উদ্ধার অভিযান শেষ, এখনও অনেকে নিখোঁজ

মে ১৩, ২০১৩

0,,16766570_302,00ঢাকা জার্নাল: রানা প্লাজা ধসের ২০ দিনের মাথায় উদ্ধার অভিযান শেষ হয়েছে সোমবার রাতে৷ অভিযানে মোট ১১২৭টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে৷ আর জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ২৪৩৮ জনকে৷ কিন্তু অভিযান শেষ হলেও নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনের কান্না থামেনি৷

সাভারের বহুতল রানা প্লাজা ধসে পড়ে ২৪শে এপ্রিল সকালে৷ সাধারণ মানুষ ধসের পর পরই আটকে পড়া মানুষকে বাঁচাতে উদ্ধার অভিযানে নেমে পড়েন৷ এরপর সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ফায়ার সার্ভিসসহ সরকারের উদ্ধারকারীরা কাজ শুরু করেন৷

সোমবার রাতে উদ্ধার অভিযান শেষ করে ভবনের জয়াগা কাটাতার দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে৷ জায়গাটি সংরক্ষিত উল্লেখ করে জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ বলে সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে৷ সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল হাসান সোহারোয়ার্দি রাতে উদ্ধার অভিযান শেষ হওয়ার অনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন৷

কিন্তু সাভারে এখনও অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন৷ এঁদের আত্মীয়স্বজন ছবি নিয়ে তাঁদের এখনও খুঁজে বেড়াচ্ছেন৷ সেরকমই একজন আবুল কাশেম৷ তাঁর বাড়ি লক্ষ্মীপুর সদরে৷ আবুল কাশেমের মেয়ে রিনা আক্তার (১৮) রানা প্লাজার নিউ ওয়েভ গার্মেন্টস-এ কাজ করতেন৷ ভবন ধসের পরদিনই তিনি তাঁর মেয়ের খোঁজে সাভার আসেন৷ কিন্তু তাঁর মেয়ের লাশও পাওয়া যায়নি৷ উদ্ধার অভিযান শেষ হওয়ার পর সন্ধায় তিনি তাঁর মেয়ের ছবি বুকে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন৷ তখন এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়৷ এরকম আরো অনেকে স্বজনের লাশ না পেয়ে হতাশা আর শোকে দিশেহারা৷

রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিত এবং মৃত মিলিয়ে মোট উদ্ধার করা হয়েছে ৩,৫৬৫ জনকে৷ ধারণা করা হচ্ছে, ধসের সময় ভবনে কমপক্ষে সাড়ে ৪ হাজার মানুষ ছিলেন৷

স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু অনেক মানুষ এখনও নিখোঁজ থাকার কথা স্বীকার করেছেন৷ তিনি বলেন, নিখোঁজদের একটি তালিকা তৈরির কাজ করছে পুলিশ৷

এদিকে জেলা প্রশাসক ইউসুফ হারুন জানিয়েছেন যে, উদ্ধার করা লাশের ২৮৪টির পরিচয় নিশ্চিত না হওয়ায় তাঁদের হস্তান্তর করা হয়নি৷ ডিএনএ টেস্টের পর পরিচয় নিশ্চিত হয়ে হস্তান্তর করা হবে৷

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এ কে এম মাকসুদ কামাল জানান, রানা প্লাজা ধসের পর উদ্ধার অভিযানে সমন্বয়হীনতা ছিল৷

তিনি বলেন, সরকারের উদ্ধারকারীরা কাজ শুরু করেন মূলত ধসের পরদিন দুপুরের পর থেকে৷ এর আগে সাধারণ মানুষ যে যেভাবে পারেন উদ্ধারকাজে যোগ দিয়েছেন৷ সাধারণ মানুষের এই অংশগ্রহণ মানবিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলেও, এতে উদ্ধার অভিযানে ঝুঁকি বেড়েছে এবং সময় বেশি লেগেছে৷ এছাড়া, পুরো উদ্ধার অভিযানে প্রশিক্ষিত উদ্ধারকর্মীদের নিয়ন্ত্রণ ছিল না৷ ফলে এই উদ্ধার অভিযানের পর্যাপ্ত সরঞ্জাম থাকলেও তা ব্যবহার করা যায়নি৷ যে যার মতো মাথায় কাপড় বেধে উদ্ধার অভিযানে নেমে পড়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়৷

তিনি বলেন, দেশে প্রশিক্ষিত ১৮,০০০ প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবী উদ্ধারকর্মী থাকলেও তাঁদের ব্যবহার করা যায়নি৷ তবে এবারে মানুষ সৃষ্ট এই দুর্যোগ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে৷ এ কথা যদি মাথায় রাখা যায়, তাহলে হয়ত ভবিষ্যতে উদ্ধার অভিযানে সমন্বয়হীনতা থাকবে না৷ তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এই দুর্যোগে দুর্যোগ মন্ত্রণালয় কোনো ভূমিকাই রাখতে পারেনি৷ তাহলে এই মন্ত্রণালয়ের কাজ কি? জানতে চান তিনি৷

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.