আলীমের যুদ্ধাপরাধের রায় বুধবার

অক্টোবর ৮, ২০১৩

ALim-bg20131007231538ঢাকা জার্নাল: একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত সাবেক মন্ত্রী বিএনপি নেতা আব্দুল আলীমের মামলার রায় দেওয়া হবে বুধবার।
চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ রায় ঘোষণা করবেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হচ্ছেন বিচারপতি মোঃ মুজিবুর রহমান মিয়া ও শাহিনুর ইসলাম।
গত ২২ সেপ্টেম্বর মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষ হওয়ায় রায় ঘোষণা অপেক্ষমান (সিএভি) রেখেছিলেন ট্রাইব্যুনাল-২। ওই দিনই রাষ্ট্রপক্ষের (প্রসিকিউশনের) আবেদনের ভিত্তিতে আব্দুল আলীমের জামিন বাতিল করে তাকে কারাগারে পাঠান ট্রাইব্যুনাল।

মামলার ধারাবাহিক কার্যক্রম
গত ৪ থেকে ১১ সেপ্টেম্বর এবং ২২ সেপ্টেম্বর মোট ৫ কার্যদিবসে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ও অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত। অন্যদিকে গত ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ৬ কার্যদিবসে আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট আহসানুল হক হেনা ও অ্যাডভোকেট আবু ইউসুফ মোঃ খলিলুর রহমান।

গত ২৭ আগস্ট থেকে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আলীমের পক্ষে ৩ জন সাফাই সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। তারা হচ্ছেন মামুনুর রশিদ, মো. মোজাফফর হোসেন ও আলীমের ছেলে সাজ্জাদ বিন আলীম। তাদেরকে জেরা করেছেন রাষ্ট্রপক্ষ।

অন্যদিকে আলীমের বিরুদ্ধে গত বছরের ৬ আগস্ট থেকে এ বছরের ২২ আগস্ট পর্যন্ত তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) এজেডএম আলতাফুর রহমানসহ রাষ্ট্রপক্ষের মোট ৩৫ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। তবে ১৯তম সাক্ষী আবেদ হোসেনকে বৈরি ঘোষণা করে জেরা করেছেন প্রসিকিউশন। অন্যদিকে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেওয়া ২ জনের জবানবন্দিকেই সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল।

ঘটনার সাক্ষী অন্য ২৫ জন হলেন, আব্দুল মোমেন, মোহাম্মদ সাইদুর রহমান, নুরুল ইসলাম, মোল্লা শামসুল আলম, আব্দুস সামাদ মণ্ডল, সোলায়মান আলী ফকির, গোলাম রসুল, বিউটি খানম, জাহিদুল ইসলাম, আবু সাইদ জোয়ার্দ্দার, দিলীপ কুমার চক্রবর্তী, লাইলী বেগম, ডা. কাজী এজাজ আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, মো. মোজাম্মেল হোসেন, একেএম মাহবুবর রহমান, আব্দুস সোবহান সর্দার, মোস্তাফিজুর রহমান, সরদার আব্দুল হাফিজ, আব্দুল হামিদ সাকিদার, এএইচএম মুতাসিম বিল্লাহ, মো. আব্দুল হাই, ভগীরথ চন্দ্র বর্মণ, অজিত মোহন্ত এবং যোগেন চন্দ্র পাল।

আর জব্দ তালিকার অন্য ৮ সাক্ষী হলেন পিআইবির ক্যাটালগার রবিউল আনাম, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ডকুমেন্টেশন অফিসার আমেনা খাতুন, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের গবেষণা কর্মকর্তা কাম লাইব্রেরিয়ান একেএম মোমিনুল ইসলাম, বাংলা একাডেমীর ভারপ্রাপ্ত প্রধান গ্রন্থাগারিক মো. মোবারক হোসেন, বাংলা একাডেমীর সহকারী গ্রন্থাগারিক এজাবউদ্দিন মিয়া, বগুড়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক বাংলাদেশ পত্রিকার সাবেক বিজ্ঞাপন ম্যানেজার মো. রফিকুল ইসলাম সুজন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার লাইব্রেরিয়ান এসআই আনিসুর রহমান এবং জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার নবীবুর রহমান। আসামিপক্ষ তাদের জেরা শেষ করেছেন।

অন্যদিকে আলীমের বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেওয়া প্রয়াত দুলু তালুকদার ও আকাম উদ্দিন সরকারের জবানবন্দিকেই সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
গত বছরের ১১ জুন ৭ ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের মোট ১৭টি অভিযোগে আলীমকে অভিযুক্ত করেন ট্রাইব্যুনাল-২।

