারক। সেই আমলের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও শিল্পমন্ত্রীকে এ জন্য প্রাণদণ্ড দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই বিষয়ে মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলনে কোনও প্রশ্ন শুনতে চাননি খালেদা। বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্যও করেননি।

নিজের বক্তব্যের বাইরে খালেদা দু-একটি প্রশ্নেরই জবাব দিয়েছেন। তার একটি ছিল, জামাতের সঙ্গ ছেড়ে আলোচনার যে প্রস্তাব সরকার দিয়েছে, তা কি নেওয়া হবে? তেড়েফুঁড়ে বিএনপি নেত্রী বলে ওঠেন, ‘আমরা কার সঙ্গে থাকব, না-থাকব সেটা আমরা ঠিক করব। ওরা আমাদের ডিকটেশন দেবে?’ এ থেকে মনে করা হচ্ছে, আপাতত জামাত-সঙ্গ তিনি ছাড়ছেন না।

ঢাকা জার্নাল, জানুয়ারি ৫, ২০১৪।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.