আল-কায়েদার হুমকির সঙ্গে জড়িত বিএনপি-জামায়াত-হেফাজত চক্র

ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৪

Sangsadঢাকা জার্নাল : বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক জঙ্গিসংগঠন আল কায়েদার হুমকির প্রতিবাদে রোববার  উত্তপ্ত ছিল জাতীয় সংসদ। আওয়ামী লীগ, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি ও তরিকত ফেডারেশনের সাংসদরা ঘটনার সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত- হেফাজতে ইসলাম জড়িত মন্তব্য করে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবি করেন। তারা বলেন, খালেদা জিয়া এবং জামায়ত-হেফাজতের বক্তব্যের সঙ্গে জাওয়াহিরীর ভিডিও বার্তার হুবহু মিল রয়েছে। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ও ভয় সৃষ্টির জন্য আল-কায়দার এই হুমকি মন্তব্য করে সাংসদরা বলেন, বের করতে হবে কারা এই ভিডিও বার্তা কোথা থেকে এসেছে, কারা কারা জড়িত খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নিতে হবে। আল-কায়দা দিয়েছে, নাকি বাংলাদেশের আল-কায়দার দোসর বিএনপি-জামায়াত-হেফাজতরা দিয়েছে, তা বের করতে হবে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে মাগরিবের নামাজের বিরতির পর প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলুল করিম সেলিম পয়েন্ট অব অর্ডারে আল-কায়দা প্রধান আয়মান আল-জাওয়াহিরীর কথিত ভিডিও বার্তার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। এর পর প্রায় দেড় ঘন্টা ধরে চলা এই অনির্ধারিত বিতর্কে অংশ নেন কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, জাসদের কার্যকরী সভাপতি মইনউদ্দীন খান বাদল, ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা ও তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী।

আলোচনার সূত্রপাত করে শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, আল-কায়দা প্রধান জাওয়াহিরীর ভিডিও বার্তার মাধ্যমে হুমকি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র। বিএনপি-জামায়াতের বক্তব্য এবং আল-কায়দার প্রধানের ভিডিও ফুটেজে দেয়া বক্তব্য প্রায় একইরকম। বিএনপি-জামায়াত ও হেফাজতের কথাই আলকায়দা প্রধানের হুমকি বার্তায় ফুটে উঠেছে। তিনি বলেন, ইসলাম সৃষ্টি করে ধ্বংস করে না। আর এরা ধ্বংস করে, মানুষ হত্যা করে ইসলামকে জঙ্গী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ধর্মের নামে কেউ বাড়াবাড়ি না করে সেজন্য হুশিয়ারী দিয়ে সেলিম বলেন, আল-কায়দা প্রধান বাংলাদেশকে একটি জঙ্গী ও তালেবানি দেশে পরিণত করতে চায়। ধর্মকে ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় বিশ্বে তান্ডব চালিয়েছে। আল-কায়দা বিএনপি-জামায়াতের দোসর। বিএনপি এক নেতা বলেছে, বাংলাদেশ একটি বৃহৎ কারাগার। আল-কায়দা প্রধানও একই কথা বলেছে। তিনি বলেন, মুখে ধর্মের কথা বলে বিএনপি-জামায়াত-হেফাজত কোরআন শরিফ পুড়িয়েছে, মসজিদে আগুণ দিয়েছে। টার্গেট ছিল সরকারের পতন ঘটাতে বাংলাদেশে লুপপাট চালাবে, সচিবালয়, সুপ্রীম কোর্টে হামলা চালিয়ে সরকারকে উৎখাত করবে। কিন্তু সেই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে। শত নাশকতা চালিয়েও নির্বাচন ঠেকাতে পারেননি খালেদা জিয়া। জাতীয় নির্বাচনে না এসে এখন নাকে খত দিয়ে উপজেলা নির্বাচনে এসেছে। খালেদা জিয়ার আল-কায়দা, তালেবানসহ অনেক বিদেশী প্রভূ রয়েছে।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক না গলানোর জন্য কূটনীতিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ সেলিম বলেন, বাংলাদেশে ষড়যন্ত্র করে কোনো লাভ পাবেন না। এদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করবেন না, করলে সরকার আরো কঠোর হতে বাধ্য হবে। যতই হুমকি দেয়া হোক, বাংলাদেশের মাটিতে কোনো সন্ত্রাসী-জঙ্গীবাদের স্থান হবে না, কঠোরহস্তে দমন করা হবে। তিনি বলেন, জঙ্গী-সন্ত্রাসী বিএনপি-জামায়াত-হেফাজত জঙ্গী সংগঠন, রাজনৈতিক সংগঠন নয়। দেশবাসীকে অনুরোধ জানাবো, এদের পরিত্যাগ করুন। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মতো তালেবানী রাষ্ট্র হতে দেব না। এর সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত-হেফাজতসহ অন্য কেউ এই ভিডিও বার্তার সঙ্গে জড়িত থাকলে তাদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক বিচার করুন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আল-কায়দা নেতা কেন হঠাৎ করেই বাংলাদেশকে হুমকি দিল, তা অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে। আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াত মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে, ধ্বংসযজ্ঞ ও নাশকতা চালিয়েছে। কারণ ৫ জানুয়ারি নির্বাচন না হলে বাংলাদেশ হতো অগণতান্ত্রিক অকার্যকর দেশ। কিন্তু শেখ হাসিনা চ্যালেঞ্জ নিয়ে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একা লড়াই করে সেই ষড়যন্ত্র নস্যাত করে দিয়েছেন। আল কায়েদার এই হুমকি নতুন চক্রান্তের আলামত। তিনি বলেন, আল-কায়দা ইসলামের কথা বলে মুসলমানদের টার্গেট করেছে। মুসলমান হয়ে মুসলমানকে হত্যা করছে, প্ররোচনা দিচ্ছে। বিএনপি-জামায়াত জোটের সময় আল-কায়দাকে ব্যবহার করে বিভিন্ন নামে নানাস্থানে হামলা চালিয়েছে। পাকিস্তান এখন সর্বত্র জ্বলছে, আফগানিস্তান প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। ভারতেও জঙ্গীবাদ আছে। একমাত্র বাংলাদেশ শান্তিময় দেশে পরিণত হয়েছে। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ও ভয় সৃষ্টির জন্যই আল-কায়দার এই হুমকি। বের করতে হবে কারা এই বিবৃতি দিয়েছে, কোথায় থেকে এসেছে, কারা কারা জড়িত খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নিতে হবে। আল-কায়দা দিয়েছে, নাকি বাংলাদেশের আল-কায়দা দিয়েছে, তা বের করতে হবে।

কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোটের পাঁচ বছরে জাওয়াগিরি তিনবার বাংলাদেশে এসেছে সরকারি মেহমানদারীতে। বিএনপির রাজনীতিই হলো সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গীবাদ ও দেশের সর্বনাশ ও ধ্বংস করা। খালেদা জিয়াকে ‘লেডি লাদেন’ অভিহিত করে তিনি বলেন, নির্বাচন প্রতিরোধের ডাক দিলেও খালেদা জিয়ার ডাকে কেউ সাড়া দেয়নি। গনতন্ত্রের অভিযাত্রার নামে সন্ত্রাসের অভিসার করলেন খালেদা জিয়া। কাজের বুয়া ছাড়া তাঁর গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় তাঁর পাশে কেউ ছিলো ন। সরকারের অগ্রযাত্রা ব্যহত করার জন্য জাওয়াগিরি ভিডিও বার্তা লেডি লাদেন ও জুনিয়ার লাদেনকে (তারেক) সাহস ও মনোবল চাঙ্গা করার বার্তা। তবেই যতই তাদের মনোবল চাঙ্গা করতে হুমকি দিক, জাওয়াগিরি ভাষণই সার হবে। গেরিলা রাজাকাররা নয়, মুক্তিযোদ্ধারা। একাত্তরে যেভাবে হেরেছেন, এবারও হেরে যাবেন।

জাসদের কার্যকরী সভাপতি মইন উদ্দীন খান বাদল বলেন, বাংলাদেশে যা কিছু পতিত, অভিশপ্ত ও অত্যন্ত ক্ষতিকর- এর প্রতিটি ক্ষেত্রেই খালেদা জিয়ার সম্পৃক্ততা রয়েছে। আল-জাওয়াহিরি কোনো আলেম নন। জাওয়াহিরি কোথায় আছে কেউ না জানলেও এদেশে তাঁর কিছু চ্যালা-চ্যামুন্ডা রয়েছে। আল-কায়দা প্রধানের কথার সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের কথা হুবহু মিলে গেছে। জাওয়াহিরি জানেন না, বাংলাদেশে ইসলাম তাদের মতো তরবারির আঘাতে আসেনি, বাংলাদেশে ইসলাম সুফিবাদের ইসলাম। উনি কী ধরণের দেশ চান পাকিস্তান ও আফগানিস্তান দেখলেই বোঝা যায়। এ দুটি দেশকে দোজগ বানিয়েছেন এই আল-কায়দা প্রধান। খালেদা জিয়া দশ অস্ত্র চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত, তার পুত্র দুবাইতে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বাংলাদেশকে তিনি অশুভ প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত করতে বিপদে ফেলতে চান। গণতন্ত্রের মেকাপে মুখ ঢেকে যারা অবস্থান করে, গণবিরোধী সন্ত্রাসী তৎপরতা চালায়, নিরীহ মানুষকে হত্যা করে, স্বাধীন জাতির সার্বভৌমত্বের ভিত্তিমুলে আঘাত করতে বিশ্ব সন্ত্রাসীদের সঙ্গে হাত মেলায়- তাদের ব্যাপারে সংসদকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, আল-কায়দা ও তালেবানিরা এখন নয়, ২০০১ সালের পর বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তারা মাদ্রাসায় মাদ্রাসায় ট্রেনিং দিয়েছে। আল-কায়দার সঙ্গে তখন থেকেই বিএনপি ও জামায়াত জড়িত ছিল। পাকিস্তানের সংসদে গৃহীত প্রস্তাবই প্রমাণ করে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক একটি চক্র গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। আল-কায়দাকে বুঝিয়ে দিতে হবে এটি পাকিস্তান-আফগানিস্তান নয়, এটি বাংলাদেশ

তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, বাংলাদেশ সম্পূর্ণ স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। ভাষার মাসে আল-কায়দা প্রধান জাওয়াগিরি মুক্তিযুদ্ধের ওপর আঘাত হেনেছেন। খালেদা জিয়া, জামায়াতে ইসলাম, হিযবুত তাহেরী ও হেফাজতের একাংশ আল-কায়দা নেটওয়ার্কের সঙ্গে জড়িত। হেফাজতের তান্ডবের সঙ্গে জড়িত ও নেতৃত্বদানকারী নেতাদের গ্রেফতার করলে জাতি জানতে পারতো এ কর্মকান্ডে কত হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। বিএনপি ও জামায়াতের কোন কোন নেতা ওই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত ছিল।

ঢাকা জার্নাল, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৪।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.