গত বছরের ১৫ মার্চ আলীমের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করেন প্রসিকিউশন। একাত্তরে হত্যা, লুণ্ঠনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আলীমের বিরুদ্ধে ৩ হাজার ৯০৯ পৃষ্ঠার তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দেওয়া হয়। ২৭ মার্চ ট্রাইব্যুনাল-১ আলীমের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ আমলে নেন।

আনুষ্ঠানিক অভিযোগে আব্দুল আলীমের বিরুদ্ধে ২৮টি অভিযোগ আনা হয়েছিল। এর মধ্যে ১৭টি আমলে নিয়ে অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল-২।

পরে গত বছরের ১৬ এপ্রিল আলীমের মামলাসহ তিনটি মামলা ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে ট্রাইব্যুনাল-২ এ স্থানান্তর করা হয়।

যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০১১ সালের ২৭ মার্চ জয়পুরহাটের বাড়ি থেকে আলীমকে গ্রেফতার করা হয়। ৩১ মার্চ তাকে ১ লাখ টাকায় মুচলেকা এবং ছেলে ফয়সাল আলীম ও আইনজীবী তাজুল ইসলামের জিম্মায় জামিন দেন ট্রাইব্যুনাল। এরপর বেশ কয়েক দফা এই জামিনের মেয়াদ বাড়ানো হয়।
আলীমের বিরুদ্ধে যতো অভিযোগ

আলীমের বিরুদ্ধে আনা ১৭টি অভিযোগের মধ্যে ১৫টিতে বিভিন্ন ঘটনায় মোট ৫৮৫ জনকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। বাকি দু’টি অভিযোগ আনা হয়েছে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, আটক ও দেশান্তরে বাধ্য করার ঘটনায়। এসব অভিযোগ আনা হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন’১৯৭৩ এর ৩(১), ৩(২)(এ), ৩(২)(সি), ৩(২)(জি), ৩(২)(আই), ২০ (২) এবং ৪ (১) ও ৪ (২) ধারা অনুসারে।

হত্যার অভিযোগের ১৫টি ঘটনার মধ্যে তিনটি গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে, যাতে মোট ৪০৬ জনকে হত্যা করা হয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। শহীদদের বেশিরভাগই ছিলেন হিন্দু সম্প্রদায়ের।

এছাড়া যুদ্ধাপরাধের ঘটনায় ‘সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটির’ জন্যও অভিযুক্ত হয়েছেন আব্দুল আলীম।

আলীমের বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ২০ এপ্রিল বিকেলে আলীম পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি থানার দমদমা গ্রামের মেহের উদ্দিন চৌধুরীর (মৃত) বাড়িতে হামলা চালান। ওই বাড়িতে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। যার ফলে তিনি দেশান্তরিত হতে বাধ্য হন।

দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, ২৬ এপ্রিল আলীম পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে মেজর আফজাল, পাকিস্তানি সেনা ও শান্তি কমিটির সদস্যদের নিয়ে কড়ই কাঁদিপুর এলাকার হিন্দু অধ্যুষিত গ্রাম কড়ই, কাঁদিপুর, চকপাড়া, সোনারপাড়া, পালপাড়া, মুন্সিপাড়া গ্রামে অতর্কিতে সশস্ত্র হামলা চালান। হামলায় হিন্দুদের বাড়িঘরে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের পর ৩৭০ জন নিরস্ত্র হিন্দুকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে হত্যা করা হয়। অশ্বিনী কুমার দেবনাথ নামের এক ব্যক্তিকে জীবন্ত কবর দেওয়া হয়।

তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ১৮ জুন আলীমের নির্দেশ ও প্ররোচনা অনুসারে, শান্তি কমিটির সদস্য রিয়াজ মৃধা ১১ জন পাকিস্তানি সেনা নিয়ে জুমার নামাজের আগে ও পরে ২২ জন মুসল্লিকে ধরে আনেন। মসজিদের আশপাশ থেকে তারা আরও পাঁচশ নিরস্ত্র মানুষকে ধরে এনে জনৈক আফাজের বাড়ির উঠানে তিনটি সারিতে দাঁড় করায়। রিয়াজ মৃধা পাকিস্তানি সেনাদের একটি তালিকা দেন, যা অনুসরণ করে সেনারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ও আওয়ামীপন্থী ২৮ জনকে চিহ্নিত করে। বাকিদের চলে যেতে দেওয়া হয়। এরপর চিহ্নিত ২৮ জনকে হাত বেঁধে একটি মাটির ঘরে নিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়। ২২ জন মারা যান, বাকিরা পালিয়ে যেতে সমর্থ হন।
চতুর্থ অভিযোগে বলা হয়েছে, মে মাসের প্রথম দিকে একদিন সকালে আলীমের নির্দেশ অনুসারে পাকিস্তানি সেনাদের শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা রেলগাড়িতে করে বকুলতলা নামক স্থানে যান। সেখান থেকে তারা দু’টি ভাগে বিভক্ত হয়ে কোকতারা, ঘোড়াপা, বাগজানা, কোটাহারা গ্রামের নিরস্ত্র নিরীহ মানুষের ওপর হামলা ও লুটপাট চালায়। এ সময় ১৯ জন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোককে হত্যা করা হয়।

