বইতে শুরু করেছে ‘সংলাপের সু-বাতাস’

মে ১৫, ২০১৩

2013-03-13-17-58-12-5140be34bd1ae-untitled-9ঢাকা জার্নাল: চরম অস্থিরতার মধ্যে হঠাত্‍ করে ‘সংলাপের সু-বাতাস’ বইছে দেশে৷ এর আগে সংলাপ নিয়ে নানা আলোচনা হলেও শর্তের বেড়াজালে আটকে ছিল সব কিছু৷ কিন্তু মঙ্গলবার সকাল থেকেই সরকারি দল ও প্রধান বিরোধী দলের নেতাদের সুর অনেকটাই নমনীয়৷

জাতিসংঘের মহাসচিবের বিশেষ দূত সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অসকার ফার্নান্দেজ তারানকো ঢাকা সফর করে সব রাজনৈতিক দলকে সংলাপে বসে সংকট সামাধানের জন্য যে চাপ দিয়েছেন, তাতেই বরফ গলতে শুরু করেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা৷

আওয়ামী লীগ নেতারা আভাস দিয়েছেন যে, খুব শিগগিরই দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সংলাপের আহবান জানিয়ে বিরোধী দলীয় নেত্রীর কাছে চিঠি পাঠাবেন৷ তবে বিরোধী দল ‘শর্তযুক্ত’ সংলাপের কথা বললেও শেষ পর্যন্ত যে চিঠি যাবে, তাতে ‘শর্তহীন’ সংলাপের আহবানই জানানো হবে৷ অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, বিএনপিও খানিকটা ছাড় দিয়ে ‘শর্তহীন’ সংলাপেই বসতে রাজি৷ অবশ্য শর্ত থাক আর না থাক দুই দলের সংলাপ যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়েই হবে, তা এখনই পরিষ্কার করে বলে দেয়া যায়৷

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলী খান বলেছেন, সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক অস্থিরতার অবসান হোক – তা দেশের সবাই চান৷ তাই কার আহবানে ‘সংলাপের সু-বাতাস’ বইছে সেটি বড় কথা নয়৷ আসলে কার্যকর পদক্ষেপ দেখতে চায় দেশবাসী৷

তিনি বলেন, সমস্যা আমাদের, তাই সমাধানও আমাদেরই করতে হবে৷ দুই নেত্রীকে আলোচনায় বসে সব সংকট নিরসনে একযোগে কাজ করতে হবে৷ তিনি বলেন, এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ছাড় বিএনপিকেই দিতে হবে৷ কারণ, তাদের অনেক নেতা কারাগারে আছেন৷ তাই দেশবাসীর স্বার্থে, দেশের স্বার্থে দু’পক্ষকেই নমনীয় হওয়ার আহবান জানিয়েছেন আকবর আলী খান৷

এরপরেও সরাসরি সংলাপ, না কারো মধ্যস্থতায় এই সংলাপ হবে – তা নিয়ে কথা উঠেছে৷

মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান মঙ্গলবার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করে তাঁকে সংলাপে ভূমিকা রাখার অনুরোধ করেছেন৷

অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক সহিংসতা নিরসনে নিরপেক্ষ ব্যক্তি হিসেবে স্পিকার ভূমিকা রাখতে পারবেন বলেই মনে করেন তিনি৷

তিনি বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক সহিংসতা নিরসনে একটি প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত৷ বর্তমান যে পরিস্থিতি তার প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক সহিংসতা মোকাবেলায় জনগণের অধিকার বাস্তবায়ন করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই৷ এই দৃষ্টিকোণ থেকে যদি খোলা মন নিয়ে সংলাপে বসা যায়, তাহলে নিশ্চয় এর একটা সমাধান হবে৷

মঙ্গলবার চিকিত্‍সার জন্য সিঙ্গাপুর যাওয়ার আগে বিমানবন্দরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও আশা প্রকাশ করে বলেছেন, অর্থবহ সংলাপের মাধ্যমেই রাজনৈতিক সংকটের উত্তরণ ঘটবে৷ তিনি বলেন, দেশবাসী বিশ্বাস করে একটি অর্থবহ সংলাপের মাধ্যমে বিরাজমান রাজনৈতিক সংকটের উত্তরণ ঘটবে৷ এছাড়া, বিএনপিও চায় যে, দেশে শান্তি ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হোক, সব সমস্যার সমাধান হোক৷

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, আগামী নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণেই অনুষ্ঠিত হবে৷ আর এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করার জন্য তা কোন পদ্ধতিতে হবে, তা প্রধান দুই দল বসে আলোচনার মাধ্যমেই ঠিক করবে৷ খুব শিগগিরই সংলাপের আভাস দিয়ে তিনি বলেছেন, দুই দলই খোলা মন নিয়ে আলোচনা করলে দেশের কোনো সংকটই আর থাকবে না৷

প্রসঙ্গত, চার দিন ধরে দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে আগামী নির্বাচন নিয়ে তাদের মতানৈক্য দূর করতে এবং দ্রুত সংলাপ শুরু করার তাগিদ দেন জাতিসংঘের মহাসচিবের বিশেষ দূত সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অসকার ফার্নান্দেজ তারানকো৷

সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সংলাপ দ্রুত শুরু হলেই সমাধান বের করা সহজ হবে৷ কারণ, সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে৷

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.