‘যেসব দেশে পড়াশোনার চাপ কম, সেসব দেশে উদ্ভাবকের সংখ্যা বেশি’

জুন ১৬, ২০২৩

মুখস্ত-নির্ভর লেখাপড়ার বিপরীতে প্রায়োগিক শিক্ষা কীভাবে শিখতে হবে, শিক্ষার্থীদের তা শেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেন, ‘যেসব দেশে পড়াশোনার চাপ কম, সেসব দেশে উদ্ভাবকের সংখ্যা বেশি।’

বুধবার (১৪ জুন) বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তন সমাজটাকেও দ্রুত পাল্টে দিচ্ছে। সারা বিশে সেবা দেওয়ার লোক খুবই কম, সেবাগ্রহীতা অনেক বেশি। প্রযুক্তির উৎকর্ষের সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের চলতে হবে। তাহলে আমাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিখতে হবে। দক্ষতাগুলো আমাদের অর্জন করতে হবে। হাতে-কলমে শিখতে হবে, মুখস্ত বিদ্যার দিন শেষ।’

ডা. দীপু মনি বলেন, ‘নতুন শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে। আমাদের শিক্ষাক্রম ছিল মুখস্ত-নির্ভর। মুখস্ত করলাম, পরীক্ষার হলে গিয়ে লিখে আসলাম, ভালো নম্বর পেলাম, তারপর চাকরির দরখাস্তে লিখে দিলাম। কিন্তু চাকরি পেতে গিয়ে খুব কষ্ট। তারপর সারা জীবনই কাজের বেলায় ওই যে মুখস্ত করেছিলাম, তা প্রয়োগ করতে পারছি না। যা পড়েছি সেগুলোই ঘটছে, কিন্তু কী ঘটছে বুঝতে পারছি না। প্রয়োগও করতে পারছি না।’

মন্ত্রী বলেন, ‘এখন কী হবে? শেখাটা প্রয়োগ করা শিখতে হবে। কী করে শিখবো তা শিখতে হবে, লার্নিং হাউ টু লার্ন। তাহলে যখন যা শেখার প্রয়োজন শিখে নিতে পারবো। আর কী করতে হবে? নিজেদের উদ্ভাবক হতে হবে। আমরা কি সারা জীবন অন্য কেউ উদ্ভাবন করবে, আর আমরা তা ব্যবহার করবো? নিশ্চয় না। আমরা উদ্ভাবক হবো। উদ্ভাবক তখনই কেউ হতে পারে, যখন স্বাধীনভাবে চিন্তা করার সময় থাকে, শক্তি থাকে। আমাদের শিক্ষার্থীদের এমনভাবে পড়াশোনা করাই, মুখস্ত করতে করতে। আর ডিপিএ-৫ পাওয়ার দৌড়ে স্বাধীন চিন্তা করার সময় নেই। যেসব দেশে পড়ার চাপ কম, সেসব দেশে দেখবেন উদ্ভাবকের সংখ্যা অনেক বেশি। আমাদের উদ্ভাবকের সংখ্যা অনেক কম। কারণ, শিক্ষার্থীদের এত চাপাচাপির মধ্যে রাখি যে, উদ্ভাবনের সময় পাবে কখন। সে জন্য শিক্ষাটাকে পুরোপুরি রূপান্তর ঘটানো হচ্ছে।’

নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীরা দারুণ খুশি উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘অভিভাবকরা এখনও বুঝতে পারছেন না, তারা এখনও বুঝতে পারছেন না— খুশি হবেন কী হবেন না। অভিভাবকরা এখনও ভাবছেন— সারা দিন যদি আমার ছেলেমেয়েরা না পড়ে, মুখস্ত যদি না করে, তাহলে কী শেখা হলো? আর শিক্ষকরা যারা কোচিং করান, তারা ভাবছেন— আমার তো রোজগার গেলো। তারা নাখোশ। এ রকম একটা পরিস্থিতিতে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।’

কারিগরি শিক্ষার ৩৮২ জন শিক্ষার্থীকে অনুষ্ঠানে বৃত্তি প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন— কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. কামাল হোসেন, কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. মহসিন, বোর্ডের চেয়ারম্যান আলী আকবর খান ও বোর্ডের সচিব আবদুল্লাহ মাহমুদ জামান।