পঞ্চম অভিযোগে বলা হয়েছে, মে মাসের ৯ থেকে ১৫ তারিখের মধ্যে আলীমের নির্দেশ ও উস্কানিতে রাজাকার, শান্তি কমিটির সদস্য ও পাকিস্তানি সেনারা জয়পুরহাটের দক্ষিণ পহুনন্দা গ্রামের মিশন স্কুলে যায়। সেখানে ৫০-৬০ জন থেকে যায়। বাকিরা পাগলা দেওয়ান নামক জায়গায় গিয়ে কয়েকজন গ্রামবাসীকে ডেকে তাদের দিয়ে কয়েকটি গর্ত খনন করায়। ওই গর্তে অপরিচিত ৬৭ জন নিরস্ত্র হিন্দু সম্প্রদায়ের লোককে কবর দেওয়া হয়। এর মধ্যে সাতজনকে গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে হত্যা করা হয়েছিল।

ষষ্ঠ অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের মে মাসের প্রথম দিকে আক্কেলপুরের আবদুস সালাম ও আরও নয়জন নিরস্ত্র ব্যক্তি ভারত যাওয়ার পথে নূরপুর গ্রামে পৌঁছানোর পরে বেলা ১১টার দিকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, শান্তি কামিটির সদস্য ও রাজাকাররা তাদের ধরে স্থানীয় সৈয়দ আলীর বাড়িতে আটকে রাখে। পরে তাদের আক্কেলপুর রেলস্টেশনের বিশ্রামকক্ষে নিয়ে যাওয়ার পর বিষয়টি আলীমকে জানানো হলে তিনি তাদের শেষ করে দেওয়ার নির্দেশ দেন। তাদের পাকিস্তানি সেনাদের হাতে তুলে দেওয়া হলে কোকতারা গ্রামের বকুলতলা এলাকায় নয়জনকে হত্যা করা হয়। মোফাজ্জল নামের এক ব্যক্তি পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।

সপ্তম অভিযোগে বলা হয়েছে, ২৬ মে আলীমের পরামর্শ ও নির্দেশ অনুসারে রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনারা জয়পুরহাটের পাঁচবিবি থানার নওদা গ্রামে অভিযান চালিয়ে ইলিয়াস উদ্দিন সর্দার, ইউসুফ উদ্দিন সর্দার, ইউনুস উদ্দিন সর্দার এবং আবদুল কাদের মণ্ডল নামের চারজন নিরস্ত্র মানুষকে ধরে বালিঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) কার্যালয়ে আটকে রাখে। পরে তাদের কালীপুকুরের পাশে নিয়ে হত্যা করা হয়।

অষ্টম অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের মে মাসের প্রথম দিকে আলীম পাকিস্তানি মেজর আফজালকে সঙ্গে নিয়ে ক্ষেতলাল থানার উত্তরহাট শহর নামের একটি স্থানে পাঁচ-সাতশ’ জনের একটি সমাবেশে যান। সেখানে তিনি বলেন, ‘হিন্দুদের ক্ষমা করা যাবে না। এদের যা পাও লুট করে নাও।’ এই উস্কানিমূলক বক্তব্যের পরে মে মাসের শেষদিকে হিন্দুপল্লী, উত্তরহাট শহর, হারুনজাহাট এলাকায় হিন্দু জনগণের ওপর হামলা ও লুটপাট চালানো হয়। ওই এলাকা থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের ১০ জন লোককে ধরে শাওনলাল বাজলার গদিঘরে স্থাপিত শান্তি কমিটির কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হলে আলীম তাঁদের হত্যার নির্দেশ দেন। পরে ওই ১০ জনকে খঞ্জনপুর কুঠিবাড়ি ঘাট এলাকায় নিয়ে হত্যা করা হয়।

নবম অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৪ জুন শান্তি কমিটির সদস্যরা মুক্তিযোদ্ধা সন্দেহে ১৫ জন যুবককে ধরে নিয়ে শাওনলাল বাজলার গদিঘরে শান্তি কমিটির অফিসে আটকে রাখেন। সেখানে মেজর আফজালের সঙ্গে পরামর্শ করে আলীম তাদের হত্যার সিদ্ধান্ত নেন। পরে ওই সিদ্ধান্ত অনুসারে তাঁদের পশ্চিম আমাত্রা গ্রামে নিয়ে নির্যাতন শেষে হত্যা করে গণকবর দেওয়া হয়।

