পথের দুর্ভোগে ঘরমুখী মানুষ

আগস্ট ৫, ২০১৩

images (2)ঢাকা জার্নাল: দুটি সড়ক দুর্ঘটনার কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে রোববার ৫০ কিলোমিটারজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। এ সময় ঢাকা ও চট্টগ্রাম দুই দিকেরই যানবাহনগুলো পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা আটকে ছিল। কয়েকটি ট্রেনেরও ছিল যাত্রা বিলম্ব। এ কারণে গতকাল প্রথম দিনেই ঈদ উপলক্ষে ট্রেন ও বাসের অগ্রিম টিকিটে ঘরমুখী মানুষ পড়ে পথের দুর্ভোগে।

হাইওয়ে পুলিশ, পরিবহনশ্রমিক ও চালকের সঙ্গে কথা বলা জানা গেছে, রোববার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লার দাউদকান্দির জিংলাতলীতে একটি লোহাবোঝাই ট্রাক ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে দাউদকান্দি টোল প্লাজা থেকে ইলিয়টগঞ্জ পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। সকাল আটটার দিকে মহাসড়কের কুমিল্লার আলেখারচর এলাকায় মালবাহী কাভার্ড ভ্যান ও বালুবাহী ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ জন্য আলেখারচর বিশ্বরোড থেকে ইলিয়টগঞ্জ পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার এলাকায় তীব্র যানজট হয়।

এ দুটি দুর্ঘটনার কারণে মহাসড়কের দাউদকান্দি টোল প্লাজা থেকে আলেখারচর পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। বেলা ১১টার দিকে দুর্ঘটনার শিকার যানবাহনগুলো রেকার দিয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু যান চলাচল কিছুটা শুরু হতে দুপুর গড়িয়ে যায়। সন্ধ্যা পর্যন্ত মহাসড়কে যানজট ছিল।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ধরে কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও বৃহত্তর নোয়াখালীর প্রায় ১০ জেলার মানুষ চলাচল করে। এ ছাড়া ব্যস্ততম চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগও এই মহাসড়ক ধরে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের হিসাবে, এই মহাসড়ক দিয়ে দৈনিক ২০ থেকে ২৫ হাজার যানবাহন চলাচল করে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে কুড়িল ফ্লাইওভার উদ্বোধন উপলক্ষে গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে অন্তত চারটি ট্রেনের যাত্রীদের আটকে রাখা হয় কমলাপুর, তেজগাঁও, ঢাকা সেনানিবাস ও বিমানবন্দর রেলস্টেশনে।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, দেওয়ানগঞ্জ ঘাটগামী অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস ট্রেন কমলাপুর স্টেশন থেকে এক ঘণ্টা পাঁচ মিনিট দেরিতে ছাড়ে। অগ্নিবীণা ট্রেনটি কমলাপুর ছাড়ার কথা ছিল নয়টা ৪০ মিনিটে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকামুখী তিতাস কমিউটার ট্রেন ৩৭ মিনিট বিমানবন্দর স্টেশনে আটকে রাখা হয়। দিনাজপুরগামী একতা এক্সপ্রেস তেজগাঁও স্টেশনে দাঁড়িয়ে ছিল ৩২ মিনিট। তুরাগ এক্সপ্রেস ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে ছিল ৩২ মিনিট। এর রেশ ধরে বেশ কিছু ট্রেন নির্ধারিত সময়ের ২০ মিনিট থেকে আধা ঘণ্টা দেরিতে ঢাকা ছাড়ে এবং ঢাকায় পৌঁছেছে।

গতকাল ট্রেন ও বাসের অগ্রিম টিকিটের যাত্রার প্রথম দিনটা দুর্ভোগ দিয়ে শুরু হয়েছে ঘরমুখী মানুষের। ঈদের সময় যত এগিয়ে আসবে, সড়কের দুরবস্থা, যানজট ও ভোগান্তি তত বাড়বে বলে মনে করছেন পরিবহন খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। পরিবহনশ্রমিক ও মালিকেরা জানিয়েছেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কেও খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। মহাসড়ক চার লেন করার কাজ চলমান বলে কয়েকটি বিকল্প পথ দিয়ে যানবাহন চালানো হচ্ছে। এসব বিকল্প সড়কে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। এ কারণে যানবাহন চলাচল করছে ধীরগতিতে।

ঢাকা-ময়মনসিংহ পথে চলাচলকারী একটি পরিবহন কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, এই পথের দূরত্ব ১১০ কিলোমিটার এবং স্বাভাবিক সময়ে দুই থেকে তিন ঘণ্টায় যাওয়া যায়। এখন পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টার কমে আসা-যাওয়া করা যাচ্ছে না।

ট্রেন ও বাসের অগ্রিম টিকিটের জন্য এক রকম যুদ্ধ করতে হয়েছে ঘরমুখী মানুষকে। এখন আবার পথে পথে দুর্ভোগ। ১২ ও ১৩ আগস্ট জামায়াতে ইসলামী হরতাল ডেকেছে। এ কারণে ঢাকাবাসীর ফেরাটাও অনিশ্চয়তায় মোড়া।

ঢাকা-চট্টগ্রাম পথে মানুষের দুর্ভোগ: দাউদকান্দি (কুমিল্লা) প্রতিনিধি জানান, মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের কারণে যানবাহনগুলো এক রকম আটকে যায়। দীর্ঘক্ষণ ইঞ্জিন বন্ধ করে জট ছোটার অপেক্ষায় বসে থাকা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না চালক ও যাত্রীদের। এর মধ্যে সকাল থেকে ১১টা পর্যন্ত কুমিল্লা অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টি হয়। এ জন্য বাসে আটকে থাকা ঘরমুখী মানুষ নেমে একটু স্বস্তি পাবেন, সে সুযোগও ছিল না।

নোয়াখালী-ঢাকা পথের এশিয়া পরিবহনের চালক জাহাঙ্গীর আলম গতকাল দুপুরের দিকে জানান, ভোর সাড়ে পাঁচটায় নোয়াখালীর রামগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন। কিন্তু কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় এসে যানজটে আটকে যান। দাউদকান্দি টোল প্লাজা পর্যন্ত ৪৮ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা লেগেছে।

দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শাহীনুর রহমান বলেন, ট্রাকটি লোহা বোঝাই হওয়ায় উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন রেকার এনে অন্যত্র সরাতে তিন ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে। দুর্ঘটনায় মাইক্রোবাস, ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের চালক ও চালকের সহকারী আহত হন।
আমতলী হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মশিউর রহমান বলেন, দুর্ঘটনার সঙ্গে প্রবল বর্ষণ ও ঈদ উপলক্ষে যানবাহনের চাপে যানজটের তীব্রতা আরও বাড়ে।

দাউদকান্দির শহীদনগর রজনীগন্ধা কিন্ডারগার্টেনের সহকারী প্রধান শিক্ষক মার্জিয়ারা বলেন, তীব্র যানজটের কারণে রোজা রেখে গৌরীপুর থেকে শহীদনগর পর্যন্ত তিন কিলোমিটার পথ হেঁটে বিদ্যালয়ে পৌঁছাতে হয়েছে। দাউদকান্দির পিপিয়াকান্দি গ্রামের আবুল হাসেম জানান, ভোর ছয়টায় ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে বাসে উঠে দাউদকান্দি বিশ্বরোড এলাকায় যানজটে আটকা পড়েন। এরপর তিনি হেঁটে ও বিকল্প উপায়ে গন্তব্যে পৌঁছান।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.