পোশাক শিল্পের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ

মে ২৫, ২০১৩

0,,3999583_4,00ঢাকা জার্নাল: ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এবং ক্রেতারা বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং কাজের পরিবেশ উন্নয়নের তাগিদ দিচ্ছে৷ অবিলম্বে তা না করা হলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন জিএসপি সুবিধা প্রত্যাহারের হুমকি দিয়েছে৷

সাভারের রানা প্লাজায় মোট ৫টি তৈরি পোশাক কারখানা ছিল৷ সেই ভবন ধসের পরই চাপ তীব্র হয়েছে৷ এর আগে তাজরীন ফ্যাশানস-এ আগুনের পর পরিস্থিতি জটিল হতে থাকে৷ দাবি উঠতে থাকে বাংলাদেশের পোশাক কারখানার কাজের পরিবেশ এবং শ্রমিকদের নিরাপত্তার৷

ইউরোপীয় পার্লামেন্ট রীতিমত প্রস্তাব পাশ করে বলেছে দেশের পোশাক কারখানার উন্নতি না হলে বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে শুল্ক এবং কোটামুক্ত সুবিধা পাবে না৷ বাংলাদেশ এই সুবিধা পাওয়ায় সর্বোচ্চ পোশাক রপ্তানি হয় ইউরোপে৷ গত বছর বাংলাদেশ  মোট পোশাক রপ্তানির ৬০ ভাগ পাঠিয়েছে ইউরোপে৷ তার পরিমাণ প্রায় ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ এদিকে বাংলাদেশ তৈরি পোশাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি সুবিধা পায় না৷ তবে পাওয়ার জন্য দেন দরবার এবং শুনানি চলছে৷ কিন্তু কাজের পরিবেশ এবং শ্রমিক নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে সে আশা পূরণ নাও হতে পারে৷

বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার এই পরিস্থিতির জন্য প্রধানত মালিকদের দায়ী করে জানান, ‘‘মালিকদের অতি মুনাফা লোভী মনোভাবের কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে৷ তারা শ্রমিকদের সুযোগ সুবিধা দিতে চান না৷ কম মজুরিতে যেনতেন পরিবেশে পোশাক তৈরি করে মুনাফা লোটে৷ শ্রম আইন মানেনা এবং শ্রমিকদের কল্যাণ তহবিলের অর্থ তাদের জন্য ব্যয় করেনা৷”

তবে তিনি মনে করেন এজন্য ক্রেতাদেরও দায় নিতে হবে৷ তারা বাংলাদেশ থেকে কম দামে পোশাক কিনতে চান৷ তাই তারা যতই বলুন পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছেনা৷ কার্যকরভাবে পোশাক কারখানার শ্রমিকের কল্যাণ চাইলে এত কম দামে পোশাক কেনার মানসিকতা ছাড়তে হবে৷

এদিকে তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সহ সভাপতি শহীদুল জানান, তারা আন্তর্জাতিক চাপ বিবেচনায় রেখেই পোশাক শিল্পের কাজের পরিবেশ এবং শ্রমিক নিরাপত্তার জন্য কাজ করছেন৷ কিছু কারখানা বন্ধও করে দেয়া হয়েছে ঝঁকিপূর্ণ ভবন এবং অগ্নি নিরাপত্তা না থাকার কারণে৷ আর কয়েক মাসের মধ্যে পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি হবে৷ এজন্য সরকার, বিজিএমইএ একযোগে কাজ করছে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণা হলে পোশাক শ্রমিকদের মজুরিও বাড়বে৷ তাঁর কথা, আন্তর্জাতিক চাপ মোকাবিলা করে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প এগিয়ে যাবে৷

তবে তিনি মনে করেন, ক্রেতাদের পোশাকের সর্বনিম্ন দাম বেঁধে দেয়া উচিত৷ প্রতিযোগিতামূলকভাবে কম দামে পোশাক কেনার যে মানসিকতা, তা বাদ দিতে হবে৷ তাদের বুঝতে হবে সঠিক কর্মপরিবেশ, নিরাপত্তা এবং শ্রমিকদের বেতনের ওপরই পোশাকের দাম নির্ধারণ করা উচিত৷ এই দু’টিকে আলাদাভাবে বিবেচনার কোন সুযোগ নাই৷

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.