লিবিয়ায় ভয়াবহ বন্যায় প্রাণহানি ৩ হাজার ছাড়িয়েছে

সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৩

লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় মৃত্যুর সংখ্যা তিন হাজার ছাড়িয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকায় এখন পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) লিবিয়ার বেনগাজি প্রশাসন এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।

মঙ্গলবার লিবিয়ার রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মুখপাত্র তাকফিক শুকরি বলেন, এই বন্যায় ২ হাজার ৮৪ জন মানুষ নিহত হয়েছে। নয় হাজার মানুষ নিখোঁজ রয়েছে। তাছাড়া প্রায় ২০ হাজার মানুষ ভিটামাটি ছেড়ে বিভিন্ন জায়গায় স্থানান্তরিত হয়েছে। এদিকে লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলের বেনগাজি প্রশাসন ধারণা করছে, প্রায় তিন হাজার মানুষ মারা গেছে।

রাজধানী ত্রিপোলিতে জাতীয় ঐক্য সরকারের প্রধানমন্ত্রী আবদুল হামিদ দ্বইবা বলেন, ১৪ টন ত্রাণ সামগ্রী ও চিকিৎসা কর্মীদের নিয়ে একটি বিমান বেনগাজির দিকে রওনা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেরনা শহর। সেখানে প্রবেশ করতে সমস্যা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ত্রিপোলি সরকার পূর্বাঞ্চলকে দুর্যোগপূর্ণ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছে। অসহায় মানুষদের জন্য সাহায্য পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে। সবাই ত্রাণ নিয়ে বিভক্ত লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলে যাচ্ছে।

বেনগাজি প্রশাসন বলেছে, ভূমধ্যসাগরীয় শহর দেরনা থেকে এক হাজারেরও বেশি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

সোমবার ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েল পূর্ব লিবিয়াকে বন্যায় ভাসিয়ে দিয়েছে। যার ফলে ওয়াদি দেরনা নদীর দুটি বাঁধ ভেঙ্গে যায়। এই বাধ ভেঙ্গে দেরনা শহরে লক্ষাধিক ঘন মিটার পানি ঢুকে পড়ে। এই পানি দেরনা শহরে আঘাত হানে, যার ফলে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়েছে।

বন্যায় শহরের আবাসিক ভবনগুলো ধসে পড়েছে। পানির স্রোতে একাধিক সেতু ভেঙ্গে গেছে। মঙ্গলবার ত্রিপোলি থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক মালিক ট্রেনা বলেন, এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে কত মানুষ নিখোঁজ হয়েছে তা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। আনুমানিক বলতে গেলে পাঁচ থেকে ১০ হাজার মানুষ এখন পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছে।

ট্রেনা আরও বলেন, কর্তৃপক্ষ দেরানা শহরে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। তারা কোনোভাবেই সেখানে যেতে পারছে না। কারণ বন্যার পানির স্রোতে এই শহরের রাস্তা-ঘাট ভেঙ্গে গেছে। ইতোমধ্যে দেরনা শহরের আশেপাশের মানুষদের ত্রাণ বিতরণ শুরু হয়েছে।

ঘুর্ণিঝড় ও বন্যায় শহরটির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ফলে হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির তথ্য সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এই ভয়াবহ বন্যায় শহরের চার ভাগের একভাগ ডুবে গেছে।

মঙ্গলবার আল জাজিরার সঙ্গে কথা বলার সময় লিবিয়া-মার্কিন সম্পর্কের জাতীয় কাউন্সিলের হানি শেনিব বলেন, শহরের প্রায় চার বর্গ কিমি সম্পূর্ণরূপে বিলীন হয়ে গেছে।

ট্রেনা বলেন, অনেক রোগী ও কর্মীদেরকে প্লাবিত এলাকার হাসপাতাল থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। অনেকেই প্লাবিত এলাকায় আটকা পড়েছেন।

লিবিয়ায় ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিজ প্রতিনিধিদলের সদস্য তামের রমাদান উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, বন্যা মোকাবিলা করা আমাদের সাধ্যের বাইরে।

বেনগাজির বেসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রী হিচেম চকিউয়াত দেরনা শহর পরিদর্শন করে মঙ্গলবার রয়টার্স বার্তা সংস্থাকে বলেন, সমুদ্রে, উপত্যকায়, ভবনের নিচে ও সব জায়গায় মৃতদেহ পড়ে আছে।

তিনি আরও বলেন, আমি বাড়িয়ে বলছি না, এই শহরের ২৫ শতাংশ পানির নিচে ডুবে গেছে।