আসছে ডিএনএ আইন: জামিন নেই, জেল সাত বছর

আগস্ট ২৩, ২০১৩

DNAঢাকা জার্নাল: আইন না মানলে সর্বোচ্চ শাস্তি ৭ বছর জেল ও জরিমানার বিধান নিয়ে আসছে ডি-অক্সি-রাইবোনিউক্লিক এসিড (ডিএনএ) আইন- ২০১৩। অপরাধ অ-জামিনযোগ্য বিধান রেখেই এই আইনের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। আগামী ১ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদনের জন্য এটি উত্থাপন করা হবে।

অপরাধী সনাক্ত ও বিরোধ নিষ্পত্তি করতেই আইনটি করার উদ্যোগ নেয় মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয়।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব তারিক-উল-ইসলাম বলেন, আইনের খসড়াটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। আগামী ১ সেপ্টেম্বরেরর মন্ত্রিসভায় উত্থাপনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে খসড়াটি পাঠানো হয়েছে।

তিনি বলেন, আইনটি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন ও জাতীয় সংসদে পাসের পর যথাযথ প্রয়োগ হলে তথ্য প্রমানের অভাবে মামলায় জটিলতা তৈরী কিংবা বিচারপ্রার্থীরা বিচার বঞ্চিত হবেন না।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের মামলায় সাক্ষী প্রমানের ক্ষেত্রে অনেক সময়ই অভিযোগের সত্যতা প্রমান করা সম্ভব হয়না। সে ক্ষেত্রে নির্যাতিতরা বিচার পাওয়া থেকেও বঞ্চিত হন।

এই সমস্যা দূর করার জন্য মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয় ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাব প্রতিষ্ঠা করেছে। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে অপরাধী সনাক্ত করা সম্ভব হলেও আদালতে ডিএনএ ল্যাবের রিপোর্ট গ্রহণ করার বিষয়ে বাংলাদেশে কোন আইন নাই। তাই এই আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয় মন্ত্রনালয়।

লক্ষ্য উদ্দেশ্য

 

জনস্বার্থে আধুনিক প্রযুক্তির কার্যকর ও বাস্তবসম্মত ব্যবহারের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে অপরাধ ও অপরাধী শনাক্তকরণ ও বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে দেহগত পদার্থ বা কোষকলার নমুনার ডিএনএ বিশ্লেষণের বিধান করা। এছাড়া পিতৃত্ব বা মাতৃত্ব নির্ধারণ, ফৌজদারী বা দেওয়ানী মামলার কার্যক্রম সম্পর্কিত বিষয়াদি বা অন্যান্য সম্পর্কযুক্ত বিষয়াদি সঠিকভাবে নিরূপণ করার লক্ষ্যে আইনটি করা হচ্ছে।

উপদেষ্টা পরিষদ

 

মলিক্যুলার বায়োলজি, হিউম্যান জেনেটিক্স, বায়োকেমিস্ট্রি, সামাজিক বিজ্ঞান, আইন ও ফৌজদারী বিচার এবং প্রাসঙ্গিক অন্যান্য বিষয়ে অভিজ্ঞ,  দক্ষ, সর্বোচ্চ সততা, সুনাম ও পাণ্ডিত্যের অধিকারী ব্যক্তি এবং সরকারের মনোনীত ২ জন সদস্যসহ ডিএনএ উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করার বিধান করা হয়েছে। বিধি দ্বারা নির্ধারিত প্রয়োজনীয় সংখ্যক সদস্য থাকবে এই উপদেষ্টা পরিষদে।

উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান হবেন সরকারের নিযুক্ত সচিব পর্যায়ের ব্যক্তি। পরিষদের প্রধান কার্যালয় হবে ঢাকায়। 

অপরাধ ও শাস্তি

 

যদি কোন ল্যাবরেটরী বা সংস্থা অননুমোদিতভাবে ডিএনএ কার্যক্রম পরিচালনা করে তাহলে ওই কার্যক্রমে জড়িত প্রত্যেক ব্যক্তির ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ২ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দণ্ডই দিতে পারবেন আদালত।

অননুমোদিতভাবে ডিএনএ সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ বা প্রকাশ বা ব্যবহার করলে ৩ (তিন) বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন অপরাধী।

যদি কোন ব্যক্তি অননুমোদিত বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ডিএনএ সম্পর্কিত কোন তথ্য সংগ্রহ করেন তাহলে ৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

