বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আঘাত হানবে মহাসেন
মে ১৫, ২০১৩ ঘূর্ণিঝড়টি এগিয়ে আসায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল জেলা এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোকে ৭ এবং মংলা বন্দরে ৫ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দরে রেড এলার্ট থ্রি জারি করা হয়েছে। যদিও এটা বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা। ঘূর্ণিঝড়টি এগিয়ে আসার কারণে চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দরে সব ধরনের কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। নিরাপত্তাজনিত কারণে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের সব জাহাজকে বহির্নোঙ্গরে পাঠানো হচ্ছে।
আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়ার অংশ হিসেবে চট্টগ্রামে হযরত শাহ্ আমানত বিমানবন্দর ও কক্সবাজার বিমানবন্দর বুধবার বিকাল ৪টা থেকে সব ধরনের বিমান চলাচল বন্ধ থাকার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বরিশাল উপকূলীয় এলাকাসহ সব উপকূলীয় এলাকায় সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
কক্সবাজারে সব ধরনের সরকারি ছুটি বাতিল করে সরকারি কর্মকর্তাদের কাছাকাছি থাকতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার পর সব ধরনের প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে রাখার কথা জানিয়েছেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি আরো উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বৃহস্পতিবার ভোর নাগাদ চট্টগ্রামের কাছ দিয়ে খেপুপাড়া-টেকনাফ উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বুধবার রাত থেকে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
আবহাওয়া অধিদফতরের খবরে বলা হয়েছে, পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন’ স্থির রয়েছে। এটি বুধবার সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম এবং মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরো ঘণীভূত হয়ে উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার এবং সমুদ্রগামী জাহাজগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বুধবার দুপুরের পরই কঙবাজার উপকূলে ঘূর্ণিঝড়টি আছড়ে পড়বে। এ সময় এর গতিবেগ ঘণ্টায় ১১৫ থেকে ১৩৪ কিলোমিটারে ওঠানামা করবে। সঙ্গে প্রচুর বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী বৃষ্টিপাতের কারণেই মহাসেন দুর্বল হয়ে পড়বে। সন্ধ্যা ও রাতে ঝড়ের গতিবেগ কমে ৫৬ থেকে ৯৮ কিলোমিটার পর্যন্ত ওঠানামা করবে। বৃহস্পতিবারও কক্সবাজারে প্রচুর বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এদিন ঝড়ের গতি ৫৬ থেকে ৯৮ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠানামা করবে। তবে সন্ধ্যা ও রাতে কমে যাবে।
আবহাওয়া অফিস জানায়, বিদ্যমান গতিপথ পরিবর্তন না হলে বুধবার সন্ধ্যা নাগাদ ঘূর্ণিঝড় মহাসেন কক্সবাজারের উখিয়া উপকূলে আঘাত হানতে পারে। মঙ্গলবার রাতে মহাসেনের অবস্থান ছিল কক্সবাজার থেকে ১ হাজার ৪০ কিলোমিটার দূরে। ৫৪ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের গতি ছিল ৮৮ কিলোমিটার।
মহাসেন ক্রমেই উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে।