গাজায় হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েল

ডিসেম্বর ৯, ২০২৩

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় বিমান হামলা ও স্থল অভিযানের তীব্রতা বাড়িয়েছে ইসরায়েল। উপত্যকার কোনও স্থান হামলা থেকে বাদ পড়ছে না। অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি শেষে এক সপ্তাহ ধরে চলমান হামলায় ইতোমধ্যে কয়েকশ’ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, বেসামরিকদের সুরক্ষায় ইসরায়েল যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, যুদ্ধের নতুন ধাপ তার বিপরীতমুখী। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

শুক্রবার ইসরায়েলের সেনাবাহিনী বলেছে, স্থল, সাগর ও আকাশ পথে গাজায় তারা ৪৫০টির বেশি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে। গত সপ্তাহে যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যাওয়ার পর এটিই তীব্রতম হামলার দিন। গত কয়েক দিন যে সংখ্যায় হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল, শুক্রবারের হামলা সেগুলোর তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।

গাজার বেশিরভাগ মানুষ এখন ঘর-বাড়িহারা। তারা কোনও ত্রাণ পাচ্ছে না, হাসপাতালগুলো সেবা দিতে পারছে না, খাবারও ফুরিয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘের সংস্থা জানিয়েছে, সেখানকার সমাজ পুরোপুরি ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে।

গাজার বাসিন্দা ও ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে লড়াইয়ের তীব্রতা বেড়েছে। এর আগে ইসরায়েল দাবি করেছিল, এই অঞ্চলে তাদের অভিযানের লক্ষ্য প্রায় অর্জিত হয়ে গেছে। চলতি সপ্তাহে দক্ষিণাঞ্চলে নতুন অভিযান শুরু করেছিল তারা।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার আরও ৩৫০ জন নিহতের কথা জানিয়েছে। এর ফলে প্রায় দুই মাসের ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ১৭০ জনে। নিখোঁজ রয়েছেন আরও কয়েক হাজার। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়েছেন তারা।

শুক্রবার সকালে দক্ষিণের খান ইউনিস, মধ্যাঞ্চলের নুসেইরাত শরণার্থী শিবির এবং উত্তরের গাজা সিটিতে হামলার খবর পাওয়া গেছে।

ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, আল-আমাল হাসপাতাল ও ত্রাণ সংস্থাটির খান ইউনিসের সদর দফতরের পাশের একটি বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় কয়েক ডজন মানুষ নিহত হয়েছেন।

ওয়াশিংটনে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, দক্ষিণে অভিযানের প্রায় এক সপ্তাহ পার হয়েছে। বেসামরিকদের রক্ষায় ইসরায়েলকে আরও সচেষ্ট হতে হবে। বেসামরিক সুরক্ষার লক্ষ্য ও সরেজমিনের পরিস্থিতির প্রকৃত চিত্রের মধ্যে ফারাক রয়ে গেছে।

৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় গাজার শাসক গোষ্ঠী হামাস। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের মতে, হামাসের হামলায় এক হাজার ১৪৭ জন ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন। এই হিসাব এখন পর্যন্ত দুবার কমিয়েছে ইসরায়েল। হামলার পর পর এক হাজার ৪০০ জন ইসরায়েলি নিহতের দাবি করেছে। তার কিছু দিন পর কমিয়ে বলেছে এক হাজার ২০০ জন।

জবাবে গত দুই মাস ধরে গাজায় বিমান হামলা ও স্থল অভিযান পরিচালনা করছে ইসরায়েল। এর ফলে গাজার ২৩ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি হারিয়েছেন। অনেককে তিন বা চারবার হাতের কাছে যা আছে তা নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটতে হয়েছে।

বাসিন্দারা বলছেন, উত্তর ও দক্ষিণে একই সময়ে ইসরায়েল হামলা চালানোর ফলে উপত্যকায় নিরাপদ আশ্রয় পাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ইসরায়েল দাবি করে আসছে, তারা গাজাবাসীকে নিরাপদ অঞ্চল সম্পর্কে জানাচ্ছে এবং কীভাবে সেখানে যেতে হবে, তাও বলে দেওয়া হচ্ছে। তারা দাবি করছে, বেসামরিকদের আড়ালে থেকে হামাস কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে।

হামাস বলেছে, উত্তরে গাজা সিটির শেজাইয়া জেলায় ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে তাদের যোদ্ধাদের তুমুল লড়াই চলছে। দক্ষিণে খান ইউনিসেও লড়াই অব্যাহত রয়েছে। বুধবার গাজার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরটির প্রাণকেন্দ্রে প্রবেশ করে ইসরায়েলি সেনারা।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ বলেছে, গাজা উপত্যকায়, বিশেষ করে খান ইউনিস ও উত্তরাঞ্চলে হামাস ও সন্ত্রাসী সংগঠনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছে সেনারা। উত্তরের জাবালিয়া, জেইতুন ও পুরনো শহর এলাকার বাসিন্দাদের সরে যেতে হবে।

রয়টার্সের সাংবাদিকরা গাজা থেকে জানিয়েছেন, তারা খান ইউনিসের প্রধান হাসপাতাল নাসের-এ নিহত ও আহতদের দেখেছেন। শুক্রবার হাসপাতালের মেঝেতেও কোনও ফাঁকা জায়গা ছিল না।

জেনেভাভিত্তিক ইউরো-মেডিটেরানিয়ান হিউম্যান রাইটস মনিটর-এর প্রধান রামি আবদু একটি ছবি প্রকাশ করেছেন। এতে দেখা গেছে, গাজার ৬৫০ বছর পুরোনো মধ্যযুগীয় গ্রেট ওমরি মসজিদ ইসরায়েলি হামলায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটি গাজার পুরোনো শহরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এই প্রথমবার এটি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হলো। এই বিষয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর তাৎক্ষণিক কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।