দায়িত্বরত কোন ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোন ডিএনএ নমুনা বা এর ফলাফল হস্তান্তর বা প্রকাশ করেন তাহলে ৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

ডিএনএ নমুনা বা দেহগত পদার্থের নমুনা ধ্বংস, পরিবর্তন, দূষিতকরণ, জালকরণ কলা হলে ৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ১ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন অভিযুক্ত ব্যক্তি।

অনুমোদিত নয় এমন কোন উপায়ে ডিএনএ সম্পর্কিত ডাটাবেইজে প্রবেশ করলে ২  বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

নমুনা সংগ্রহে গাফিলতি করলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক বা তদন্তকারী কর্মকর্তা বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যের ২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা হবে।

অপরাধের অ-আমলযোগ্যতা

 

সরকার বা ডিএনএ উপদেষ্টা পরিষদ বা ল্যাবরেটরী প্রধান বা পরিচালক বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তির লিখিত অভিযোগ ছাড়া কোন আদালত এই  আইন বা এর অধীনে প্রণীত বিধিমালা বা প্রবিধিমালায় বর্ণিত কোন অপরাধ আমলে নিতে পারবেন না।

অ-জামিনযোগ্যতা

 

এই আইনের অধীন কোন অপরাধ অ-জামিনযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নিম্ন কোন আদালত এই আইনের অধীন সংঘটিত কোন অপরাধের বিচার করতে পারবেন না।

নারীর কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহে শালীনতা

 

বালিকা বা মহিলার নিকট হইতে নমুনা সংগ্রহের ক্ষেত্রে শালীনতা ও সতর্কতা রক্ষা করতে যতদূর সম্ভব যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি বা মেডিকেল অফিসার বা পুলিশ অফিসার একজন মহিলা থাকতে হবে। আর শালীনতা বজায় রাখার বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

আলামত নষ্টের ক্ষেত্রে পুলিশের ক্ষমতা

 

অপরাধ সংশ্লিষ্ট কোন সাক্ষ্য প্রমান ধ্বংস, পরিবর্তন বা বিকৃত বা দূষিত করে বা করার চেষ্টা করে সে ক্ষেত্রে পুলিশ যৌক্তিক বল প্রয়োগ করতে পারবে। এছাড়া অপরাধের জন্য অভিযুক্ত আটক বা গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহের সময় কোন প্রকার বাধা বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলেও পুলিশ বল প্রয়োগ করতে পারবে।

নমুনা দিতে অস্বীকৃতি

 

কোন ব্যক্তি নমুনা দিতে অস্বীকৃতি জানালে উপযুক্ত আদালত আবেদনের ভিত্তিতে তার সম্মতি ছাড়াই দেহগত নমুনা নিতে নির্দেশ দিবেন। প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ পর্যন্ত তাকে গ্রেফতারের আদেশ দিতে পারবেন আদালত।

নমুনা সংগ্রহে সাক্ষীর উপস্থিতি

 

দেহগত পদার্থ নমুনা হিসেবে নিতে যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিকে কমপক্ষে দুইজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে সংগ্রহ করতে হবে। নমুনা সংগ্রহ করবেন মেডিক্যাল অফিসার। তবে যৌন নিপীড়ন বা মরদৃহের নমুনা সংগ্রহে ফরেনসিক মেডিসিনের ডাক্তার বা মেডিকো-লিগ্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর জন্য অনুমোদিত ও যোগ্যতাসম্পন্ন মেডিকেল অফিসার হতে হবে।

ডিএনএ ল্যাবের জন্য লাইসেন্স

 

ডিএনএ ল্যাবরেটরী প্রতিষ্ঠার জন্য উপদেষ্টা পরিষদের কাছে আবেদন করে নির্ধারিত ফি দিয়ে লাইসেন্স নিতে হবে। ডিএনএ কার্যক্রম সম্পাদনের প্রক্রিয়া এবং গুণগত মান নিশ্চিত না হলে এবং শর্ত পূরণ না হলে লাইসেন্স বাতিল করার বিধান রাখা হয়েছে আইনে।

দায়মুক্তি

সরল বিশ্বাসে কোন কাজের জন্য ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করলে পরীক্ষক ও হেফাজতকারী বা এই প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত কোন সরকারী কর্মচারীর বিরুদ্ধে কোন দেওয়ানী বা ফৌজদারী মামলা বা অন্যকোন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না।

লিখেছেন- এস এম আববাস, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর .কম

ঢাকা জার্নাল, আগস্ট ২৩, ২০১৩

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.