সাভার ট্র্যাজেডি: লাশ উদ্ধার ৩৯০, হস্তান্তর ৩৫৪

এপ্রিল ৩০, ২০১৩

0,,16766571_302,00ঢাকা জার্নাল: রানা প্লাজার ধ্বংসস্তুপের নিচ থেকে মঙ্গলবার মধ্যরাত পর্যন্ত সরকারি হিসেবে ৩৯০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এরমধ্যে ৩৫৪ জনের লাশ স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের অপেক্ষায় আছে আরো ৩৬টি লাশ।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে এ পর্যন্ত মোট জীবিত মানুষ উদ্ধারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৪৭৯ জন।

এর আগে রোববার রাত দশটার দিকে জীবিত চার জনকে উদ্ধারের প্রাথমিক প্রচেষ্টা হঠাৎ অগ্নিকাণ্ডের কারণে ভেস্তে গেলে কর্তৃপক্ষ ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে উদ্ধার কাজ পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আইএসপিআরের রোববার রাতের প্রেসব্রিফিংয়ের পর রাত সাড়ে এগারোটা থেকে শুরু হয় উদ্ধারকাজে ভারী যন্ত্রপাতির ব্যবহার।

তবে পূর্বের অগ্নিকাণ্ডের কারণে সৃষ্ট ধোঁয়ায় ব্যাঘাত ঘটে উদ্ধারকাজে। ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসলে আবার পুরোদমে শুরু হয় উদ্ধার অভিযান।

দ্বিতীয় পর্যায়ের অভিযান হিসেবে অভিহিত এ ধাপের উদ্ধার অভিযানে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে উদ্ধারকারীরা ক্রেনসহ আরও অন্যান্য ভারী যন্ত্রপাতির ব্যবহার শুরু করেন। যা মঙ্গলবার শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে।

রোববার রাত দশটা পর্যন্ত জীবিত থাকা নারী গার্মেন্টস শ্রমিক শাহানাকে সোমবার বিকেলে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে উদ্ধারকারীরা ।

এর আগে রোববার সারাদিন ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আটকে পড়া শ্রমিকদের জীবিত উদ্ধারে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যান উদ্ধারকারী দল। ওপর থেকে খোঁড়া সুড়ঙ্গ পথগুলো দিয়ে ভেতরে ঢুকে তারা চালান ব্যাপক তল্লাশি।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি চৌধুরী হাসান সোহরাওয়ার্দী জীবিতদের উদ্ধারে শেষ পর্যন্ত চেষ্টা চলবে বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

মঙ্গলবার সকালেও অধর চন্দ্র বিদ্যালয়ে আপনজনের মরদেহ বুঝে নিতে অপেক্ষা করছিলেন শোকাহত স্বজনরা। পরিচয় সনাক্ত চূড়ান্ত হওয়ার পরই স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে মরদেহ। আর জীবিত অবস্থায় যারা উদ্ধার হচ্ছেন তাদের বেশিরভাগকেই চিকিৎসার জন্য সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সাভার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের অধীনে প্রকৌশল বিভাগ, বিমান বাহিনী, নৌবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস, রেডক্রস উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে। সহযোগিতা করছে আনসার, র‌্যাব ও পুলিশের পাশাপাশি স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকাল পৌনে ৯টার দিকে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডের পাশে রানা প্লাজা নামের বহুতল ভবনটি ধসে পড়ে।

সাভার পৌর যুবলীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সোহেল রানার মালিকানাধীন এই ভবনের প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় ইলেকট্রনিকস, কম্পিউটার, প্রসাধন সামগ্রী ও পোশাকের দোকানের পাশাপাশি তৃতীয় তলা থেকে ওপর তলা পর্যন্ত ছিলো গার্মেন্টস কারখানা। এগুলোতে কাজ করতেন কয়েক হাজার শ্রমিক।

সরকারী হিসাব

মঙ্গলবার পর্যন্ত সরকারী হিসেবে মোট ২৮৬৯ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ২৪৭৯ জনকে জীবিত এবং ৩৯০ জনকে মৃত উদ্ধার করা হয়েছে এবং এরমধ্যে এ পর্যন্ত ৩৫৪ জনের মরদেহ তাদের আত্মীয়-স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং ৩৬ জনের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও মিডফোর্ট হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।

জীবিত উদ্ধারকৃত ২ হাজার ৪৭৯ জনের মধ্যে গুরুতর আহত ৯৬৮ জন। আহতদের মধ্যে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৫৬ জন, সাভার সিএমএইচে ১০২ জন, ঢাকা সিএমএইচে ৪ জন, সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৫ জন, সাভার সুপার ক্লিনিকে ২০ জন, সাভার জেনারেল হাসপাতালে ১ জন, ল্যাব জোন-১ সাভারে ২০ জন, সীমা জেনারেল হাসপাতাল সাভারে ৫ জন, প্রাইম হাসপাতালে ৫ জন, সাভার রেজিয়া ক্লিনিকে ১০ জন, সাভার দীপ ক্লিনিকে ৯ জন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৬ জন, পঙ্গু হাসপাতালে ৫৪ জন, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ১ জন, জাতীয় বক্ষব্যাধী হাসপাতালে ২ জন, জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালে ১ জন এবং বাকিরা অন্যান্য হাসাপাতাল/ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

ত্রাণ তৎপরতা

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়: জেলা প্রশাসককে সহায়তা প্রদানের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় হতে চার কোটি টাকা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর বরাবর ছাড় করা হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর কর্তৃক তিন কোটি টাকা জেলা প্রশাসকের অনুকূলে বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে।

হস্তান্তরকৃত ৩২১ জন মৃত ব্যক্তির প্রত্যেক পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে এবং আহতদের মধ্যে ৭০০ জন ব্যক্তির প্রত্যেককে ৫ হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়েছে। অবশিষ্ট মৃত ব্যক্তির পরিবার ও আহত ব্যক্তিকে অর্থ সাহায্য প্রদানে প্রক্রিয়া চলমান আছে।

উদ্ধারকার্য পরিচালনায় তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম/দ্রব্যাদি ক্রয়ের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় হতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স’কে ৫ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে।

রেড ক্রিসেন্ট

বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি কর্তৃক উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১০টা মাল্টিপারপাস কংক্রিট কাটার, মরদেহ বহনের জন্য ৭০০টি বডি ব্যাগ এবং আহতদের চিকিৎসা কার্যক্রমে ব্যবহারের জন্য ২০০টি ছোটবড় ব্যাগ এবং ছোট সাইজের ৬০টা অক্সিজেন ব্যাগ প্রদান করা হয়েছে।

এছাড়াও বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান তাৎক্ষণিকভাবে শুকনা খাবার, পানি, ঔষধ, নগদ অর্থ, জুস, কাপড়, টর্চলাইটসহ উদ্ধার তৎপরতায় ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন সামগ্রী দিয়ে সহায়তা করছেন।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.