আলিমের অমৃত্যু কারাদণ্ড

অক্টোবর ৯, ২০১৩

image_57643ঢাকা জার্নাল: একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত সাবেক বিএনপি নেতা ও মন্ত্রী আব্দুল আলীমের বিরুদ্ধে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। আলীমের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা ও অগ্নিসংযোগের মোট নয়টি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ার পরও বয়সের বিবেচনায় তার বিরুদ্ধে এ রায় দেয়া হয়েছে।

আলীমের বিরুদ্ধে মোট ১৭টি অভিযোগ আনা হয়। এর ১, ২, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০, ১২ ও ১৪ নম্বর অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। ৩, ১১, ১৩, ১৫, ১৬ ও ১৭ নম্বর অভিযোগ প্রসিকিউশন প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এছাড়া ৪ ও ৫ নম্বর অভিযোগে কোনো সাক্ষী হাজির করতে পারেনি প্রসিকিশন।

বুধবার সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারপতি শাহীনুর ইসলাম রায়ের ১৯১ পৃষ্ঠার সারসংক্ষেপ পড়া শুরু করেন। ট্রাইব্যুনালের অপর বিচারপতি মো. মুজিবুর রহমান মিয়া রায়ের দ্বিতীয় অংশ পড়েন। এরপর ট্রাইব্যুনাল প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান সাজা ঘোষণা করেন।

এর আগে ৯টা ৪৫ মিনিটের দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতাল থেকে একটি সাদা রঙের অ্যাম্বুলেন্সে করে আলীমকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনা হয়। এরপর অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামিয়ে হুইল চেয়ারে করে ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাকে এজলাসে উঠানো হয়।

গত ২২ সেপ্টেম্বর উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান (সিএভি) রাখেন। ওইদিন আলীমের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এরপর থেকে তিনি কারাগারে আছেন।

গত মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনাল আলীমের রায়ের জন্য বুধবার দিন ধার্য করেন। আদেশের পর প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম আলীমের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করে বলেন, ‘আমরা আসামি আব্দুল আলীমের বিরুদ্ধে আনা ১৭টি অভিযোগের মধ্যে ১৫টি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। এজন্য আলীমের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রত্যাশা করছি।’

অবশ্য আসামিপক্ষের আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আলীম জয়পুরহাটের একজন জনপ্রিয় নেতা। প্রসিকিউশন তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এনেছেন তা বিস্ময়কর। আলীমের বিরুদ্ধে আনা কোনো অভিযোগের সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন না। তিনি খালাস পাবেন বলে আমরা আশা করছি।’

২০১২ সালের ১১ জুন আলীমের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। এরপর টানা এক বছর তিন মাস শেষে মামলার কার্যক্রম শেষ হয়।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়। এর আগে গত ৪ থেকে ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চার কার্যদিবসে প্রসিকিউশন প্রথম পর্যায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন।

আলীমের বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তাসহ প্রসিকিউশনের ৩৫ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। এছাড়া তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেয়া দুই জনের জবানবন্দি সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল। এদিকে আলীমের পক্ষে তিন জন সাফাই সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন।

এর আগে গত বছরের ২৩ মে আলীমের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করার জন্য ট্রাইব্যুনাল আদেশের দিন ধার্য করেন। ওইদিন একই সঙ্গে তার জামিনের মেয়াদ ১১ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

উল্লেখ্য, গত ১৫ মার্চ আব্দুল আলীমের আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) রেজিস্ট্রারের কাছে দাখিল করেন প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত। গত ২৭ মার্চ তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল।

মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বিশেষ শর্তে জামিনে থাকা আলীমের বিরুদ্ধে তিন হাজার ৯০৯ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। এতে সাত ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের ২৮টি ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয় ট্রাইব্যুনালে। পরে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আনীত মোট ২৮টি ঘটনার ১৭টি আমলে নিয়ে ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ গঠন করেন।

মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গত বছরের ২৭ মার্চ জয়পুরহাটের নিজ বাড়ি থেকে আলীমকে গ্রেপ্তার করা হয়। ৩১ মার্চ তাকে এক লাখ টাকায় মুচলেকা এবং ছেলে ফয়সাল আলীম ও আইনজীবী তাজুল ইসলামের জিম্মায় জামিন দেন ট্রাইব্যুনাল। পরে শুনানিতে পর্যায়ক্রমে কয়েক দফা এই জামিনের মেয়াদ বাড়ানো হয়।

ঢাকা জার্নাল, অক্টোবর ০৯, ২০১৩

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.