রতিসুখ শেখাবেন শার্লিন
ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১৩ লিখেছেন আবীর মুখোপাধ্যায়
কলকাতা, ২৪ জানুয়ারি, ২০১৩
মিলনের সুরতি-উৎসবে রতিবিহ্বলা কয়েকটি ফ্রেম। অথবা এমনটাও বলা যায়, রভস আর রাগমোচনের রঙ ও রেখায় শিল্পীত ছবির বিজ্ঞাপনী কাম কোলাজ! মিঠে বোল-বাদ্যের বোধ ও শীলনে যে কোলাজে চিত্রিত আদুল বুক আর লাল লেহঙ্গায় ‘বিপজ্জনক’ এক মেয়ে!
রতি সুখের সৌরভে গাঁথা এমনতরো দৃশ্যের আদরে সম্প্রতি ইউ টিউবে মুক্তি পেল, দক্ষিণি পরিচালক রূপেশ পলের ইন্দো-ফ্রেঞ্চ ছবি, থ্রিডি কামসূত্রের প্রথম প্রোমো। গুগল জানাচ্ছে, রিলিজ হওয়ার আধবেলায় যার হিট ৫৫ হাজার। তিন দিনে সওয়া লাখ!
কী এমন আছে রতিসুখসারের ওই দৃশ্যে? যার জন্য দুনিয়াজুড়ে টিউবে হামালদারি! কে-ই বা ওই ‘বিপজ্জনক’ মেয়ে? উত্তর জানি, তবু টিউবে ডুবে দেখি অপরূপাকে। কান ফেস্টিভ্যালে রূপেশের ঘোষণা মতো, এ মেয়ে প্লে-বয় পত্রিকার সেই প্রচ্ছদ-কন্যা। যে-ই কেবল ট্যুইটে নিজের সম্পর্কে লিখতে পারে, ‘আই হ্যাভ হ্যাড সেক্স ফর মানি’! শার্লিন, শার্লিন চোপড়া!
যিশুর জন্মের তিনশো বছর আগে লেখা এক রতিসুখ শিক্ষার ব্যাকরণ নিয়ে এখনও কী উন্মাদনা! ভাবলেও অবাক হতে হয়! পুরাণকথা বলছে, হাজার খণ্ডে প্রথম কামশাস্ত্র লিখেছিলেন নন্দীকেশ্বর নামের এক ব্যক্তি। যুগে যুগে নানা শাস্ত্রকারের হাত ঘুরে সেটি বাৎস্যায়নের সু-সম্পাদনায় সাত অধিকরণ, ছত্রিশ অধ্যায় আর চৌষট্টি প্রকরণে শোভন রূপ ধারণ করেছে। আর এখন সেই ‘সেক্স ম্যানুয়াল’ দেখা যাবে থ্রিডিতে!
এর আগে হলিউড থেকে বলিউড, পর পর ছবি হয়েছে বাৎস্যায়নের কামসূত্র নিয়ে সেলুলয়েডে। কিন্তু থ্রিডি এই প্রথম। তাই গতবার কান ফেস্টিভ্যালে ‘সেন্ট ড্রাকুলা থ্রিডি’-র প্রিমিয়ারে রূপেশ যখন ঘোষণা করেন, বাৎস্যায়নের কামশাস্ত্র নিয়ে থ্রিডি ফরম্যাটে ছবি করছেন, তখন থেকেই ঝড় আছড়ে পড়ে টিনসেল টাউনে।
এদেশে ১৯৯৬ সালে মীরা নায়ার ও হেলেনা ক্রিয়েলের চিত্রনাট্যকে নির্ভর করে মীরা নায়ারের পরিচালনায় মুক্তি পায় ‘কামসূত্র আ টেল অফ লাভ’। ১১৭ মিনিটের সে ছবিতে অভিনয় করেছিলেন রেখা, ইন্দিরা বর্মা, অরুন্ধতী নাগ প্রমুখেরা। যৌনকলার অলি-অন্দর ছুঁয়ে সমকাম ও বিপরীত বিহারও ছিল ছবির দৃশ্যায়নে। বিতর্ক তৈরি করলেও, মীরার ছবি সমালোচকদের কাছে নিছক গদ্যময় একটি ছবি বলে মনে হয়েছে।
সে দিক থেকে রূপেশের ছবির প্রোমো বলছে, ভারতীয় সিনেমার দর্শক পেতে চলেছে কামশাস্ত্রের এক নববীক্ষণ! হয়তো সেই জন্যই ইন্দো-ফ্রেঞ্চ এই ছবিকে ঘিরে সাইবার দুনিয়ায় একের পর এক গসিপ তৈরি হয়ে চলেছে নিয়ত। সিনেমার ভবিতব্যে যা স্বাস্থ্যকর। অবশ্য এই উত্তেজনার অন্য একটি কারণ, রূপেশের থ্রিডি কামসূত্রে রতিরঙ্গের পরত খুলে খুলে রতিসুখ শেখাবেন শার্লিন। যে মেয়ে অবলীলায় বলতে পারে, ‘আমি খোলামেলা পোশাকে স্বচ্ছন্দ বোধ করি, আমার যৌনসত্ত্বাকে ছবি আর ভিডিওর মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতে ভালবাসি। পছন্দ করি যখন কেউ আমাকে `টিজ` করে। ভালবাসি যৌনতা’!
