মায়ের মৃত্যুর কারণ জানালো মিতা নূরের ছেলে

জুলাই ৬, ২০১৩

image_44630_0ঢাকা জার্নাল: সদ্য প্রয়াত টিভি অভিনেত্রী মিতা নূরের মৃত্যু নিয়ে গণমাধ্যমগুলোতে নানা গুঞ্জন চলছে। তার মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে অনেকে দাবি করছে। আর এ আত্মহত্যার জন্য পারিবারিক কলহকে দায়ী করা হচ্ছে। আবার অনেকে বিনোদন জগতের অন্ধকার অঞ্চলের দিকেও ইঙ্গিত করছে। এসব কিছু নিয়ে মিতার মৃত্যু এখনো রহস্যময়। তবে এ রহস্য নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি না করার জন্য তার পরিবারের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমগুলোকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। মিতার বড় ছেলে শেহজাদ নূর প্রিয় এমন একটি আবেদন জানিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন। তার সেই ইংরেজি লেখাটির বাংলা অনুবাদ বাংলামেইল পাঠকদের জন্য ছাপা হলো-

আমার মা আমার দেখা সবচেয়ে সংবেদনশীল ও বুদ্ধিমতী নারী । তিনি সচেতন থাকলে এই ধরনের কাজ করতেন না। অনেক সংবাদ মাধ্যম তাকে সংঘাতিক ভুলভাবে উপস্থাপন করেছে। কিন্তু আমি সবাইকে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে বলতে চাই, তার একটি সুখী এবং অসাধারণ পরিবার ছিল। মতানৈক্য পৃথিবীর প্রত্যেকটি ক্ষুদ্র পরিবারেই থাকে, তবে এখানে তেমন সিরিয়াস কিছু ছিল না।

আমার মার হয়তো অনেক বন্ধুই ছিলেন, তবে তার সবচেয়ে ভালো বন্ধু ছিলাম আমি। হয়তো আমি কখনোই সেটি সঠিকভাবে মূল্যায়ন করিনি, হয়তো আমি কখনোই এটি বুঝতে পারিনি যে তিনি আমাকে কতটা ভালোবাসতেন। তার মৃত্যুর আগের শেষ এক মাস মা অনেকগুলো ব্যাপারে তিনি বিষাদগ্রস্ত ছিলেন, সেগুলোর অধিকাংশই খুব ছোটখাটো বিষয়। তার অনেক মানুষের সঙ্গেই ছোট ছোট মতানৈক্য ছিল, যার মধ্যে আছে আমার বাবা এবং তার বাবা এবং আরো অনেকে। তবে সেগুলো খুবই সাধারণ মতপার্থক্য। তিনি সেসবের ব্যাপারে আমাকে সবই বলেছিলেন এবং আমি তাকে সবসময় বলেছি, সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে, এখানে দুশ্চিন্তার কিছুই নাই। তবে আমার আরো অন্য কিছু করা উচিৎ ছিল।

কিন্তু তারপর ব্যাপারগুলো আরো খারাপ হতে থাকে এবং তিনি সম্ভবত খুব খারাপ বোধ করেছিলেন। মার যখন খুব খারাপ লাগতো তখন তিনি ঘুমাতেন। অনেক বেশি সময় ঘুমানোর জন্য তিনি ঘুমের ওষুধ খেতেন। তিনি তার জীবনের শেষ দিনও এই একই কাজ করেছিলেন। তবে ওই রাতের ব্যাপারটি অন্যরকম ছিল। ওই ঘুমের বড়িগুলো তার সবকিছু নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ফেলেছিল। আমি জানি এটা তিনি নিজে থেকে করেননি। কিন্তু তার বিষাদগ্রস্ততা আর ওই ঘুমের বড়িগুলোর প্রতিক্রিয়া থেকেই এটি হয়েছিল। তা না হলে পৃথিবীর সব ছাড়লেও তিনি কখনো আমাকে আর আর ভাইকে একা ফেলে যেতেন না।

