এ আর রাহমানের ‘কারার ওই লৌহ-কপাট’ অনলাইন থেকে সরানোর নির্দেশ

জানুয়ারি ৯, ২০২৪

অস্কারজয়ী ভারতীয় সংগীত পরিচালক এ আর রাহমানের সুরে গাওয়া কাজী নজরুল ইসলামের ‘কারার ওই লৌহ-কপাট’ গানটি ফেসবুক, ইউটিউবসহ সব অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে সরাতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ছয় মাসের জন্য গানটি সব অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে সরাতে বিটিআরসিকে নির্দেশ দিয়ে রুলও জারি করেন আদালত।

এ সংক্রান্ত রিটের শুনানি শেষে মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ নির্দেশ দেন।

আদালতে রিটকারীদের পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির। তাকে সহযোগিতা করেন সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট বায়েজীদ হোসাইন, নাঈম সরদার ও ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার।

এর আগে, মানবাধিকার সংগঠন ল’ অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবীর পক্ষে গত ৬ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই রিট দায়ের করেন।

রিটে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সচিব, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সচিব, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিটিআরসি ও কবি নজরুল ইনস্টিটিউটকে বিবাদী করা হয়।

রিটকারীরা হলেন– ল’ অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট, সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট বায়েজীদ হোসাইন, নাঈম সরদার, ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার, ব্যারিস্টার মাহদী জামান, ব্যারিস্টার শেখ মঈনুল করিম, ব্যারিস্টার আহমেদ ফারজাদ, অ্যাডভোকেট শহিদুল ইসলাম, অ্যাভোকেট মো. শাহেদ সিদ্দিকী, অ্যাডভোকেট মো. আনাস মিয়া ও অ্যাডভোকেট মো. বাহাউদ্দিন আল ইমরান।

গত ১৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির বিবাদীদের এ আর রাহমানের বিকৃত সুরে গাওয়া ‘কারার ওই লৌহ-কপাট’ গানটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে সরাতে সংশ্লিষ্টদের আইনি নোটিশ পাঠান। নোটিশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনলাইন থেকে সরাতে বলা হয় গানটি। কিন্তু কোনও পদক্ষেপ না নেওয়ায় এ রিট দায়ের করা হয়।

গানটির মূল লেখক, সুরকার ও গীতিকার কবি কাজী নজরুল ইসলাম।

রিটে বলা হয়, কবি কাজী নজরুল ইসলামের অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং ঐতিহাসিকভাবে সমৃদ্ধ ‘কারার ওই লৌহ কপাট’ গানটিতে এ আর রাহমান নতুনভাবে সুরারোপ করেছেন। এটি ব্যবহার করা হয়েছে ‘পিপ্পা’ নামে একটি হিন্দি চলচ্চিত্রে। এ আর রাহমান গানের কথা ঠিক রাখলেও সুরের পরিবর্তন করেছন। এই গান নজরুলের নিজের সুরারোপিত ও সুপ্রতিষ্ঠিত। আমাদের সব বিপ্লব-বিদ্রোহ তথা আন্দোলন-সংগ্রামে অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করেছে ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’।

রিটে আরও বলা হয়, কাজী নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের জাতীয় কবি। তিনি বিদ্রোহী কবি নামে পরিচিত। তার কবিতা আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ। রিটে তার কবিতার আসল সুর অক্ষুণ্ন রাখার দাবি জানানো হয়।

বৃটিশ সরকার দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশকে আটকের প্রতিবাদে কাজী নজরুল ইসলাম গানটি লেখেন। এটি ‘ভাঙার গান’ বইয়ে প্রকাশিত হয় ১৯২৪ সালে। প্রকাশের পরপর ১৯২৪ সালের ১১ নভেম্বর ব্রিটিশ সরকার ভাঙার গান নিষিদ্ধ করে। পরবর্তী সময়ে স্বাধীন ভারতে ‘ভাঙার গান’ কবিতাটি ফের প্রকাশিত হয়। ১৯৪৯ সালে কলাম্বিয়া রেকর্ড এবং ১৯৫০ সালে এইচএমভিতে গিরিন চক্রবর্তীর কণ্ঠে বাণীবদ্ধ হয় গানটি। ১৯৪৯ সালে নির্মল চৌধুরী পরিচালিত ‘চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন’ সিনেমায় গিরিন চক্রবর্তী ও তার সহশিল্পীদের নিয়ে গানটি রেকর্ড করেন সংগীত পরিচালক কালীপদ সেন। এরপর ১৯৬৯-৭০ সালে জহির রায়হান তার কালজয়ী চলচ্চিত্র ‘জীবন থেকে নেয়া’ সিনেমায়ও গানটি ব্যবহার করেন।

‘কারার ওই লৌহ-কপাট’ শত বছরের এক অবিনাশী অমর গান। সময়ের প্রয়োজনে লেখা হলেও গানটির লোকপ্রিয়তায় সামান্য ঘাটতি হয়নি। ব্রিটিশিবিরোধী মানসে লেখা গানটি সব ধরনের অন্যায়, অবিচার ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে সোচ্চার। এ জন্য এখনও সমানভাবে এটি প্রাসঙ্গিক। নোটিশে বলা হয়, একই গান একটি কাজী নজরুলের সুরে ও আরেকটি বিকৃত সুরে থাকলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম বিভ্রান্ত হবে।

রিটকারীদের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির বলেন, ‘এ আর রাহমানের গাওয়া ‘কারার ওই লৌহ-কপাট’ গানটি অপসারণ করতে সংশ্লিষ্টদের আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা কার্যকর কোনও ব্যবস্থা নেননি। কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের জাতীয় কবি। তার গান আমাদের সব ধরনের বিপ্লব ও আন্দলনে অনুপ্রেরণা দিয়েছে। তার গান ও কবিতা আমাদের জাতীয় সম্পদ। আমাদের জাতীয় কবি ও তার অমর কবিতার মূল সুর রক্ষায় সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থে রিট দায়ের করা হয়েছিল। শুনানি শেষে আজ আদালত বিটিআরসিকে এ আর রাহমানের বিকৃত সুরে গাওয়া জাতীয় কবির এই গানটি সরাতে নির্দেশ দিয়েছেন।’