চলতি বছরেই মুক্তি পাবে এ ছবি। বিতর্ক এড়াতে ভারতের মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থানে এ ছবির শ্যুটিং হলেও ফ্রান্স, ইতালি ও লন্ডনে রতি শিক্ষার দৃশ্যগুলি শ্যুট করা হচ্ছে। শার্লিন ছাড়াও ছবিতে ‘দুলারি’ নামের একটি চরিত্রে অভিনয় করছেন কবিতা রাধেশ্যাম। এর আগে এই অভিনেত্রী বন্যপ্রাণীদের উপর অত্যাচারের প্রতিবাদে সামিল হয়ে নগ্ন ফটোশ্যুট করেছিলেন। ছবিতে তাঁকেও দেখা যাবে শার্লিনের মতোই আদুল শরীরে রতিসুখ শেখাতে। ছবিতে নৃত্য-নির্দেশক সরোজ খানের নেতৃত্বে পঞ্চাশ জন নগ্নিকাকে নৃত্য করতে দেখা যাবে। উইকি সূত্র জানাচ্ছে, এ ছবির আরও দুটি সিক্যুয়েল তৈরি হবে ফোর ডি ও ফাইভ ডিতে।
যৌনকলার শিক্ষা দিতে দিতে কী ভাবছেন ‘বিপজ্জনক’ বালা? রূপেশের মতোই ছবি নিয়ে উচ্ছ্বসিত শার্লিনও। জন্মদিনে ট্যুইটারে নিজের নগ্ন ছবি পোস্ট করা, অথবা প্লে-বয় ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদের সেই বিখ্যাত ফটোশ্যুট করে পুনম পাণ্ডেকে টেক্কা দেওয়ার থেকেও এ ছবি নিয়ে শার্লিনের উন্মাদনা যেন একটু বেশি। নিজের কথায়, ‘কামসূত্র`র মধ্যে কোথাও অশ্লীলতা নেই। নগ্নতা আর অশ্লীলতা এক নয়! কামসূত্র`-র বিভিন্ন যৌনমুদ্রা থ্রি ডিতে অন্য মাত্রা পাবে’।
ছবি নিয়ে শার্লিনের দাবি কতখানি সঙ্গত, বা ইউ টিউবে প্রতি মিনিটে বাড়তে থাকা প্রোমোতে হিটের পরিমাণ কতখানি সাফল্য দেবে রূপেশকে, সময় বলবে সে কথা। কিন্তু, ছবির প্রোমোতে বোল-বাদ্যের তেহাই তালে শার্লিনের দিয়া নিভিয়ে দেওয়ার বিলোল মন্তাজ অথবা, ছলায় পারঙ্গম মেয়ের মিলনের দহন সুখে আনন্দ-অশ্রু-ধারা গড়িয়ে পরার দৃশ্য কামসূত্রের কাব্যময় চিত্রায়ণ করে ফেলে। সেখানেই রূপেশের সাফল্যের অঙ্কে এগিয়ে থাকা! এবং সেখানেই শার্লিন ‘বিপজ্জনক’ হয়েও চুপিসাড়ে এগিয়ে দেয় দর্শকের সঙ্গে তার সহবাসের ‘কলত্রপত্র’!
সৌজন্যে আনন্দবাজার পত্রিকা।