তিনি সবসময়ই কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে আমার সঙ্গে পরামর্শ করতেন এমনকি এটি সামান্য একটি ব্যাপার হলেও। তিনি যেটি করেছেন এটি তার সিদ্ধান্ত ছিল না। আমি জানি তিনি আমাদের সবাইকে অনেক ভালোবাসতেন। তিনি এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মা ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন। আমি তাকে ভালোবাসতাম এবং সবসময় বাসবো। তিনি আমার চিন্তা, স্বপ্ন, জীবন, ভাবনা সবকিছুকে সম্মান করতেন এমনকি নিজের চেয়ে বেশি। আমি যদি আমার জীবনে কোনোদিন সফল হই, তার পেছনের পুরো কৃতিত্বই আমার মায়ের।

আমার মা এখনো আমার মধ্যে আছেন। তিনি আমাকে সবসময়ই বলবেন কী করবো আর কী করবো না।

যাই হোক বেশ কিছু টেলিভিশন এবং পত্রিকা যা দাবি করেছে তা সত্য নয়। আমার মা দুর্বলচিত্তের নারী ছিলেন না। তিনি দৃঢ়চেতা, স্মার্ট, সংবেদনশীল এবং চমৎকার মানুষ ছিলেন। যা হয়েছে তিনি তা চাননি। বরং যেটি হয়েছে তা হলো, তখন তিনি সচেতন ছিলেন না। হয়তো এর বেশিরভাগই আমার ভুল কারণ, আমি আমার মাকে বুঝতে পারিনি। আমার মনে হয় আমি ভালো ছেলে নই। কিন্তু আমি এটি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, মা যা করেছেন তিনি তার বোধবুদ্ধিতে করেননি।

এখন আমি মাকে যেটি বলতে পারি, ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি মা। শান্তিতে থাকো। যতদিন তোমার সঙ্গে আমার দেখা না হবে, আমি প্রতিদিন তোমাকে দেখতে যাবো।’

নিউজ মিডিয়াগুলো মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ভুল জিনিস লেখা বন্ধ করতে পারলে আমি সেটা অ্যাপ্রিশিয়েট করবো। তাদের গল্পগুলোর কারণে আমি এইসব লিখতে বাধ্য হয়েছি। আমাদের পরিবারের (সবাই- আমার দাদা-দাদি, নানা-নানি, আমার বাবা, ভাই, আন্টি, আঙ্কেল, কাজিনরা ইত্যাদি) সবাই দৈনিক প্রথম আলোকে সাক্ষাৎকার দিয়েছে এবং তারা প্রত্যেকেই শিগগিরই এই ব্যাপারে লিখবে। আমি আশা করি, এর ফলে সত্য উন্মোচিত করবে।

আমার মার ছিল একটি নিষ্কলঙ্ক খ্যাতি এবং নিষ্কলুষ চরিত্র। সবাই জানে, তিনি আমার, আমার ভাইয়ের এবং বাবার সঙ্গে কতটা সুখী ছিলেন। তাদের দাম্পত্য জীবন ২৪ বছরের এবং মাত্র সপ্তাহ দুই আগে আমরা তাদের ২৪তম বিবাহবার্ষিকী উদযাপন করেছি। এসব কিছুর পরে মিডিয়াকে আঙুল উঠানোর অধিকার কেউ দেয়নি।

মা এমন একজন মানুষ যাকে আমার সারা জীবন খুঁজে ফিরতে হবে। তার শিক্ষা, উপদেশ, চিন্তা আমাকে এবং আমার ভাইকে সারা জীবন পথপ্রদর্শন করার জন্য যথেষ্ট। আমরা দুজন অবশ্যই একদিন তার মুখ উঁচু করবো, ইনশাল্লাহ…। আমি তোমাকে ভালোবাসি মা।

ঢাকা জার্নাল: জুলাই ৫, ২০১৩।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.