‘অসহায়’ মানবাধিকার কমিশন

মে ২৫, ২০১৩

mejanur-rohoman-300x224ঢাকা জার্নাল: বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কমাতে দেশের মানবাধিকার কমিশন চেষ্টা করেও কোন ফল পাচ্ছেনা৷ কারণ সুপারিশ ছাড়া কমিশন আর কিছুই করতে পারেনা৷ কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান এই অসহায়ত্বের অবশ্য কথা স্বীকারও করেছেন৷

অ্যামনেষ্টি ইন্টারন্যাশনালের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরও বাংলাদেশে ৩০ জনকে বিনা বিচারে হত্যা করা হয়েছে৷ আর এসব হত্যাকাণ্ড ঘটেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে৷ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলিসহ ১০ জনকে গুমের অভিযোগও আছে তাদের বিরুদ্ধে৷ এছাড়া রাজিনৈতিক সহিংসতায় মৃত্যু, নারীর প্রতি সহিংসতা, সংখ্যালঘুদের উপাসনালয় ও বাড়িঘরে হামলা, কারখানায় আগুনে শ্রমিকদের মৃত্যুসহ বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা দিক তুলে ধরা হয়েছে৷ গত ডিসেম্বর থেকে রাজনৈতিক সহিংসতার পাশাপাশি বিরোধী দলের সভা সমাবশে পুলিশ এবং সরকার সমর্থকদের হামলার বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে৷

অ্যামনেষ্টির প্রতিবেদনে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বিনা বিচারে হত্যাকাণ্ডের যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ড. মিজানুর রহমান বলেন, দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে তিনি এর বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন৷ তাঁদের কমিশন এরকম অনেক ঘটনা তদন্ত করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়েরের সুপারিশও করেছেন৷ কিন্তু তাদের সুপারিশে তেমন কোন কাজ হয়নি৷

তিনি বলেন, “সুপারিশ করা ছাড়া তেমন কিছু করার নেই৷ ফলে তাদের সুপারিশ কার্যকর হয়না৷” তিনি মনে করেন, সরকার যদি তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ করে এবং তাদের জবাবদিহিতা থাকে, তাহলে বিনা বিচারে হত্যাকাণ্ড শুন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব৷

তিনি আরও বলেন, “সরকারকে অবশ্যই সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে হবে৷ বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে সংখ্যালঘুরা রাজনৈতিক কারণে ব্যাপকভাবে নির্যাতনে শিকার হয়েছেন৷ যারা করেছে, তাদের শাস্তি দিলেই চলবেনা৷ নির্যাতিতদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে হবে৷”

ড. মিজান বলেন, “মানবাধিকারের সঙ্গে রাজনৈতিক পরিবেশ এবং গণতান্ত্রিক চর্চা নিবিড়ভাবে জড়িত৷ তাই বিরোধী দলকে যেমন দমন করা যাবেনা, তেমনি বিরোধী দলকেও সহিংসতা পরিহার করতে হবে৷ তা না হলে সাধারণ মানুষের মানবাধিকার রক্ষা কঠিন হয়ে পড়ে৷”

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “মানবাধিকার কমিশনকে কার্যকরভাবে কাজ করতে দিতে হবে৷ কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন ঐচ্ছিক বিষয়ে পরিণত হলে কমিশন যতই কথা বলুক, তাতে কাজের কাজ কিছু হবেনা৷ তিনি বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় কমিশনের মামলা করার ক্ষমতা আছে সত্য৷ তবে মামলা পরিচালনা করার লোকবল কমিশনের নেই৷ আর কমিশন মামলা করতে গেলে তাদের শুধু তাই নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হবে৷ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্তের কাজ বাধাগ্রস্ত হবে৷”

ড. মিজানের মতে, রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং জবাবদিহিতাই পারে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা কমাতে৷

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.