রেহানার হাত নেই শিল্পীর পা, লিজার দুটোই
মে ২৪, ২০১৩ ঢাকা জার্নাল: মানবতার ডাকে সাড়া দিয়ে ধসে পড়া রানা প্লাজার উদ্ধারকর্মীরা সংবর্ধনা নিতে এসে একে এক বলতে থাকেন ‘রেহেনার পা নেই, শিল্পীর নেই।আর লিজার হাত-পা দুটোই নেই।’
উদ্ধারের অভিজ্ঞতা বর্ণনা দিতে গিয়ে তারা নিজেরা এভাবেই কান্না আর কষ্টে ভেঙ্গে পড়েন তারা।
বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ক্যাফেরিয়ায় সংবর্ধনা দেয়া হয় ৩১ জন উদ্ধারকর্মীকে। ফ্রেন্ডস ফর হিউম্যানিটি নামের একটি সংগঠনের সংবর্ধনায় কষ্টানুভূতির এক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়।
উদ্ধারকর্মী আসমা আক্তার লিজা বলেন, “সহস্রাধিক লোক মারা গেছেন। কিন্তু যারা এখনো আহত অবস্থায় আছে তাদের দিকেও খেয়াল করা দরকার।’
আহত দুই নারীর ছবি দেখিয়ে তিনি বলেন, রেহানার পা নেই, শিল্পীর নেই হাত।
ওই দুজনকে উদ্ধৃত করে লিজা বলেন, “আমার হাত ছিলো, এখানে আমার পা ছিলো। কোথায় গেলো তা? আমার হাত ফিরিয়ে দাও, পা ফিরিয়ে দাও।
আমি তা পারি না। আমি কেবল হাত পাততে পারি। আমি আমার পা এগিয়ে দিতে পারি,” কান্নাভেজা কণ্ঠে বলেন লিজা।
ভবন ধসে নিহতের স্মরণে এ অনুষ্ঠানে এক মিনিট নিরবতা পালনের পর পুরো অনুষ্ঠান জুড়েই দর্শকদের মধ্যে ছিলো পিনপতন নীরবতা।
ধসের চতুর্থ দিনে রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপে চলছে উদ্ধার কাজ।নাট্যকর্মী লিজা সাভারে রানা প্লাজা ধসের পর থেকে সেখানকার উদ্ধার তৎপরতায় ছিলেন। এখনো হাসপাতালে অবস্থান করে আহতদের সেবা দিচ্ছেন তিনি।
স্বাভাবিকভাবে বক্তব্য শেষ করতে পারেননি লিজা। কথা বলতে বলতে এক পর্যায়ে তিনি বাকরুদ্ধ হয়ে যান। এরপর মাইক ফিরিয়ে দিয়ে মঞ্চ থেকে চলে যান।
উদ্ধারকর্মী আ স ম আল আমিন, এসএইচ সুমন, এমএইচ আকবরিও কাঁদেন এবং কাঁদান দর্শক-শ্রোতাদের।
তাদের বক্তব্যের সময় মঞ্চে উপবিষ্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকসহ অন্য অতিথিদেরকেও চোখ মুছতে দেখা যায়।
উদ্ধারকাজের অংশ নেয়া পুরান ঢাকা প্রভাতী আইডিয়াল স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র মনোয়ার হোসেন তুষার বলেন, “সবাই যখন উদ্ধারকাজে যায় তখন আমি এই ভেবে সেখানে যাই- ‘বড়রা যাইতে পারলে আমি যেতে পারব না কেন?”
গত ২৪ এপ্রিল ধসের পর উদ্ধার কাজে অংশ নিয়ে ৩০ এপ্রিল অসুস্থ হয়ে পড়েন ওমর ফারুক বাবু। প্রথমে সাভারের একটি হাসপাতালে, পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন তিনি। ৫ মে হাসপাতাল থেকে নিখোঁজ হওয়ার পর ৭ মে পাশের ওয়ার্ডে তার লাশ পাওয়া যায়।
ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিত একজনকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হাসপাতালে। ভবন ধসের তিন দিন পর শনিবার এই রকম বেশ কয়েকজনকে উদ্ধার করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ভবন ধসের ঘটনার পুনরাবৃত্তিরোধে দায়ী সবাইকে বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক খোন্দকার মোকাদ্দেম হোসেন, অধ্যাপক শাহিন ইসলাম, অধ্যাপক জিয়াউর রহমান ও ফ্রেন্ডস ফর হিউম্যানিটির সংগঠক আরিফুল হক কবির বক্তব্য রাখেন।
নিহত উদ্ধারকর্মী এজাজ উদ্দীন কায়কোবাদ এবং ওমর ফারুক বাবুর পরিবারের সদস্যরা অনুষ্ঠানে ক্রেস্ট গ্রহণ করেন। বাকি ২৯ জনকেও ক্রেস্ট দেয়া হয়।
এজাজ গত ২৮ এপ্রিল রাতে ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়া পোশাক শ্রমিক শাহীনাকে উদ্ধার করতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হন। পরে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
ঢাকা জার্নাল, মে ২৪, ২০১৩