দশম অভিযোগে বলা হয়েছে, জুনের শেষ দিকে আলীমের সিদ্ধান্ত অনুসারে রাজাকার ও শান্তি কমিটির সদস্যরা ২৬ জন ব্যক্তিকে মুক্তিযোদ্ধা সন্দেহে ধরে এবং একটি ট্রাকে করে জয়পুরহাট রেলস্টেশনে নিয়ে যান। এ সময় আলোখেলা স্টুডিওর মালিক মোতাসিম বিল্লাহ নামের এক ব্যক্তিকে আলীম নিয়ে আসেন এবং তিনি ওই ২৬ জন আটক ব্যক্তির সঙ্গে আলীমের ছবি তোলেন। পরে তাদের জয়পুরহাট কলেজে নিয়ে হত্যা করা হয়।

১১তম অভিযোগে বলা হয়েছে, ২৫ জুন থেকে ৩০ জুনের মধ্যে কোনো একদিন ভারতগামী বেশ কয়েকজনকে আটক করে আলীমের সহযোগী ও পাকিস্তানি সেনা সদস্যরা। আটককৃতদের শাওনাল বাজলার গদি ঘরে শান্তি কমিটির অফিসে আলীমের কাছে আনা হয়। পরে খানজানপুর কুঠিবাড়ি ব্রিজের কাছে তাদের গুলি করে হত্যা করা হয় এবং তাদের মৃতদেহগুলো নদীতে ফেলে দেওয়া হয়।

১২তম অভিযোগে বলা হয়েছে, ২৪ জুলাই আলীমের নির্দেশে জয়পুরহাটের কাজিপাড়া থেকে আওয়ামী লীগ নেতা ডা. আবুল কাশেমকে আটক করে নির্যাতন চালায় রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনারা। ২৬ জুলাই সন্ধ্যায় ডা. আবুল কাশেমকে খানজানপুর কুঠিবাড়ি ব্রিজের কাছে নিয়ে হত্যা করা হয়।
১৩তম অভিযোগে বলা হয়েছে, সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী জয়পুরহাট সরকারি ডিগ্রি কলেজ থেকে ১১ জন যুবককে ধরে নিয়ে ট্রাকে করে বারঘাটির কাছে একটি জায়গায় নিয়ে যায়। আলীম তখন সেখানে গিয়ে তাদের হত্যার নির্দেশ দেন। পরে ১১ যুবককে ট্রাক থেকে বারঘাটি পুকুরের দক্ষিণ পাশে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে।

১৪তম অভিযোগে বলা হয়েছে, ৭ অক্টোবর আলীমের আদেশে জয়পুরহাটের সিও অফিসের সামনে থেকে মৃত আলহাজ আব্দুর রহিমের ছেলে মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল করিম ও অন্য দু’জনকে ধরে নিয়ে যায় শান্তি কমিটির সদস্য, রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনারা। পরে আলীমের নির্দেশে ও উপস্থিতিতে তাদের খানজাহানপুর কুঠিবাড়ি ঘাটে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। তাদের মরদেহও খুঁজে পাওয়া যায়নি।

১৫তম অভিযোগে বলা হয়েছে, আলীমের নির্দেশে ২৫ অক্টোবর ২৫ জন বাঙালিকে আটক করে জয়পুরহাট সুগার মিলের কাছে পাকিস্তানি সেনা ক্যাম্পে নেওয়া হয়। তাদেরকে ৮ রাত আটক রাখার পর আলীমের নির্দেশে হত্যা করা হয়।

১৬তম অভিযোগে বলা হয়েছে, পাঁচবিবি থানার সোলায়মান আলী ফকির, আব্দুল খালেক, আব্দুস সামাদ ও আফতাব হোসেন দেশান্তরি হতে বাধ্য হন আলীমের কারণে।
১৭তম অভিযোগে বলা হয়েছে, নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে বীর মুক্তিযোদ্ধা ইপিআরের ১৭ উইংয়ের সুবেদার মেজর জব্বল হোসেন গুরুতর আঘাত পেয়ে জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি থানার ধূরইল গ্রামের নাজিম উদ্দিনের বাড়িতে আশ্রয় নেন। খবর পেয়ে আলীম পাকিস্তানি সেনা, স্থানীয় শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনীর সহায়তায় ঈদুল ফিতরের দিন নাজিম উদ্দিনের বাড়িতে হামলা করে জব্বল হোসেনকে ধরে জয়পুরহাটের শাওনাল বাজলার গদি ঘরে শান্তি কমিটির অফিসে নিয়ে আসেন। পরে আলীম তাকে হত্যা করেন।

ঢাকা জার্নাল, অক্টোবর ০৮, ২০১৩

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.